US Gun Violence: আমেরিকায় বন্দুকরাজের ইতিহাস! ফিরে দেখা গত ১০ বছরের হামলার ঘটনা

US Gun Violence: আমেরিকায় বন্দুকরাজের ইতিহাস! ফিরে দেখা গত ১০ বছরের হামলার ঘটনা

অনুষ্টুপ রায় বর্মণঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দু’বছরের ছেলের গুলিতে মৃত বাবা। অন্যদিকে দক্ষিণ টেক্সাসের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন বন্দুকধারী গুলি চালায়। ঘটনায় ১৮ ছাত্র ও তিন শিক্ষকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ১৮ বছর বয়সী ওই হামলাকারীও নিহত হন।

আমেরিকার অলাভজনক বন্দুক ভায়োলেন্স আর্কাইভের একটি সমীক্ষা অনুসারে এই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও পর্যন্ত ২১২টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। গুলি চালিয়ে গণহত্যার সংজ্ঞা হিসেবে ধরা হয়েছে যেখানে চার অথবা তাঁর থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের গুলিবিদ্ধ অথবা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আমেরিকায় গুলি চালানোর ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা ব্যহত হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে একটি শক্তিশালী বন্দুক লবি এই প্রচেষ্টার সাফল্যের সামনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেক্সাসের স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনার পরে হোয়াইট হাউস থেকে বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বলেন, “একটি জাতি হিসাবে, আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমরা কখন বন্দুকের লবির বিরুদ্ধে দাঁড়াব?'”

মিশিগানের রয়্যাল ওকে থাকেন কলকাতার দিশারী রক্ষিত। ওয়েন স্টেট ইউনিভারসিটিতে গবেষণারত দিশারী জানিয়েছেন, “ভারতে বেড়ে ওঠার সুবাদে আগে বন্দুক আছে এমন কাউকে আমি চিনতাম না। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর সব জায়গায় বন্দুক। সাধারণ দোকানেও বন্দুক বিক্রি হয়। আমার প্রতিবেশীরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল রাখে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য বন্দুক রাখার ধারণা আমার ছিলনা।”

মিশিগানের অক্সফোর্ড টাউনশিপে তার পাশের পাড়ার স্কুলে বন্দুকবাজের হামলা মার্কিন মুলুকের গান ভায়োলেন্সকে তার কাছে বাস্তব করে তোলে।

তিনি বলেন, “কিছুদিন পরে সবাই “অক্সফোর্ড স্ট্রং” লেখা টি-শার্ট পরেন ওই অঞ্চলে। তাঁর আরও বক্তব্য, “মজার বিষয় হল, অক্সফোর্ড টাউনশিপে শ্বেতাঙ্গদের বসবাস বেশি। যার মানে এটি একটি রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। তারা অক্সফোর্ড স্ট্রং টি-শার্ট পরলেও এরাই তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবে”।

এই হিংসা কমানোর ক্ষেত্রে তাঁর মত, “একজন বহিরাগত হিসাবে, আমি মনে করি না যে বন্দুকের হিংসা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে অথবা কমে যাবে। এটা তাদের ‘স্বাধীনতার’ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। এর ব্যবহার কমাতে আরও বেশি নিয়ম প্রয়োজন। একই সঙ্গে যারা আগ্নেয়াস্ত্র কিনছেন তার আরও বেশি ব্যাকগ্রাউন্ড চেক প্রয়োজন”।

গত ১০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় গুলি চালানোর ঘটনার তালিকা:

১৪ মে, ২০২২ – বাফেলো, নিউ ইয়র্ক। একটি বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের ঘটনায় একটি সুপারমার্কেটে একজন শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে। হত্যাকারী বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

১২ এপ্রিল, ২০২২ – নিউ ইয়র্ক সিটিতে একজন ৬২ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি একটি ধোঁয়া বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি পাতাল রেলে গুলি চালায়। ঘটনায় ২৩ জন আহত হন। ঘটনার পরেরদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়।

৩০ নভেম্বর, ২০২১ – ডেট্রয়েটের উত্তরে অক্সফোর্ড শহরে একটি হাই শ্বকুলে এক নাবালক গুলি চালায়। ঘটনায় মৃত্যু হয় চার জন ছাত্রের এবং সাত জন আহত হন।

১৬ এপ্রিল, ২০২১ – ইন্ডিয়ানাপোলিসে একজন প্রাক্তন FedEx কর্মী গুলি চালান। মানসিক চিকিৎসা চলা ওই ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করার আগে ওই শিপিং কোম্পানির ইন্ডিয়ানা অফিসের আটজনকে গুলি করে হত্যা করেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হন ওই ঘটনায়।

৩১ মার্চ, ২০২১ – ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলির একটি অফিসে বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এক শিশু সহ ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে ওই বন্দুকবাজকে গ্রেফতার করা হয়।

২২ মার্চ, ২০২১ – কলোরাডোর বোল্ডারে একটি সুপার মার্কেটে গুলি চালানোর ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় একজন পুলিসকর্মীরও মৃত্যু হয়।

১৬ মার্চ,  ২০২১ – আটলান্টা এবং তার আশেপাশে ডে স্পাগুলিতে একের পর এক হামলায় এশীয় বংশোদ্ভূত ছয় মহিলা সহ আটজন নিহত হন। একজন শ্বেতাঙ্গ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয় ঘটনায়।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ – মিলওয়াকিতে মলসন কোরস বেভারেজ কোম্পানির ব্রিউইং কমপ্লেক্সে একজন বন্দুকধারী গুলি চালায়।আত্মহত্যা করার আগে পাঁচ সহকর্মীকে হত্যা করে সে।

৪ অগাস্ট, ২০১৯ – ওহায়োর ডাউনটাউন ডেটনে বর্ম পড়ে এক বন্দুকধারী গুলি চালায়। তার বোন সহ নয়জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়। পুলিসের গুলিতে মৃত্যু হয় হামলাকারীর।

৩ অগাস্ট, ২০১৯ – টেক্সাসের এল পাসোতে ওয়ালমার্ট স্টোরে এক ব্যক্তি ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। একটি বিবৃতিতে, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি লেখেন আক্রমণটিকে “টেক্সাসে হিস্পানিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া”। বন্দুকধারীকে আটক করে কর্তৃপক্ষ।

৩১ মে, ২০১৯ – একজন পাবলিক ইউটিলিটি কর্মচারী ভার্জিনিয়ায় একটি পৌরসভা ভবনে সহকর্মীদের উপর গুলি চালায়। পুলিসের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে ১২ জনকে হত্যা করে সে।

১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ – ইলিনয়ের একটি কারখানায় গুলি চালায় এক ব্যক্তি। পুলিসের হাতে নিহত হওয়ার আগে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা করে সে।

৭ নভেম্বর, ২০১৮ – লস এঞ্জেলেসের শহরতলির থাউজেন্ড ওকসে, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বারে একজন প্রাক্তন মেরিন কমব্যাট ভেটেরান ১২ জনকে হত্যা করে। এরপর তিনি নিজে আত্মহত্যা করেন।

২৭ অক্টোবর, ২০১৮ – একজন বন্দুকধারী পিটসবার্গের কাছে ট্রি অফ লাইফ সিনাগগে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং একটি শাবাত সার্ভিসের জন্য জড়ো হওয়া জনতার উপর গুলি চালায়। এতে ১১ জন নিহত হয়।

১৮ মে, ২০১৮ – একজন ১৭ বছর বয়সী ছাত্র হিউস্টন, টেক্সাসের বাইরে তার হাই স্কুলে গুলি চালায়। পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণ করার আগে নয়জন ছাত্র এবং একজন শিক্ষককে হত্যা করে সে।

১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ – ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র, ১৭ জন ছাত্র এবং শিক্ষককে হত্যা করে।

৫ নভেম্বর, ২০১৭ – একজন ব্যক্তিকে ইউএস এয়ার ফোর্স থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তার স্ত্রী এবং সন্তানকে মারধর করার অপরাধে। টেক্সাসের একটি গ্রামীণ চার্চে ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে সে। এখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা উপাসনা করছিলেন। এরপর তিনই নিজে আত্মহত্যা করেন।

১ অক্টোবর, ২০১৭ – একজন বন্দুকধারী হোটেলের ৩২ তলার একটি স্যুট থেকে একটি কান্ট্রি মিউজিক উৎসবে গুলি চালায়।আত্মহত্যার আগে ৫৮ জনকে হত্যা করে সে।

১২ জুন, ২০১৬ – একজন বন্দুকধারী পালস নামের একটি সমকামী নাইটক্লাবে ৪৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপরে পুলিস তাকে গুলি করে হত্যা করে।

২ ডিসেম্বর, ২০১৫ – একজন স্বামী এবং স্ত্রী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনোতে কর্মক্ষেত্রে ছুটির পার্টিতে ১৪ জনকে হত্যা করে।পুলিসের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় তাদের।

১ অক্টোবর, ২০১৫ – একজন বন্দুকধারী ওরেগন কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে এবং গুলি চালায়। পুলিস তাকে গুলি করার আগে নয়জনকে হত্যা করে সে।

১৭ জুন, ২০১৫ – একজন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনে একটি গির্জায় নয়জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে। পরবর্তীকালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ – নৌবাহিনীর প্রাক্তন কর্মী যিনি সরকারি ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি ওয়াশিংটন নেভি ইয়ার্ডে ১২ জনকে হত্যা করেন৷ পুলিসের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।

১৪ ডিসেম্বর, ২০১২ – কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘটনায় এক বন্দুকধারী পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সী ২০ জন শিশু সহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করে।

২০ জুলাই, ২০১২ – কলোরাডোর অরোরাতে একটি সিনেমা হলে একজন বন্দুকধারী ১২ জনকে হত্যা করে৷ তাঁকে একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

(Source: zeenews.com)