Bangladesh Violence: পুড়ছে বাড়িঘর, চলছে ভাঙচুর, পিটিয়ে খুন, অবাধ লুঠপাট… গত ২৪ ঘণ্টায় একসঙ্গে এইসব নৃশংস, নির্মম, অমানবিক ঘটনার ইতিমধ্যেই সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। কোথাও সেতু থেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দেহ। কোথাও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে ২৪ জনকে। হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি নাবালকও। সেনাপ্রধানের আশ্বাসের পরেও জ্বলছে বাংলাদেশ। চারিদিকে হিংসার ছবি। সোমবার ৫ অগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তারপরেই বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর থেকেই অশান্তির মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায়। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা, পাবনা থেকে কুমিল্লা… হিংসার আঁচ পড়েছে সর্বত্র।
হামলা শুরু গণভবন থেকে
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই তাঁর প্রাক্তন বাসভবন ‘গণভবন’- এর দখল নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি। অবাধে লুঠ চলে গণভবনের অন্দরমহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি, ভিডিওতে দেখা গিয়েছে গণভবনের ঘরে বিছানার উপর শুয়ে উল্লাস করছে আন্দোলনকারীদের একাংশ। কোথাও মাংস খেতে ব্যস্ত যুবকের দল। গণভবনের ভিতর থেকে হাঁস, খরগোশ, ছাগল, দামি আসবাব, টিভি, শাড়ি থেকে শুরু করে কী যে লুঠ করেনি হামলাকারীরা, বলা দুষ্কর। বাংলাদেশের সংসদের চলেছে হামলা, ভাঙচুর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা
হাতুড়ি হাতে নিয়ে মূর্তি ভাঙতে উঠেছিল কয়েকজন যুবক। তারপর বড় মেশিন দিয়ে ভাঙা হল বঙ্গবন্ধুর মূর্তি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও-ও দেখা গিয়েছে যে শেখ মুজিবুর রহমের মূর্তির উপর চড়ে প্রস্রাব করছে এক ব্যক্তি। এ কী শুধুই জনরোষ? রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের উপর আমজনতার ক্ষোভ? উঠছে প্রশ্ন। যে মানুষটির জন্য আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ তৈরি হল, সেই জাতির পিতার সঙ্গে এ হেন আচরণ কীভাবে করতে পারে কেউ? সর্বোপরি এ নিয়ে কোনও প্রতিবাদও নেই বাংলাদেশের তরফে। এই ঘটনায় হতবাক সারা বিশ্ব।
ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম
হামলাকারীদের হাত থেকে ঢাকার এই দুই প্রসিদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার। দুই প্রতিষ্ঠানেই চলেছে অবাধ লুঠ। তারপরে লাগানো হয় আগুন। ঢাকায় আওয়ামি লিগের একাধিক নেতার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়েছে গতকাল, ৫ অগস্ট। ভাঙা হয়েছে একাধিক দোকান। সেই সঙ্গে চলেছে অবাধে লুঠপাট।
নতুন করে অশান্ত সাতক্ষীরা, হামলার আঁচ কুমিল্লাতেও
সাতক্ষীরায় নতুন করে অশান্তি ছড়ায় মঙ্গলবার। ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লায় আওয়ামি লিগের কাউন্সিলারের বাড়িতে হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। উদ্ধার হয়েছে ৬টি দেহ। হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি নাবালকও। এর পাশাপাশি প্রকাশ্যে এসেছে সেতু থেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া দেহের ছবি। কারা এ কাজ করেছে, কাদেরই বা এভাবে মারা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি এখনও। এর পাশাপাশি যশোরে এক আওয়ামি লিগ নেতার হোটেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পুড়ে মৃত্য হয়েছে ২৪ জনের। তাঁদের মধ্যে রয়েছে ১ জন বিদেশি নাগরিকও।
বিপন্ন সংখ্যালঘু হিন্দুরা, একাধিক মন্দিরে ভাঙচুর-আগুন
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরেই এই আশঙ্কা জন্ম নিয়েছিল যে এবার কি তবে প্রতিবেশী দেশে বিপন্ন হবেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা? ধীরে ধীরে সেই আশঙ্কা সত্যি পরিণত হচ্ছে। নৈরাজ্যের বাংলাদেশে জারি রয়েছে ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ। ঢাকা, পাবনা, মালেপাড়া-সহ একাধিক জায়গায় হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মালেপাড়ায় ৬টি হিন্দু বাড়িতে হামলার খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে মেহেরপুর, চট্টগ্রাম-সহ একাধিক জায়গায় মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন হামলাকারীরা, অবাধে চলেছে লুঠ, ভাঙচুর। দিকে দিকে আওয়ামি লিগ নেতা এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। মেহেরপুরে আওয়ামি লিগ নেতা-সহ সংখ্যালঘু হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে খবর। এর পাশাপাশি জানা গিয়েছে মেহেরপুরে ইস্কনের জগন্নাথ মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে। চট্টগ্রামের শপিং মল থেকে অবাধে চলেছে লুঠপাট। সংখ্যালঘু হিন্দুদের অসংখ্য দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
(Feed Source: abplive.com)