রাখি পূর্ণিমা, প্রতিবছর এই দিন বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি পরিয়ে তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। কিন্তু এই দিনটি শুধু ভাই-বোনদের উৎসব নয়। এটি সম্প্রীতির উৎসব। একজন বোন তাঁর বোনকেও রাখি পরাতে পারেন, অন্যদিকে একজন ভাই তাঁর ভাইকেও রাখি পরাতে পারেন। আবার বন্ধুরাও একে অপরকে রাখি পরাতে পারেন। আসলে এই দিনটি যে কোনও মানুষ অপর মানুষকে রাখি পরিয়ে তাঁর মঙ্গল কামনা করতে পারেন।
রাখি পূর্ণিমার ইতিহাস:
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি উৎসব পালন করা হয়। যেহেতু শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয় তাই অনেক জায়গায় রাখি পূর্ণিমাকে ‘শ্রাবণী’ বলেও ডাকা হয়। তবে আপনি কি জানেন শ্রাবণী পূর্ণিমাকেই কেন রাখি উৎসব হিসাবে বেছে নিয়েছিল মানুষ? রাখি পূর্ণিমা, ভাইবোনদের উৎসব হলেও ইতিহাসে কেন এটিকে ভ্রাতৃত্ব বা বন্ধুত্বের প্রতীক বলা হয়?
গুজরাটের রাজা সুলতান বাহাদুর যখন চিতোর আক্রমণ করেছিলেন, তখন সেখানকার বিধবা রানী কর্নাবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের কাছে রাখি পাঠিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। হুমায়ুন লোক পাঠালেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর দখল করে নিয়েছিলেন ততক্ষণে। স্বাভাবিকভাবেই রানী কর্নাবতী অপমানিত হন এবং জহরের মাধ্যমে নিজের প্রাণ ত্যাগ করেন। কিন্তু যেহেতু রানী হুমায়ুনের কাছে রাখি পাঠিয়ে চিতোর দাবি জানিয়েছিলেন, তাই হুমায়ূন চিতোর পুনরুদ্ধার করে রানী কর্ণাবতীর ছেলেকে সেখানে রাজা হিসেবে বসান।
ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে আরও একটি গল্প পাওয়া যায়। শিশুপাল বধের সময় কৃষ্ণের কনিষ্ঠ আঙুল কেটে যায় সুদর্শন চক্র দিয়ে। সেই সময় কৃষ্ণের মঙ্গলার্থে দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল ছিড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। তারপর থেকে কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে মনে করতেন এবং সব সময় তাঁকে রক্ষা করতেন। তবে ভাই বোনদের উৎসব ছাড়াও এটি যে ভ্রাতৃত্বের উৎসব, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ভারতের ইতিহাস ঘাটলেই।
জালিয়ানাওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড প্রতিবাদে সারা দেশের মানুষ যখন একত্রিত হন, সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে সারা ভারতবাসী একে অপরকে রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই রাখি শুধুমাত্র ভাইবোনদের উৎসব নয়, রাখি উৎসব ভাতৃত্ব এবং বন্ধুত্বের উৎসবও বটে। যাবতীয় মনোমালিন্য সরিয়ে রেখে রাখি উৎসবের মাধ্যমে তাই এক হয়ে যাক সকল মানুষ।
(Feed Source: hindustantimes.com)