রান্নাঘরের আলুতেই ভগবানকে এঁকেছেন রানাঘাটের গ্রহবধূ। তাঁর শৈল্পিক মনোভাবের এক অনন্য নির্দেশন রথযাত্রার প্রথম দিনেই। মাটি, কাঠ, পাথর ছেড়ে, সমান আকারের তিন আলুতেই তুলির টানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। মহিলার প্রতিভা দেখে উচ্ছসিত পাড়া প্রতিবেশীরাও। তাঁদের দাবি, সাধারণত পাথর কিংবা কাঠের উপর এমন কাজ দেখেছেন। কিন্তু চন্দ্রমুখী আলুর উপরও যে এত নিপুণভাবে প্রভুকে আঁকা যায়, এই প্রথমবার দেখা গেল।

প্রায় তিন ইঞ্চি উচ্চতার তিনটি চন্দ্রমুখী আলুতে রং দিয়েছে ২৭ বছর বয়সী শতাব্দী। কাগজ, জরি, তুলি ও আঠার সাহায্যে তৈরি করেছেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার অবয়ব। ছোট থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসেন তিনি। তাই কয়েকদিন আগেই শুরু করেছিলেন এই দারুণ কাজ। জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই সময় পেলে এ ধরনের কাজ করতে চান, আত্মতৃপ্তি আসে। সংসার সামলে তা যদিও প্রায় অসম্ভব। এর আগেও একটি লাউয়ের উপর দুর্গা এঁকেছিলেন রানাঘাট শহরের মহাপ্রভুর পাড়ার বাসিন্দা শতাব্দী।

এই প্রথম নয়, চলতি বছরের জুন মাসের দিকে আলু দিয়ে জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ বানিয়ে চোখ ধাঁধিয়েছিলেন বালুরঘাটের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াও। বালুরঘাট নামাবঙ্গীর বাসিন্দা দেবজ্যোতি মোহরা, ছোটবেলা থেকে এই ধরনের কাজ করতে ভালোবাসেন। প্রথমে ফেব্রিকের প্রলেপ দিয়ে শুকিয়ে রং করেছিলেন আলুতে। সবশেষে সোনালি জরি ও পুঁথি দিয়ে মুকুট তৈরি করে অবিকল জগন্নাথদেবকে সাজিয়ে তুলেছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার ব্যাপক আবেশ

আসলে, পুরীর মতো পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রাও ধুমধাম করে পালন করে। পাড়ায় ছোটরা তাদের ছোট্ট রথ চালিয়ে প্রভু জগন্নাথের আরাধনা করেন। রথের মেলা বসে। এদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, আগামী বছর থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় নির্মাণাধীন জগন্নাথ মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সকলেই দীঘায় আমাদের নতুন জগন্নাথ ধামে পরের বছরের রথযাত্রার জন্য উন্মুখ! জয় জগন্নাথ।

তবে, প্রভু জগন্নাথের রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ইসকন মন্দিরে পুজো দিয়ে এসেছেন। জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং মানুষের জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। কলকাতায় ইসকন আয়োজিত রথযাত্রায় অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘রথযাত্রার শুভ উপলক্ষে আজ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ভগবান জগন্নাথের কৃপায়, এই দিনটি সবার জন্য শান্তি, সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।’ তিনি বলেছেন, আজ সারা বাংলা থেকে লাখ লাখ মানুষ রথযাত্রায় অংশ নেবেন। ঐতিহাসিক মাহেশে (যেখানে আমরা প্রাচীন মন্দির সংস্কার করেছি) প্রচুর ভিড় হবে।

যদিও, বর্ষার আবহাওয়ার ভ্রুকুটি থাকছেই। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রথযাত্রার দিন রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের মতে, উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে দক্ষিণবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সক্রিয় মৌসুমী অক্ষ দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে, যার কারণে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হবে এবং তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের নীচে থাকবে। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

(Feed Source: hindustantimes.com)