#কলকাতা: একেই বলে অসাধ্যসাধন! ১২ দিনের যমজ শিশুর একজনের শরীরে জন্মের পর জোড়া পাকস্থলী। কুড়ি লক্ষ শিশুর মধ্যে একজনের এই অবস্থা হয়। এরপরই জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটিকে সুস্থ করে তুলেছেন কলকাতার চিকিৎসকেরা।
বালিগঞ্জের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আম্পায়ার বিনোদ ঠাকুর। ১০ জুন কলকাতার একবালপুরে সিএমআরআই হাসপাতালে যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী। তার মধ্যে এক শিশুকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুধ খাওয়ালে সে বমি করে ফেলে। চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটির পেটও অস্বাভাবিকরকম ফুলে গিয়েছে। কোনও বড়সড় সমস্যার আশঙ্কা করেন চিকিৎসকেরা। এক্সরে, সিটি স্ক্যান, আপার জি-আই কনট্রাস্ট (খাদ্যনালী থেকে কীভাবে পাকস্থলী পর্যন্ত খাবার যাচ্ছে) পরীক্ষা করে চমকে যান চিকিৎসকরা। শিশুর শরীরে দুটি পাকস্থলীর হদিশ পান তাঁরা। একই দেহে দুটি পাকস্থলী। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা গ্যাস্ট্রিক ডুপ্লিকেশন রোগ। অত্যন্ত বিরল ঘটনা। কুড়ি লক্ষে একজনের শরীরে এটি পাওয়া যায়। শিশুটির শরীরে যে দ্বিতীয় পাকস্থলী পাওয়া গিয়েছে, সেটি সিস্ট হিসেবে ছিল। পাকস্থলীর ভিতরের দেওয়াল না থাকায় যা খাবার যাচ্ছে, তা স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় পাকস্থলীতে চলে যায়। ফলে সেখানে খাবার জমতে থাকে৷ মূল পাকস্থলী যেমন হয়, তার থেকে তিন গুণ ফুলে যায়, এমনকি হাওয়াও ঢুকে যায় সেখানে।
এমনিতেই শিশুটি প্রি ম্যাচিওর শিশু হওয়ায় এবং তার সঙ্গে দুটি পাকস্থলী থাকায় অবিলম্বে অস্ত্রোপচার না করলে জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ত। ফলে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত। জন্মের ৪ দিনের মাথায় শিশুর অস্ত্রোপচার করা হয়। ২ ঘণ্টা ধরে ৩ চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচার করে সিস্টটি কেটে বাদ দেওয়া হয়, পাশাপাশি পাকস্থলীর ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়াল ঠিক করা হয়। এরপর শিশুকে আরও পর্যবেক্ষণের জন্য এনআইসিইউ (নিকু)-তে রাখা হয়। এখন শিশুটি বিপদমুক্ত বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
আর এই ঝুঁকির অস্ত্রোপচার যিনি করেছেন সেই চিকিৎসক বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি তিন বছর আগে এ রাজ্যেরই মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং ক্লিনিক্যাল এসট্যাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন ভুয়ো চিকিৎসক আখ্যা দিয়েছিলেন। জার্মানি থেকে পেডিয়াট্রিক সার্জারি পাস করে আসা বিশ্বজিৎ ভাদুড়ির জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল। তবুও আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করে নিজের কর্ম দক্ষতার সুচারু পরিচয় দিলেন এই শিশু শল্য চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের পর ধরা গলায় ডক্টর বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি বলেন, “আমার জীবনে যে ঝড় বয়ে গিয়েছিল ৩ বছর আগে, তা আমিই জানি। বহু লড়াই করে প্রমাণ করতে হয়েছে,যে আমি একজন বৈধ চিকিৎসক। জার্মানি থেকে আরও ভালোভাবে শিশু চিকিৎসার জন্য ডিগ্রি অর্জন করে এই রাজ্যের কয়েকজন রাজনৈতিক দলদাস চিকিৎসক যেভাবে আমার ডিগ্রির বৈধতা বাতিল করে দিয়েছিল, তা আমার কাছে এখনও আশ্চর্যের। তবে এই শিশুটির যে শারীরিক গঠন, দুটি পাকস্থলী নিয়ে জন্মানো এই রকম শিশুর অস্ত্রোপচার আমার জীবনে প্রথম। শিশুটিকে সুস্থ করে তোলাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।” শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর সৌগত আচার্য্য, রেডিওলজিস্ট ড. অভীক ভট্টাচার্য এই গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় ছিলেন।