
নয়াদিল্লি: মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামবে ঠিক নেই। বিধ্বংসী ভূমিকম্পে এই মুহূর্তে ছারখার অবস্থা মায়ানমারের। শুক্রবার তীব্র ভূমিকম্পে দুলে ওঠার পর আছড়ে পড়ে আফটার শকও। শনিবারও আফটারশক অনুভূত হয়েছে সেখানে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কিন্তু মায়ানমারে এত শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণ কী? (Myanmar Earthquake)
ভূমিকম্পের একাধিক কার্যকারণ রয়েছে। মাটির নীচে চলমান পাতগুলির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে কেঁপে ওঠে মাটি। আবার অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও কম্পনের সৃষ্টি হয়। মায়ানমারে ভূমিকম্পের নেপথ্যে ভূগর্ভস্থ পাতগুলিকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতীয় ও ইউরেশীয় পাতের সংযোগস্থলে অবস্থিত মায়ানমার পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ দেশ হিসেবেই পরিচিত। মায়ানমারের মাটির নীচে ভারতীয় ও ইউরেশী পাতের যে সংযোগস্থল, তাকে বলা হয় সেগাং চ্যুতিরেখা (Sagaing Fault).
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেগাং চ্যুতিরেখা আকারে অতি দীর্ঘ, উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। মান্দালয়, ইয়াংগংয়ের নীচ দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে চ্যুতিরেখাটি। অর্থাৎ মায়ানমারের ভূখণ্ডের নীচে, একেবারে মাঝ বরাবর অবস্থান। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ওই চ্যুতিরেখায় ‘Strike Slip’ ঘটার কারণেই শুক্রবার তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মায়ানমার। ‘Strike Slip’ অর্থাৎ পাশাপাশি দুই পাতের মধ্যে ঘর্ষণ হওয়া। জাপানের Meteorological Agency-ও জানিয়েছে, ভূমির অনুভূমিক স্খলনের জন্যই এত তীব্র কম্পন। (What Caused Myanmar Earthquake)
The Guardian-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এমিরেটাস প্রফেসর বিল ম্যাকগোয়্যার বলেন, ‘সেগাং চ্য়ুতিরেখায় ভূমিকম্প হয়েছে, যার পশ্চিমে ভারতীয় পাত এবং পূর্বে রয়েছে ইউরেশীয় পাত। ইউরেশীয় পাত বরাবর ভারতীয় পাতটি উত্তরের দিকে সচল’। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের টেকটোনিক পাত বিশেষজ্ঞ রেবেকা বেল জানিয়েছেন, এই ধরনের ভূমিকম্পের প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত অুভূত হয়। চ্যুতিরেখা বরাবর অঞ্চল যত বড় হবে, ততই শক্তিশালী হবে কম্পন।
গত কয়েক বছরে এই সেগাং চ্যুতিরেখা বরাবর অঞ্চলে বার বার ভূমিকম্প হয়েছে। ২০১২ সালের ৬.৮ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয় সেখানে, যাতে ২৮ জন মারা যান। শুক্রবারের কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৭। সাম্প্রতিক কালে তুরস্কে এত তীব্র ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে ৭.৮ তীব্রতায় কেঁপে ওঠে তুরস্ক, যার প্রভাব পড়ে পড়শি দেশ তুরস্কতেও। সেখানে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ মারা যান। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১ লক্ষ। শতাধিক মানুষের খোঁজই পাওয়া যায়নি। মায়ানমারে এই ভূমিকম্পের ফলে কম্পন অনুভূত হয়েছে তাইল্যান্ড, চিনেও। এখনও পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
(Feed Source: abplive.com)