বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে

বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, গত দুই মাসে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসের মধ্যে অন্ততপক্ষে ১০টি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সরকার সেগুলো মোকাবেলা করেছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকালে গুলশানের বেঙ্গল ব্লুবেরী ব্যাংকোয়েট হোটেলে মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটির বৈঠকের আয়োজনে ইন্সটিটিউট ফর ডেমোক্রেসি এন্ড হিউম্যান রাইটস আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতা মঈন খান। ‘দি মিলেনিয়াম’ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপারসন, বোর্ড অফ ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট রোকসানা খন্দকারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন মনি, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক মাসুদ কামাল, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে দেশ থেকে স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে বলে মুক্ত পরিবেশে কথা বলতে পারছি। গত দুই মাস আগে ড. ইউনুস বলেছিলেন কমিশনগুলোকে তিন মাস সময় দেয়া হবে। তিনি বলেছেন নির্বাচন ও সংস্কার এক সঙ্গে চলবে। ভিন্নমত সরকারের কানে পৌঁছেছে। তাই তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসেছে। তবে সরকার যে কাজ গুলো করবে, তা দেশের জনগণ সহ রাষ্ট্রের প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের মতামত নিয়ে করতে হবে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, অন্তবর্তীকালীন দুই মাস অনেক সময়। ৯০ দিনের মধ্যে সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন বাংলাদেশের ৫১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। তবে সংস্কার ও নির্বাচন সমান্তরালভাবে চলবে। সমালোচনা রয়েছে, গণতন্ত্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। এই সরকার কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব করতে পারছে।

মঈন খান বলেন, ‘জনগণকে নতুন কোনো শক্ত মেসেজ কি দিতে পারছে গত দুই মাসে? এমন প্রশ্ন সামনে এলেও; সরকারের দুই মাসের ভিতরে অন্ততপক্ষে ১০টি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। সরকারের কাজ মূল্যায়ন করতে হলে বলতে হবে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসের কাজের মূল্যায়ন করা কঠিন। এতে এলোমেলোর মধ্যে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন, যে কোনটা আগে এবং কোনটা পরে ধরবেন। এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে।

রিজভী বলেন, কতজন শহীদ হয়েছেন, কতোজন আহত হয়েছেন তাদের সংখ্য নির্ধারণ করা এবং যে এলোমেলো লুটপাট চলছে তা বন্ধ করা এই মূহুর্তে সবচেয়ে জরুরি। অন্তর্বতী সরকারের ভালো কাজগুলো তুলে ধরে রিজভী বলেন, এই সরকারের সফলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পূর্বাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রনে তাদের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। তবে বিনা পরীক্ষার এইচএসসি পরীক্ষার অটো পাশ করিয়ে দেওয়াটা কোনো ভালো কাজ হয়নি। যেভাবে হোক ছাত্রদের বুঝিয়ে শুনিয়ে হলেও পরীক্ষা নেওয়া দরকার ছিল। পরীক্ষা ছাড়া এই অটোপাশ নেওয়াটা শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক ঘটনা হয়ে থাকলো।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বক জোনায়েদ সাকি বলেন, এতদিনের সংগ্রামের পর যখন একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে, দুই মাসে তাদের কী করার সামর্থ আছে সেটা হিসেব করতে হবে। তাদের সামনে করণীয় কী হবে তা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। এই সরকারকে প্রতিপক্ষ ভাবার সময় কিংবা সুযোগ এখনো আসেনি। তবে সরকারের সমস্ত সংস্কার প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে রাখতে হবে। রাষ্ট্রের সমস্ত স্টেক বোল্ডারদের সঙ্গে অতি দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঠিক করতে হবে। সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে এই দুটো জিনিসকে গুরুত্ব সহকারে পাশাপাশি রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গত দুই মাসে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকার পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছে। ১৫ বছরের যে জঞ্জাল যেখান থেকে মুক্ত হওয়া আসলেই কঠিন।

তিনি বলেন, দুই মাসের মাথায় আমরা বেশি অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি। পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এখনো কোনো স্থিতিশীলতা আসেনি। তবে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে; নির্বাচনই একমাত্র এজেন্ডা নয়। তবে সংস্কার করতে গিয়ে বছরের পর বছর লেগে গেলে সমস্যা। আমাদের মধ্যে যেন কোনো বিভক্তি না আসে, সে জন্য সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে হবে।

(Feed Source: sunnews24x7.com)