জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ইশাক আলি খান পান্না। এঁর মৃতদেহ পাওয়া গেল বাংলাদেশ সীমান্তে। খুঁজে পেল মেঘালয় পুলিস। আশ্চর্য! কীভাবে মৃত্যু? প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছে, সীমান্ত পেরনোর সময়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটেছিল তাঁর। তা থেকেই মৃত্যু। কিন্তু ক্রমশ যত অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং একটু-একটু করে তথ্য হাতে আসছে, তত কিছু কিছু বিষয়ে নতুন নতুন সমীকরণ মিলছে। যেমন, এখন বলা হচ্ছে, যেভাবে মৃত্যু, ময়নাতদন্তে করার পর মনে হচ্ছে, যেন গুলির লড়াই চলছিল তাঁর কারও সঙ্গে। কার সঙ্গে? বাংলাদেশ সীমান্ত পুলিস? যত জট ছাড়ানো হবে, তত রহস্য পরিষ্কার হবে। আপাতত, হাড়হিম করা স্রোত নামছে শিরদাঁড়া দিয়ে। কেননা, হাসিনা-উচ্ছেদ পরবর্তী ঘটনাক্রম ক্রমশ যেন একটা থ্রিলারের রূপ নিচ্ছে।
যা জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে আওয়ামি নিগ নেতা ইশাকের পচা-গলা দেহ মেলে ২৬ অগাস্ট। দেহ উদ্ধার করে মেঘালয় পুলিস। ইশাক আলি খান পান্না শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে খবর ছিল। পরে, এতদিন বাদে তাঁর মৃতদেহ মিলল। পাসপোর্ট দেখে তাঁর পরিচয় জানা যায়। প্রাথমিক ভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে ‘আ পোটেনশিয়াল শুটিং ইনসিডেন্ট উইথ দ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’কে তাঁর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এমনিতেই এখন হাসিনা-কাণ্ড গোটা দক্ষিণ-পূ্র্ব এশিয়ার আলোচনার বিষয়ে পরিণত। এখন বিশেষ করে আলোচনা হচ্ছে হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে। বাংলাদেশ যা নিয়ে অনুরোধ করতেই পারে ভারতকে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের অনুরোধ বাংলাদেশ থেকে যে কোনও দিন আসতে পারে। হয়তো ঢাকার তরফে সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে একের পর এক মামলা রুজু হয়েছে। বাতিল হচ্ছে তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্টও। আর সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে বাংলাদেশের হাতে হাসিনাকে তুলে দিতে বাধ্য হবে দিল্লি?
২০১৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। দু’দেশের মধ্যে অপরাধী হস্তান্তরের এই চুক্তি তখনই স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তর করবে ভারত ও বাংলাদেশ। এখন এই চুক্তির ভিত্তিতেই হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ কি তা করবে? করতেই পারে। কেননা, ইতিমধ্যেই বিএনপি-সহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে তাঁকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। যদিও, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রুজু হচ্ছে, তার ভিত্তিতে সেই দেশের স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রক যদি ভারত থেকে হাসিনাকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলেই ভারতকে এই অনুরোধ করা হবে। এবং তাঁর মতে, তেমনটা ঘটলে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতে। কিন্তু তেমন হলে বিচারের জন্য বা দণ্ডিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের হাতে হাসিনাকে কি তুলে দেবে ভারত? সেই সম্ভাবনা হয়তো কমই। কেননা, ভারত চিরকালই বিপদের দিনে সকলের পাশে দাঁড়ায়। সেভাবেই ভারত শেখ হাসিনার পাশেও দাঁড়িয়েছে। সহসা তাঁর পাশ থেকে হয়তো সরে যাবে না ভারত। তাহলে কি ভারত মাথা নোয়াবে না মুহাম্মদ ইউনূসদের চাপের কাছে? দেখা যাক, সময়ই তা বলবে।
(Feed Source: zeenews.com)