চিন্ময় প্রভু সম্পর্কে ইসকন স্পষ্ট করে: আমরা তার থেকে নিজেদের আলাদা করিনি; গতকাল বাংলাদেশ ইসকন বলেছে- চিন্ময়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই

চিন্ময় প্রভু সম্পর্কে ইসকন স্পষ্ট করে: আমরা তার থেকে নিজেদের আলাদা করিনি; গতকাল বাংলাদেশ ইসকন বলেছে- চিন্ময়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন সাবেক চট্টগ্রাম ইসকন প্রধান চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসায়নেস (ইসকন) ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু দাস সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ইসকন শুক্রবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে চিন্ময় প্রভু সংগঠনের আনুষ্ঠানিক সদস্য নন, তবে তারা তার অধিকার এবং স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। সংগঠনটি চিন্ময় প্রভুর থেকে নিজেকে দূরে রাখে নি এবং করবেও না।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেফতার চিন্ময় প্রভু। তাকে গ্রেফতারের পর সারাদেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার জামিনের আবেদন বাতিলের কারণে অনেক জায়গায় সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এর পর বৃহস্পতিবার ইসকন বাংলাদেশ চিন্ময় প্রভুর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়।

ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ইতিমধ্যেই চিন্ময়কে সংগঠনের সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়ার দায়ভার তিনি নেন না। এরপর থেকেই ইসকনের সমালোচনা হচ্ছিল।

চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতারের বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী

চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতারের বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী

চিন্ময় প্রভুর জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে গত ২৬ নভেম্বর, চট্টগ্রামে ইসকন প্রধানের জামিন নামঞ্জুর করা হয়, এরপর সহিংসতায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম প্রাণ হারান। এর পর গত ২৭ নভেম্বর ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশ হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।

আবেদনকারী আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, সাইফুলের মৃত্যুর পেছনে ইসকনের লোকজন রয়েছে। এমতাবস্থায় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা উচিত। এ আবেদনে চট্টগ্রামে জরুরি অবস্থা ঘোষণারও দাবি জানানো হয়। এই আবেদনে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ইসকনকে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ইসকনের ধর্মীয় নেতা ড.

জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন বাংলাদেশ ইসকনের ধর্মীয় নেতা ড.

ঢাকা হাইকোর্ট ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করেছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা হাইকোর্ট কোইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি খারিজ করে দেন। আদালতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ইসকনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। এ বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার।

সরকার বলেছে যে ইসকন মামলায় এ পর্যন্ত 3টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং 33 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশে যে কোনো ধরনের অস্থিরতা এড়াতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

শুনানির সময় আবেদনকারী আইনজীবী বলেন-

উদ্ধৃতি চিত্র

ইসকনকে নিষিদ্ধ করার এটাই সঠিক সময়।

উদ্ধৃতি চিত্র

এ বিষয়ে আদালত বলেন, এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ ইসকনের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কীর্তনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে কলকাতা ইসকন কর্মীরা।

বাংলাদেশ ইসকনের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কীর্তনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে কলকাতা ইসকন কর্মীরা।

দাবি- বাংলাদেশ ইসকন ইস্যুতে মোদি-জয়শঙ্করের বৈঠক মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইসকন ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

একই সময়ে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে তিনি এই বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে আছেন।

শেখ হাসিনাও চিন্ময়ের মুক্তি দাবি করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বৃহস্পতিবার ইসকনের চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, সনাতন ধর্মের একজন বিশিষ্ট নেতাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে একটি মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মসজিদ, গির্জা ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনা সব সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলেছেন। হাসিনার এই বক্তব্যটি তার দল আওয়ামী লীগ এক্স-এ পোস্ট করেছে।

মঙ্গলবার চিন্ময় প্রভুকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

মঙ্গলবার চিন্ময় প্রভুকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

কে চিন্ময় প্রভু, যাকে গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ ভারত? চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আসল নাম চন্দন কুমার ধর। তিনি চট্টগ্রাম ইসকনের প্রধান। বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করেন। এরপর হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে।

এরপর বাংলাদেশী হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সনাতন জাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়। এর মুখপাত্র হন চিন্ময় প্রভু। সনাতন জাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে চিন্ময় চট্টগ্রাম ও রংপুরে বেশ কয়েকটি সমাবেশে বক্তৃতা করেন। এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

কেন গ্রেফতার হলেন চিন্ময় প্রভু? গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবিতে সমাবেশ করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। এতে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। এসময় নিউমার্কেট চকের আজাদী স্তম্ভে কয়েকজন ব্যক্তি জাফরান পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকায় লেখা ছিল ‘আমি সনাতনী’।

সমাবেশ শেষে গত ৩১ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি দলীয় নেতা ফিরোজ খান চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ রয়েছে।

চিন্ময় প্রভু কীভাবে গ্রেফতার হলেন? সোমবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তারা চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইসকন সদস্যরা জানান, ডিবি পুলিশ কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখায়নি। তারা শুধু বলেছে তারা কথা বলতে চায়। পরে তাকে বাসে তুলে নেয় তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, পুলিশের অনুরোধে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চিন্ময় দাসকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী? চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতার করায় ভারত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জারি করা এক বিবৃতিতে বলেছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারে আমরা উদ্বিগ্ন। বিদেশ মন্ত্রক বলেছিল যে এটি দুর্ভাগ্যজনক যে অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে শান্তিপূর্ণ বৈঠকের মাধ্যমে সঠিক দাবি উত্থাপনকারী ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

চিন্ময় প্রভুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভারতের বিবৃতির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট…

  • বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট, দেব-দেবী ও মন্দিরের অপবিত্রতার বহু ঘটনা রয়েছে।
  • দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায়ও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
  • বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত হিন্দু এবং সব সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশও জবাবে বলেছে- তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিছু লোকের দ্বারা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

মন্ত্রক বলেছে যে এই ধরনের বিবৃতিগুলি শুধুমাত্র তথ্যগুলিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে না বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেতনারও পরিপন্থী। বাংলাদেশ সরকার আবারো বলতে চাই যে দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সরকার তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।

(Feed Source: bhaskarhindi.com)