সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে বাড়ছে শিশুশ্রম! এডুকো শিশু অধিকার ও কল্যাণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ, বাংলাদেশের শিশু শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ৪.৪ শতাংশ শিশু। যাঁদের মধ্য়ে আবার ৮ শতাংশ শিশু কোনও না কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত!ফলে শিশুদের স্কুলের না যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ৬ গুণ।
ঢাকায় এর অনুষ্ঠানের এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ইনস্পিরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসাল্টিং লিমিটেডের পোর্টফোলিও ম্যানেজার মহম্মদ আদনান রহমান। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে যে শিশুরা শ্রমের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ৯ শতাংশের বেশি শিশুর বয়স ১২ থেকে ১০। ১৪ থেকে ১৭ বছরের ৭.৯ শতাংশ শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। ছেলের থেকে মেয়েদের সংখ্য়া ৩ গুণ বেশি।
কেনই এমন পরিস্থিতি? কীভাবেই-ব শ্রমে যুক্ত হচ্ছে শিশুরা? রিপোর্টে উল্লেখ, পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ পরিবারের মাধ্যমে শ্রমে যুক্ত হয়। দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বা সপ্তাহে ১ হাজার টাকার মতো উপার্জন করে তারা। শুধু তাই নয়, শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার সম্ভাবনা ৬ গুণ বেশি।
স্রেফ শিশু শ্রমই নয়, বাল্যবিবাহের হার অনেকটা বেশি বাংলাদেশ। কত? গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এখনও ৪৯.৬ শতাংশ মেয়েই ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করেছে, ২০২২ সালে যা ছিল ৪০.৯ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৮.২ শতাংশ মেয়ে আবার ১৫ বছরের আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, ধর্মীয় প্রথা, পরিবারের সম্মান, শিক্ষার অভাব। সঙ্গে জাল কাগজপত্রের সাহায্যে গোপন বিয়ের সুযোগও।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ, প্রায় ৬৪.৬ শতাংশ শিশু অভিভাবকদের কাছ থেকে হালকা ও গুরুতর শাস্তির শিকার হয়, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ অন্যতম কারণ। বিশেষ করে এসব শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে। ২০১৩ সালের শিশু আইনে গুরুতর শাস্তি নিষিদ্ধ করলেও হালকা শান্তি কিন্তু নয়। ২০১১ সালের বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের আদেশে স্কুলে শাস্তি কমলেও শিক্ষক- শিক্ষার্থীর মানসিক সংযোগ কম এবং পরামর্শের সুযোগ নেই।
বাদ নেই মাদাসক্তিও। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্তির পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ৯২ হাজার ৯০৯টি মাদক উদ্ধারের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের পথশিশুদের অর্ধেক মাদক সরবরাহ চেইনে যুক্ত এবং ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি মাদক গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত, যা চুরি, হয়রানি, এবং নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়ায়।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যায় না, যা কুসংস্কার, অবকাঠামোগত ঘাটতি এবং অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে ঘটে। যারা স্কুলে ভর্তি হয়, তারা হয়রানি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হয় এবং সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব একটি মূল ভূমিকা পালন করে, যা তাদের ঝরে পরার হারকে বাড়িয়ে দেয়। তাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
(Feed Source: zeenews.com)