
নয়াদিল্লি: লাদাখে এখনও চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত অব্যাহত ভারতের। সেই আবহেই কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে ঘিরে উদ্বেগ ছড়াল। কারণ ছবিতে দেখা গিয়েছে, প্যাংগং হ্রদের উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুধুমাত্র সম্পূর্ণই করেনি চিন, ওই সেতুর উপর দিয়ে দিব্যি গাড়ি চলাচলও করছে। অর্থাৎ চিন চাইলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ওই সেতু ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সেনা এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করতে পারে। (India-China Conflict)
লাদাখে সীমান্ত সংঘাত চলাকালীনই প্যাংগং হ্রদের উপর চিন সেতুন নির্মাণ করছে বলে ২০২২ সালে প্রথম খবর মেলে। সম্প্রতি কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, ৪০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। গাড়ি চলাচল করছে সেতুর উপর দিয়ে। গত ২২ জুলাই কৃত্রিম উপগ্রহ প্যাংগং হ্রদের উপর চিন নির্মিত সেতুটির ছবি তোলে, যাতে সেতুটির উপরিভাগে কালো পিচ ঢালা রয়েছে বলে ঠাহর হয়। সেতুর দুই ধারে বসানো হয়েছে বাতিস্তম্ভও। (India-China Border Tension)
এই সেতু নির্মাণের ফলে প্যাংগং হ্রগের উত্তর থেকে দক্ষিণ তীরে পৌঁছনো আরও সহজ হবে চিনের। আগে প্রায় ৫০-১০০ কিলোমিটার ঘুরে তবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছনো সম্ভব ছিল। সেতুটি নির্মাণের ফলে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় বাঁচবে। এই প্যাংগং হ্রদের ধারেই কয়েক বছর আগে চিনা বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতি বাঁধে ভারতীয় জওয়ানদের, যা গত ছয় দশকে চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে তলানিতে নিয়ে যায়। ফলে এই প্যাংগং হ্রদের উপর চিন নির্মিত সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের বিষটি সামনে আসতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
China has completed construction of a 400-metre bridge.
The bridge is near the Line of Actual Control between India and China in Ladakh and gives Chinese forces the ability to speedily move troops between the North and South bank of the Pangong Lake. https://t.co/VKqRkY9SKX— Mayte Chummia (@Maytechummia) July 30, 2024
আমেরিকার সংস্থা BlackSky-ও সম্প্রতি কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি প্রকাশ করে জানায়, প্যাংগং হ্রদের কাছে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার তৈরি করছে চিন। স্যাটেলাইটের তোলা নতুন যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। সেতুর উপর একটি গাড়ি চলতে দেখা গিয়েছে যেমন, সেতুতে ওঠার মুখে এবং চারপাশে আরও বেশ কয়েকটি গাড়ি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। সেতুর উত্তর দিকে একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে।
সেতুটি ঘিরে উদ্বেগের আরও একাধিক কারণ রয়েছে, যেমন, ওই সেতুটিকে ঘিরে আস্তর সড়ক নেটওয়র্ক গড়ে তুলেছে চিন। প্যাংগং হ্রদের উত্তর থেকে সড়ক পথে প্রাচীন তিব্বতি দুর্গ খুরনকে পৌঁছনো যায়। একসময় ভারত ওই এলাকায় টহল দিত। কিন্তু ১৯৫৮ সালের জুলাই মাস থেকে ওই এলাকা চিনের দখলে রয়েছে। আবার, প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ তীরে একটি নতুন রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে, যা সেতুটিকে রুতংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। রুতংয়ে চিনের সেনা এবং সরঞ্জাম মজুতের হাব।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে এ নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, এ ব্য়াপারে ভারত আগেই নিজের অবস্থান জানিয়েছে। সেতু তৈরির খবর যখন সামনে আসে, সেই সময় বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, “গত ৬০ বছর ধরে বেআইনি ভাবে যে অঞ্চল জবরদখল করে রেখেছে চিন, সেতুটি সেখানেই তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের বেআইনি নির্মাণ ভারত কখনওই সমর্থন করে না।”
New developments at India’s two-front security paradigm has yet again exposed Modi Govt’s rank apathy.
China
▪️ Is it not true that China has built and operationalised a bridge connecting the north and south banks of Pangong Lake, which allows it to have a strategic dominance…
— Mallikarjun Kharge (@kharge) July 30, 2024
ঘোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি, তেমনই গোটা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘আমাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে প্যাংগং হ্রদের উত্তর-দক্ষিণকে সংযুক্ত করে চিন সেতুর ব্যবহার করছে, এই কথা সত্য নয়? দেমচকে চিন আস্ত গ্রাম গড়ে তুলছে, তা কি সত্য নয়? নরেন্দ্র মোদি শপথ নেওয়ার পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ২৫টি জঙ্গি হামলা হয়েছে, তা কি সত্য নয়? জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা, কাঠুয়া, রিয়াসিতে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে, এও কি সত্য নয়? অত্যন্ত গুরুতর এবং স্পর্শকাতর বিষয়, দেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সম্মিলিত ভাবে এর মোকাবিলা করা উচিত। সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত করতে হবে। মিথ্যে বাহাদুরি এবং ফাঁপা প্রচারের মধ্যে মোদি সরকার দেশের স্বার্থরক্ষায় নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গিয়েছে’।
২০২০ সালের মে মাস থেকে বার বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে চিনা বাহিনী এবং ভারতীয় সেনা। প্যাংগং হ্রদের উত্তরে, গালওয়ান উপত্যকায় দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়। তাদের তরফে চার জওয়ান মারা যান বলে জানিয়েছিল চিন। যদিও ভারতের দাবি, সংঘর্ষে চিনের ৪০ জন জওয়ান মারা যান। সেই থেকে দুই দেশের মধ্য়ে সীমান্ত সংঘাত যত বেড়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।
(Feed Source: abplive.com)
