কলকাতা: সিজারিয়ান শব্দটির উৎপত্তি কোথায়, সেটা বেশ অস্পষ্টই। তবে মনে করা হয় যে, কিংবদন্তি জুলিয়াস সিজার এই পদ্ধতিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই পদ্ধতিকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বলে ডাকা হয়। আর একটি ব্যাখ্যাও অবশ্য রয়েছে। যার উৎপত্তি মধ্যযুগীয় ল্যাটিন ক্রিয়াপদ ‘Caedare’ এবং ‘Seco’ থেকে। ‘Caedare’-এর অর্থ হল কাটা।
বর্তমানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের প্রবণতা বেশি। আর এটাকে নিশ্চিত ভাবে জীবনদায়ী প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। মূলত প্রসবকালীন পরিস্থিতিতে জটিলতা এলেই এটা করা হয়। এই প্রসঙ্গে কথা বলছেন বেঙ্গালুরু রিচমন্ড রোডের ফর্টিস হাসপাতালের ওবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. জয়শ্রী নাগরাজ ভাসগি।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তলপেটের প্রাচীর এবং অভ্যন্তরীণ টিস্যু থেকে জরায়ুর নিচের প্রান্ত পর্যন্ত কাটা হয়। জরায়ুটি খুলে বাচ্চা বার করে আনা হয়। অ্যানাস্থেশিয়া এবং সার্জারি আজ উন্নত হয়েছে। ফলে তুলনামূলক ভাবে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেকটাই কাটানো গিয়েছে।
সার্জারির মোটামুটি ৩-৪ দিন পরে হাসপাতাল থেকে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত মোটা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রথমেই অ্যামবিউলেশনের প্রয়োজন হয়। যাতে নিচের দিকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত জমাট না বাঁধতে পারে। আসলে রক্ত জমাট বেঁধে তা ফুসফুসে পৌঁছে গেলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। রোগীকে প্রথমেই কাজকর্ম করতে বারণ করা হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যথা উপশমের জন্য নিরাপদ পেন কিলার এবং হিট প্যাডও দেওয়া হয় রোগীকে। সন্তানের যত্নের জন্য পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিতে হবে। আরামদায়ক বালিশ নিয়ে চিৎ হয়ে কিংবা পাশ ফিরে শোওয়া উচিত।
তবে উপুড় হয়ে বা পেটে চাপ দিয়ে শোওয়া একেবারেই যাবে না। ব্যথা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কাজকর্ম বাড়াতে হবে। তবে খুব একটা পরিশ্রম করা চলবে না। মোটামুটি ২ মাস পর্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ এড়িয়ে চলাই উচিত। এই সময় সংক্রমণ এড়ানোর জন্য মেনস্ট্রুয়াল কাপ এবং ট্যাম্পন ব্যবহারের পাশাপাশি যৌন মিলন থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রসবের পরে সদ্যপ্রসূতি স্বাভাবিক ভাবেই স্নান করতে পারবেন। কারণ সার্জারির তৃতীয় দিনেই ব্যান্ডেজ খুলে দিয়ে ওয়াটারপ্রুফ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়। ৭ দিন পরে সেই ব্যান্ডেজ খুলে দিলে ক্ষতস্থান সাবান এবং জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে ওই স্থানটি শুকনো রাখতে হবে এবং ঢিলেঢোলা পোশাক পরা উচিত।
এই সময় বাথ টাব এবং মালিশ এড়িয়ে চলতে হবে। তবে রোগীর ক্ষতস্থানে যদি অতিরিক্ত ব্যথা, লালচে দাগ হয় কিংবা তা থেকে কোনও ডিসচার্জ হয়, তাহলে হাসপাতালে যেতে হবে। ব্যথা কমলে তবেই পোস্ট-পার্টাম বেলি বাইন্ডার ব্যবহার করতে হবে। সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রথম ৩-৪ দিন ভ্যাজাইনা থেকে রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তবে তা ৩-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের ক্ষেত্রে কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(Feed Source: news18.com)