ভারতের বিরুদ্ধে স্মরণীয় লড়াই আয়ারল্যান্ডের, রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হার্দিকদের

ভারতের বিরুদ্ধে স্মরণীয় লড়াই আয়ারল্যান্ডের, রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হার্দিকদের

হুডার হান্ড্রেড

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান তুলেছিল। ৫৭ বলে ১০৪ রান করেন দীপক হুডা, ৯টি চার ও ছটি ছক্কার সাহায্যে। সুরেশ রায়না, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলের পর ভারতের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে তিনি টি ২০ আন্তর্জাতিকে শতরান পেলেন। সেই সঙ্গে ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকর যে ৯৯ রান করেছিলেন, এদিন সেই নজির টপকে যান লখনউ সুপার জায়ান্টসের হয়ে আইপিএল খেলা হুডা। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তিনি অপরাজিত ছিলেন ২৯ বলে ৪৭ রান করে। হুডার এই ইনিংস তাঁর টি ২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা যেমন কার্যত সুনিশ্চিত করে দিল, তেমনই চাপ বাড়ল শ্রেয়স আইয়ারের উপর।

সঞ্জুর অর্ধশতরান

ঋতুরাজ গায়কোয়াড় আজকের ম্যাচ খেলতে পারেননি। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়ে ওপেন করতে নেমে সঞ্জু স্যামসন করলেন ৪২ বলে ৭৭। তিনি চার মেরেছেন ৯টি, ছয় চারটি। ২০১৫ সালে টি ২০ আন্তর্জাতিকে অভিষেকের পর আজ স্যামসন ১৪তম ম্যাচটি খেললেন, পেলেন প্রথম অর্ধশতরান। স্যামসন ও হুডা ঝোড়ো ১৭৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন, টি ২০ আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যা ভারতের রেকর্ড। ঈশান কিষাণ ৫ বলে তিন রানের বেশি করতে পারেননি। পাঁচ বলে ১৫ রান করেন সূর্যকুমার যাদব। দীনেশ কার্তিক, অক্ষর প্যাটেল ও হর্ষল প্যাটেল- তিনজনই প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হন। ভারত ২০ ওভারে তোলে ৭ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান। ভারত শেষ পাঁচ ওভারে ৬ উইকেট হারায়, রান ওঠে ৫০।

আক্রমণাত্মক আয়ারল্যান্ড

জবাবে খেলতে নেমে আগ্রাসী মেজাজেই ব্যাটিং শুরু করে আয়ারল্যান্ড। ভারতের স্কোর পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারে যেখানে ছিল ১ উইকেটে ৫৪, আইরিশরা তোলে ১ উইকেটে ৭৩। ভারতের ৫০ ও ১০০ এসেছিল যথাক্রমে ৫.৩ ও ১০.১ ওভারে। আয়ারল্যান্ড সেখান নেয় যথাক্রমে ৩.৫ ওভার ও ৯ ওভার। যদিও ভারতীয় স্পিনাররা আক্রমণে এসে রান তোলার গতিতে রাশ টানেন। ফলে ভারত যেখানে ১৩.৩ ওভারে ১৫০ তুলেছিল, আয়ারল্যান্ডের সেখানে লাগে ১৪.২ ওভার। ৫.৪ ওভারে আয়ারল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ভাঙে ভারত। পাঁচটি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে ১৮ বলে ৪০ রান করে রবি বিষ্ণোইয়ের শিকার হন পল স্টার্লিং। আগের বলেই তাঁকে লেগ বিফোর আউট দেননি আম্পায়ার। ভারত রিভিউ নেয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত বহালই থাকে। যদিও এরপরই আঘাত হানেন বিষ্ণোই। ৬.৩ ওভারে দলের ৭৩ রানের মাথায় আউট হন গ্যারেথ ডেলানি। ৪ বল খেলে কোনও রান না করে হার্দিক পাণ্ডিয়ার থ্রোয় তিনি রান আউট হন।

সমানে সমানে টক্কর

তিনটি চার ও সাতটি ছয়ের সাহায্যে অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি করেন ৩৭ বলে ৬০। ১০.৩ ওভারে ১১৭ রানে তৃতীয় উইকেটটি হারায় আয়ারল্যান্ড। আবেশ খানের জায়গায় এই ম্যাচে খেলা হর্ষল প্যাটেল ফেরান আইরিশ অধিনায়ককে। ১৩.৪ ওভারে টি ২০ আন্তর্জাতিকে প্রথম উইকেটটি পান উমরান মালিক। ৯ বলে ৫ রান করে পরিবর্ত হিসেবে ফিল্ডিং করতে নামা যুজবেন্দ্র চাহালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লরকান টাকার। ১৪২ রানে চতুর্থ উইকেটটি হারানোর পর জর্জ ডকরেল ও হ্যারি টেক্টর দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তবে ফারাক গড়ে মাঝের ওভার। ৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে ভারত তুলেছিল ১২৩ রান, আইরিশরা ৩ উইকেট হারিয়ে ৯২।

উত্তেজক পরিসমাপ্তি

শেষ তিন ওভারে আয়ারল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান। ১৮তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার প্রথম বলেই আউট করেন বিপজ্জনক হ্যারি টেক্টরকে (২৮ বলে ৩৯)। এই ওভারে মাত্র ৭ রান তুলতে সক্ষম হয় আয়ারল্যান্ড। ১৯তম ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারও আগ্রাসী ব্যাটিং করেন, এই ওভারে ওঠে ১৪। ফলে শেষ ওভারে আইরিশদের দরকার হয়ে পড়ে ১৭ রান। উমরান মালিককে শেষ ওভার করতে দেন অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়া। প্রথম বলে কোনও রান না দিলেও পরের বলটি ওভারস্টেপিংয়ের কারণে নো হয়। দ্বিতীয় বল ফ্রি হিট ছিল, সেই বলে চার মারেন অ্যাডায়ার। পরের বলেও বাউন্ডারি হাঁকান। চতুর্থ বলে নেন এক রান। ফলে ২ বলে জিততে দরকার ছিল ৭ রান। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে এক রানের বেশি নিতে পারেননি আইরিশ ব্যাটাররা। উমরান এই ওভারে ১২ রান খরচ করায় ভারত জেতে ৪ রানে। ডকরেল তিনটি করে চার ও ছয় মেরে ১৬ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। অ্যাডায়ার ১২ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

হতশ্রী বোলিং

২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতের বিরুদ্ধে ২৪৫ রান তুলেছিল, ভারত সেই ম্যাচ ১ রানে হেরেছিল। এদিন আয়ারল্যান্ড তুলল ২২১ রান, টি ২০ আন্তর্জাতিকে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও দলের সর্বাধিক স্কোরের তালিকায় এটি রইল দ্বিতীয় স্থানে। ভুবনেশ্বর কুমার ৪ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট। হর্ষল প্যাটেল ৪ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ১টি উইকেট পেয়েছেন। রবি বিষ্ণোই চার ওভারে ৪১ রান দিয়ে এবং উমরান মালিক ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে একটি করে উইকেট দখল করেন। হার্দিক পাণ্ডিয়া ২ ওভারে ১৮ ও অক্ষর প্যাটেল ২ ওভারে ১২ রান দেন, দুজনে কোনও উইকেট না পেলেও পঞ্চম বোলিং অপশন ভাগাভাগি করে নিয়ে চার ওভারে মাত্র ৩০ রান দেওয়াতেই ভারতের জয়ের পথ সুগম হলো।

(Source: oneindia.com)