মরার পরেও মারণ-বিষ ঢালে সাপ! ভেন্টিলেশনে কৃষক, কী উঠে এল অসমের গবেষকদের গবেষণায়

মরার পরেও মারণ-বিষ ঢালে সাপ! ভেন্টিলেশনে কৃষক, কী উঠে এল অসমের গবেষকদের গবেষণায়

নয়াদিল্লি: ‘এক ছোবলে ছবি’ শুধু সিনেমার সংলাপ নয়। এক ছোবলে যে কোনও মানুষকে ‘ছবি’ করে দিতে পারে গোখরোর মতো মহা বিষধর সাপগুলি। তবে শুধুমাত্র জীবিত অবস্থাতেই নয়, মরে গিয়েও মানুষের শরীরে বিষ ঢালতে পারে তারা। গবেষণায় এবার এমনই তথ্য উঠে এল। (Snakebite Research)

Frontiers in Tropical Diseases জার্নালে অসমের গবেষকদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। অসমের গ্রামাঞ্চলের এমন একাধিক ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে তাতে। বলা হয়েছে, মেরে ফেলার পরও সাপের দংশনের শিকার হন বেশ কয়েক জন। (Dead Snakes Bite)

মরণোত্তর ছোবলে মানুষকে মেরে ফেলার এমন নজির এতদিন বিদেশেই ছিল। ব়্যাটলস্নেক এবং ভাইপার্সের মতো বিষধর মরে যাওয়ার পরও তাদের বিষে মানুষ মারা গিয়েছেন সেখানে। কিন্তু অসমেই এবার দেশি সাপের মধ্যে এমন শক্তির প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা।

বিশেষ করে দু’টি সাপের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা, ১) পদ্মগোখরো, ২) কালকেউটে। তেজপুর ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবিন দোলে বলেন, “প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মেরে ফেলার পরও গোখরো এবং কেউটের বিষদাঁত সক্রিয় থাকে, যার মাধ্যমে বিষ ঢালতে পারে তারা। এই ধরনের সাপের ক্ষেত্রে প্রথম এমন তথ্য মিলল।”

বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শিবসাগরে একটি পদ্মগোখরোকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। তার মাথাটিই থেঁতলে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেই মাথা তুলতে গেলে ওই ব্যক্তির বুড়ো আঙুলে বিষ  ঢালে সাপটি। ওই ব্যক্তির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে যদিও। তবে তাঁকে ২০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম দিতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শিবসাগরেই ট্র্যাক্টরের নীচে চাপা পড়ে মারা যায় একটি গোখরো সাপ। দেখতে গেলে কৃষকের পায়ে বিষ ঢুকে যায়। সাপটি মারা গেলেও, তার বিষদাঁতের উপর পা পড়ে ওই কৃষকের পায়ের টিস্যুগুলিতে প্রাণ ছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা চলে তাঁর। 

কামরূপে আবার কৌতূহল থেকে একটি মরা কালকেউটে তুলে আনেন এক গ্রামবাসী। কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ভেন্টিলেটরে রাখতে হয় তাঁকে। পরে যদিও বেঁচে ফিরেছেন।

মরা সাপের দংশনকে গবেষকরা ‘রিফ্লেক্স বাইট’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দাবি, মরে গিয়েও বিষ ঢালতে পারে সাপ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, মারা যাওয়ার পরও কিছু সময়ের জন্য সাপের স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় থাকে। এর ফলে অনিচ্ছাকৃতই নড়াচড়া অব্যাহত থাকে। এর ফলে শরীরে বিষ ঢেলে দেয়।

ডেমো রুরাল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, গবেষণার মূল কারিগর, সুরজিৎ গিরি জানিয়েছেন, এই আবিষ্কার শুধুমাত্র বিজ্ঞানজগতের জন্য়ই মাইলফলক নয়, এতে অসমের গ্রামাঞ্চলের ধৈর্য-সহ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে বিজ্ঞানকে ভরসা করেছেন তাঁরা। ইঞ্জেকশন নিতে ভয় পাননি। ফলে এই গবেষণা চালানো সম্ভব হয়েছে। যে রোগীদের উপর এই গবেষণা চালানো হয়, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। ‘সাপের ডাক্তার’ হিসেবেই এলাকায় জনপ্রিয় সুরজিৎ।

(Feed Source: abplive.com)