ছাদ ফুটো, ল্যাব খাঁ খাঁ! ইউটিউব চালিয়ে ছাত্র পড়াচ্ছে গর্বের প্রেসিডেন্সি

ছাদ ফুটো, ল্যাব খাঁ খাঁ! ইউটিউব চালিয়ে ছাত্র পড়াচ্ছে গর্বের প্রেসিডেন্সি

কলকাতা: প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা প্রতি বছরই ক্র্যাক করছে জ্যামের মতো বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষা। টেক্কা দিচ্ছে বাংলা তথা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রেসিডেন্সিতেই বেশ কয়েকটি বিষয়ের জন্য ন্যুনতম প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই বলেই অভিযোগ উঠল। সায়েন্সের ল্যাবগুলির হাল বেশ শোচনীয় বলে জানাচ্ছে পড়ুয়ারা। কোনও ল্যাবে দরকারি কেমিক্য়াল নেই, তো কোনও ল্যাবে আবার ছাদ ফুটো। কিছুক্ষেত্রে ল্যাবে নেই সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থাও যার জন্য প্রাণের ঝুঁকিও হতে পারে। এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

ছাদ ফুটো, জলে ভাসছে চত্ত্বর

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার বিল্ডিংয়ে রয়েছে সায়েন্সের মূল বিষয়গুলি। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, লাইফ সায়েন্স, ম্যাথস ও জিওলজি পড়ানো হয় এই বিল্ডিংয়ে। পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক ল্যাবও রয়েছে এই বিল্ডিংয়ে। কিন্তু ল্যাবগুলি বর্তমানে নামকাওয়াস্তে। কারণ সেখানে অভাবই জ্বলজ্বল করছে। লাইফ সায়েন্সের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সমাদৃত মজুমদার HT বাংলাকে জানালেন, ল্যাবের ছাদের শোচনীয় অবস্থার কথা। ‘ল্যাবের ছাদ থেকে বর্ষাকালে অনবরত জল পড়ে। নিচে বালতি না রাখলে ল্যাব ভেসে যেতে বাধ্য। প্রফেসরদের পর্যন্ত এই জল পরিষ্কার করতে হয়।’

ল্যাবজুড়ে প্রকট অভাব

এ তো গেল ছাদের কথা। ল্যাবে হাতেকলমে কোনও পরীক্ষা করতে গেলে প্রয়োজন বিভিন্ন নমুনার। যেমন লাইফ সায়েন্সের পরিচিত দরকারি জিনিসগুলি হল ইঁদুর, ব্যাঙ ও বিভিন্ন সলিউশন। পড়ুয়াদের অভিযোগ ল্যাবে এসব কিছুই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। তাও আবার পড়ুয়াদেরই গাঁটের কড়ি খরচ করে। যেখানে এই সংক্রান্ত সব খরচ বহনের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। সমাদৃতের কথায়, ‘ফান্ডের অভাব কি না সেটা স্পষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষ বলে সরকার টাকা দেয় না। ওদিকে সরকার বলে ওরা টাকা পাঠায়, কোনো বকেয়া নেই। গত বছর প্রেসিডেন্সিতে মাননীয় রাজ্যপাল এসেছিলেন। তিনি ও ডিন অব স্টুডেন্ট পড়ুয়াদের সঙ্গে  কথা বলে অভাব অভিযোগ জানার চেষ্টা করেন। সে সময় এই সব পরিস্থিতির কথাই তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু বছর পার। সুরাহা হয়নি কিছুরই।’

ল্যাবে সবকিছুই বাড়ন্ত (ছবি – পড়ুয়াদের সূত্রে প্রাপ্ত)

সুরক্ষাব্যবস্থা অপর্যাপ্ত

তথৈবচ অবস্থা কেমিস্ট্রি ল্যাবেরও। রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সেখ আরশাদ আলির অভিযোগ, ‘সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে আমাদের ল্যাবে। কোনও কারণে বড়সড় আগুন লাগলে প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে। তার উপর পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন নেই ল্যাবে। কেমিস্ট্রি ল্যাব টপ ফ্লোরে। ভেন্টিলেশন না থাকায় গরমকালে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে বার্নার জ্বালিয়ে কাজ করতে রীতিমতো শরীর খারাপ লাগে। গত বছর ৩ জন এই পরিস্থিতির জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে একজনকে এক সপ্তাহের বিশ্রাম নিতেও বলেছিলেন ডাক্তার। এই সব কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।’

ইউটিউবেই প্র্য়াক্টিক্যাল ক্লাস

কেমিস্ট্রি ল্যাবেও রিএজেন্ট অর্থাৎ হাতেকলমে পরীক্ষা করার জন্য দরকারি কেমিক্যালগুলির অভাব প্রকট। আরশাদ জানাচ্ছেন, ‘অধিকাংশ কেমিক্যালই ল্যাবে নেই। প্রয়োজনীয় সলভেন্ট এবং অ্যাসিড বেস যেমন লিকুইড অ্যানিলিন , পিওর অ্যাসিটোন এগুলিও কেমিস্ট্রি ল্যাবে নেই। এই অবস্থায় সত্যিই কি জটিল সব প্র্যাক্টিক্যাল করা সম্ভব?’ প্রশ্ন পড়ুয়া আরশাদের। আর এসবের কারণেই কি ইউটিউবের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে? আরশাদের কথায় ‘কিছু করার নেই। সবধরনের কেমিক্যাল আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। প্রফেসররাও মাঝে মাঝে অর্থসাহায্য করেন এই ব্যাপারে। কিন্তু কাঁহাতক তা সম্ভব। তাই বেশ কিছু দামি কেমিক্যালের প্র্যাক্টিকাল ইউটিউব দেখেই শিখে নিতে হচ্ছে।’

কী বললেন উপাচার্য?

পড়ুয়াদের অভিযোগ নিয়ে ডিন অব স্টুডেন্টস ও উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় HT বাংলার তরফে। এই বিষয়ে ডিন অব স্টুডেন্টস অরুণকুমার মাইতি জানান, এই বিষয়গুলি তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে। অন্যদিকে উপাচার্য নির্মাল্য নারায়ণ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। বেশ কয়েকবার তাঁর তিনটি নম্বরে ফোন করার পর অপর পাশ থেকে মহিলা কন্ঠ শোনা যায়। তিনি তাঁর স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে জানান ফোন নম্বরটি নির্মাল্য়বাবুর নয় (অথচ উপাচার্যের সিভিতে তিনটি নম্বরই তাঁর বলে উল্লিখিত রয়েছে)। এরপর পড়ুয়াদের অভিযোগ নিয়ে নির্মাল্যবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অন্য পাশের মহিলা কণ্ঠ ‘নম্বর দিতে অপারগ’ বলে ফোন কেটে দেন।

(Feed Source: hindustantimes.com)