আদানিকে বিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে চাপ মোদির! বিস্ফোরক দাবি করে পদত্যাগ শ্রীলঙ্কার আধিকারিকের

আদানিকে বিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে চাপ মোদির! বিস্ফোরক দাবি করে পদত্যাগ শ্রীলঙ্কার আধিকারিকের

নয়াদিল্লি: অর্থনৈতিক সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যসঙ্কট এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতায় যখন তপ্ত শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka), সেই সময় বন্ধু দেশ হিসেবে সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। বিপদের সময় দিল্লির এই অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করে তুলবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। শিল্পপতি গৌতম আদানিকে (Gautam Adani) একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে মোদি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ। সংসদে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনই দাবি করেছেন সিলোন (সিংহল) ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের চেয়ারম্য়ান এমএমসি ফার্দিনান্দো।

দিল্লির তরফে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি

গত শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদিকে নিয়ে ওই দাবি করেন ফার্দিনান্দো। তাঁর সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও টেলিভিশন চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে সিংহলি তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “২০২১-এর ২৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট আমাকে তলব করেন। বৈঠকের পর জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।”

শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে ভিডিওটি সামনে আসায়, মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকের তিন দিন পরই পদত্যাগ করেন ফার্দিনান্দো। তার পর নিজের দাবি থেকে সরে আসতে দেখা যায় তাঁকে। আবেগপ্রবণ হয়ে ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন বলে সাফাই দেন। মোদি চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, এমন কথা বলেননি বলে জানান গোতাবায়াও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দাবি অস্বীকার করছি।  কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে ওই প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার জন্য কোনও রকম তদ্বির করিনি আমি।’’

এ নিয়ে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কিন্তু একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হাতে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রকের উদ্দেশে লেখা চিঠি এসে পৌঁছেছে। তাতে মান্নার জেলায় ৫০০ মেগাওয়াটের পুনর্নবীকরণযোগ্য় ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদনের আর্জি জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের অনুরোধ মেনে আদানি গোষ্ঠীর দরপত্রটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথাও উল্লেখ রয়েছে তাতে। এবিপি আনন্দ যদিও ওই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি।

এই বিতর্কে প্রতিক্রিয়া চাইলে আদানি গোষ্ঠী গোটা বিষয়টিকে ‘নিরাশাজনক’ বলে উল্লেখ করে। তাদের বক্তব্য, ‘প্রতিবেশির প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই বিনিয়োগে উদ্যোগী হই আমরা। দায়িত্বশীল কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করি আমরা। এই ধরনের অপপ্রচার অত্যন্ত নিরাশাজনক। শ্রীলঙ্কা সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।’

বিরোধীরা তীব্র কটাক্ষ করেছে মোদি সরকারকে

উল্লেখ্য, যে বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক, গত বছর ডিসেম্বর মাসে মান্নার এবং পুনারিনে ৫০ কোটি ডলারের দু’-দু’টি প্রকল্পের বরাত শেষমেশ আদানি গোষ্ঠীর হাতেই ওঠে। তাই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপি-র অন্তরঙ্গ বন্ধুতা পাক জলসন্ধি ছাড়িয়ে শ্রীলঙ্কায় ঢুকে পড়েছে।’

(Source: abplive.com)