কলকাতায় ফের পোলিও-র জীবাণু! বাচ্চার জন্য সতর্কতা নিতে জানুন চিকিৎসকের মত

কলকাতায় ফের পোলিও-র জীবাণু! বাচ্চার জন্য সতর্কতা নিতে জানুন চিকিৎসকের মত

কলকাতা : ১০ বছর পর ফের কলকাতায় পাওয়া গিয়েছে পোলিও জীবাণু ৷ মেটিয়াবুরুজ এলাকার নর্দমায় মিলেছে অতীতের ত্রাস এই অসুখের ভাইরাস ৷ তা হলে কি একে করোনায় রক্ষে নেই, পোলিও দোসর? আসলে পোলিও বহু দিন ধরেই চোখ রাঙিয়ে এসেছে ৷ কিন্তু গত এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজ্যে পোলিও আক্রান্তের সন্ধান না পাওয়া যাওয়ায় সেই ভয়ের ছায়া হাল্কা হয়ে এসেছিল ৷ আবার কি পুরনো আতঙ্ক ফিরে এল? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ভট্টাচার্যর মতে, আতঙ্ক নয়, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ৷

তিনি বললেন, ‘‘পোলিও-র টিকা দু’ ধরনের হয় ৷ একটা বাচ্চাকে খাইয়ে দেওয়া হয় ৷ অন্যটা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তার শরীরে প্রবেশ করানো হয় ৷ যেটা ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন, সেখানে কিন্তু জীবাণু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকে না ৷ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যে টিকা দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু জীবাণু নিষ্ক্রিয় থাকে ৷ ফলে এই টিকা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ ৷’’

পোলিও নির্মূলে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইনজেক্টেবল পোলিও ভ্যাকসিনের উপর ৷ ওরাল ও ইনজেক্টেবল-দু’ ধরনের ভ্যাকসিন, সরকারি তরফে প্রচারের পরও কলকাতার নর্দমার জলে তার নিজের অস্তিত্ব জানান দিল পোলিও ভ্যাকসিন  ৷

আরও পড়ুন : সারা বছর ধরে আম খেতে চান? উপায় আপনার হাতের মুঠোয়

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ভট্টাচার্য  বললেন, ‘‘অনেক সময় দেখা যায় কোনও শিশুর পেটের গণ্ডগোল চলছে, সেই অবস্থায় তাকে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া হল ৷ তার পর সেই শিশুর মলত্যাগের সময় সক্রিয় জীবাণু, যা তার শরীরে টিকার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়েছিল, তা  বেরিয়ে এল ৷ ক্রমে সেই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ল ৷ সেই পরিস্থিতিতে কমিউনিটি স্প্রেডের ভয়ঙ্কর সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায় ৷ এবং বিরল সম্ভাবনা হলেও সেই ছড়িয়ে পড়া জীবাণু কোনও শিশুর দেহে প্রবেশ করলে সে পোলিওতে আক্রান্ত হলেও হতে পারে ৷ আমার মনে হয় পোলিও টিকা নেওয়া শিশুর মলবাহিত হয়ে এ বারও জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে ৷ ’’

এর আগে ২০১১ সালে শেষ বার হাওড়ার এক শিশুর দেহে পোলিওর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ৷ তিন বছর পরে ভারতকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু (WHO) ৷  তার ৮ বছর পর ফের পোলিওর জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যাওয়ার পর কী কী সতর্কতা নিতে হবে? সুমন্ত ভট্টাচার্য জানালেন এই সতর্কতা কিন্তু দু’ দিকেই নিতে হবে ৷ অর্থাৎ যে শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে তার অভিভাবক এবং অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মী, যাঁরা টিকা দিচ্ছেন, উভয় দিকেই থাকতে হবে সতর্কতা ও সচেতনতা  ৷

শিশুদের অভিভাবকরা মনে রাখুন

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই ভ্যাকসিনেশনের চার্ট দেওয়া হয়, সেটা অনুসরণ করবেন

বাচ্চার পেটের গণ্ডগোল চললে তাকে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়াবেন না ৷ কারণ তা হলে মলত্যাগের সম্ভাবনা বেশি থাকে ৷

কোনও অবস্থাতেই বাচ্চাকে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করাবেন না ৷ এই বদঅভ্যাস কিন্তু সম্পূর্ণ ছাড়তে হবে ৷ নিজের ও অন্যদের মঙ্গলের কথা ভেবে রাস্তায় বা অন্য খোলা জায়গায় বাচ্চাদের মলত্যাগ করানো বন্ধ করুন ৷

স্বাস্থ্যকর্মীরা খেয়াল রাখুন

পোলিও টিকার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করুন ৷ পালস পোলিও টিকাকরণের সময় আইসপ্যাকে সঠিক তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করুন  ৷

টিকা দেওয়ার আগে বাচ্চার সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যের খোঁজ নিন ৷ যদি কোনও বাচ্চা পেটের অসুখে সে সময় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন ৷

আরও পড়ুন : মাঝে মাঝেই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন? দেখুন শরীরের কী চরম ক্ষতি করছেন

সার্বিকভাবে পোলিও নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলেই মনে করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ৷ তবে যে এলাকার নর্দমায় জীবাণুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যবেক্ষণ দরকার বলে তাঁর অভিমত ৷ অন্তত ওই এলাকায় পানীয় জলটুকু এ সময়ে ফুটিয়ে, ছেঁকে নিয়ে তার পর বাচ্চাদের পান করানোই ভাল  ৷ বলছেন তিনি  ৷

Published by:Arpita Roy Chowdhury

(Source: news18.com)