
নয়াদিল্লি: কথা ছিল ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হবে। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে নিজের শর্ত চাপিয়ে গেলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে শান্তিচুক্তির চেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের দুই শহরের উপর রাশিয়ার কর্তৃত্ব দাবি করেছেন। এতে আপত্তির পরিবর্তে পুতিনের শর্ত মেনে নেওয়া উচিত বলেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ড ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানিয়ে দিলেন ট্রাম্প। কিন্তু পুতিনের দাবি মানতে নারাজ ইউক্রেন। ট্রাম্পের অবস্থানবদল নিয়েও হতাশ তারা। (Donald Trump-Vladimir Putin Meet)
আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা বিশ্বের। কিন্তু যেভাবে ঘটনাক্রম এগোয়, তা আশা করেননি কেউই। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণই করেননি পুতিন। বরং তিনি জানিয়ে দেন, শান্তিপ্রস্তাবে রাজি রাশিয়া। কিন্তু ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক শহর দু’টি ছেড়ে দিতে হবে ইউক্রেনকে। লুহানস্কের সিংহভাগ এমনিতেই রাশিয়ার দখলে রয়েছে। কিন্তু ডনেৎস্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে রয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা। সেখানকার ক্রামাটর্স্ক এবং স্লোভিয়ানস্ক এই মুহূর্তে দুর্গে পরিণত হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধের বলি হয়েছেন ইতিমধ্যেই। (Russia vs Ukraine War)
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ডনেৎস্ক এবং লুহানস্কের দখল পেলে, আর এগোবে না রুশ সেনা। দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন এবং জাপোরিঝিয়াতেই থেমে যাবে। ডনেৎস্ক শহরটি শিল্পাঞ্চল। বরাবরই ওই শহরের উপর নজর রাশিয়ার। ২০১৪ সালে প্রথম ডনেৎস্কে প্রবেশ করে রাশিয়া। ইতিমধ্যেই ডনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশ তাদের দখলে। কিন্তু পুরো ডনেৎস্ক কি ছেড়ে দেবেন জেলেনস্কি? উঠছে প্রশ্ন। শনিবারই তিনি জানান, কোনও অঞ্চলের দখল ছাড়বে না ইউক্রেন। জোর জবরদস্তি ইউক্রেন সীমান্তের কোনও পরিবর্তন ঘটানো যাবে না বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউক্রেনও।
কিন্তু পুতিনের প্রস্তাবে তিনি রাজি বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি যুদ্ধবিরতি ছাড়া শান্তিপ্রস্তাবেও সম্মত তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লেখেন, ‘রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষ করতে সরাসরি শান্তিচুক্তিই সবচেয়ে ভাল উপায়। এতে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। সাধারণ যুদ্ধবিরতি নয় যে বহাল থাকবে না’। দ্বিতীয়বার আমেরিকার মসনদে ফেরার পর থেকে বার বার রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধসমাপ্তি চেয়ে সরব হয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাশাপাশি, সহযোগী দেশগুলিকে ‘শুল্ক শাস্তি’ পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ট্রাম্প এখন পুতিনের সুরে গলা মেলাচ্ছেন কেন, উঠছে প্রশ্ন।
পুতিনের মুখোমুখি হওয়ার আগে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির দাবিতে অনড় ছিলেন ট্রাম্প। পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি নাকরে মানবেন না বলে জানান। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকের পরই একেবারে সুর পাল্টে যায় তাঁর। জেলেনস্কির উদ্দেশে বলেন, “আমি ওঁকে বলব, চুক্তিতে রাজি হোন। রাশিয়া বড় দেশ, শক্তিশালী দেশ। ওরা (ইউক্রেন) কিন্তু তা নয়।” যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে শান্তিচুক্তি হলেও, ইউক্রেনের নিরাপত্তার কী হবে, সেই প্রশ্নও ঝুলে রয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার ইউক্রেনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের দাবি তুলেছেন। কিন্তু পুতিন জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবেন না তিনি। তাহলে কি পুতিনের শর্তই মেনে নেবেন ট্রাম্প? উঠছে প্রশ্ন। খোলাখুলিই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলর উল্ফগ্যাং ইশিঙ্গার। তাঁর বক্তব্য, ‘পুতিনের জন্য লাল গালিচা পাতলেন ট্রাম্প। পরিবর্তে কিছু পেলেনই না। যে ভয়টা পেয়েছিলাম, না যুদ্ধবিরতি হল, না হল শান্তি। কোনও অগ্রগতি হল না, ১-০ গোলে জিতলেন পুতিন। কোনও নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপল না। ইউক্রেন কিছু পেল না। ইউরোপের জন্য হতাশা নেমে এল’।
এমন পরিস্থিতিতে সাবধানী পদক্ষেপ করতে হচ্ছে ইউক্রেনকে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। পুতিনের সঙ্গেও দেখা করতে রাজি তিনি। কিন্তু ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক কি ছেড়ে দিতে হবে ইউক্রেনকে? জেলেনস্কি কি সেই প্রস্তাব মানবেন? না কি সাড়ে তিন বছরব্য়াপী যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে? প্রশ্ন সব মহলে।
(Feed Source: abplive.com)
