উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসা করান! হার্ট অ্যাটাক রুখতে কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসা করান! হার্ট অ্যাটাক রুখতে কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

#কলকাতা: হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেল উভয়েই আচমকা শিয়রে মৃত্যুর সমন নিয়ে আসে। ফলে সময় থাকতেই রোগ নির্ণয় করা গেলে নিরাময় যেমন সহজ হয় তেমনই মৃত্যুর ঘটনাও কমে আসে। এই লক্ষ্য নিয়েই কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ শাখা ‘ডিটেক্ট আর্লি,  ট্রিট আর্লি’ শীর্ষক এক আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিচী ট্রাস্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কুমার রাণা, সোসাইটির অর্গানাইজিং চেয়ারম্যান ডক্টর অঞ্জনলাল দত্ত, আলোচনাচক্রের আয়োজক সচিব ডক্টর অরিজিৎ ঘোষ, সায়েন্টিফিক কমিটির প্রধান ডক্টর লিপিকা অধিকারী। আলোচনায় দেশ বিদেশের প্রায় ২০০ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দেন।

এই আলোচনা চক্রে মূলত ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে হৃদরোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আগে যখন দেহের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রকৃতি ও পরিস্থিতি দেহের বাইরে থেকে সঠিক ভাবে বোঝা যেত না তখন অনুমান নির্ভর করেই চিকিৎসা চলত। ফলে অপারেশনও সম্পূর্ণ কেটে করতে হতো। ক্রমশ এক্স-রে থেকে আল্ট্রা সাউন্ড হয়ে এমআরআই-এর উদ্ভাবনের ফলে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে।

সেভাবেই হৃদযন্ত্র ও তৎসংলগ্ন অঙ্গ যথা ধমনীর ইমেজিং বা দেহের বাইরে থেকে পরিচ্ছন্ন দৃশ্য যত অনায়াসে প্রকাশ পাচ্ছে, সেই অনুযায়ী চিকিৎসাও উন্নত হচ্ছে। যত ভাল প্রতিচ্ছবি, তত নিখুঁত চিকিৎসা হচ্ছে, আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের বর্তমান স্থির হওয়া লক্ষ্য। নতুন প্রযুক্তির ইকো পিক্সেল ট্রু থ্রি ডি, হৃদযন্ত্র ও ধমনীর ত্রিমাত্রিক ছবি প্রকাশ করতে সক্ষম। ফলে সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োগ অনেক সরল হয়েছে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অরিজিৎ ঘোষ বলেন, “হার্টের চিকিৎসা নিখুঁত ও রোগীর সার্বিক শারীরিক নিরাপত্তা রক্ষা করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। ফলে ওসিটি, আইভিইউএস, থ্রি ডি ইকোকার্ডিওগ্রাফির মতো নতুন প্রযুক্তি জটির প্রক্রিয়াকেও সহজ করে দিচ্ছে। ক্রমেই এই সব প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সুস্থ সমাজের লক্ষ্যে তাই কার্ডিয়াক ইমেজিং এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষ আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসময়ে প্রয়াত করেছেন। হৃদরোগের উপসর্গ আগে থেকেই অনুধাবন করতে পারলে সময়ে যেমন ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়, তেমনই মৃত্যুর ঘটনাকেও এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে। কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য শাখা ১৯৬০-এ স্থাপিত হয়, যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা। সেই লক্ষ্যেই দু’দিনের এই পূর্বাঞ্চলীয় ইকো ইমেজিং কনফারেন্স আয়োজিত হয়েছে। যাতে আগেই থেকেই হৃদরোগ নির্ণয় করা যায় তার জন্য যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফির মতো নন ইনভেসিভ অর্থাৎ দেহের কোষ না কেটে পরীক্ষা করে কার্ডিওভাসকুলার অসুখ খুঁজে বার করা যায় তাতেই জোর দিয়ে আলোচনা হয়েছে এই সম্মেলনে।

আগে থেকেই সঠিক পন্থায় হৃদরোগ নির্ণয় করার এই প্রযুক্তি যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে অনেক আগেই জটিল পরিস্থিতি আঁচ করা সম্ভব। জন্মগত হৃদরোগও আগে থেকেই নির্ণয় হলে অপারেশনের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অঞ্জন লাল দত্ত বলেন, “বাইপাস সার্জারি বা হার্টের ভালভ বদল করার মতো জটিল অপারেশনের প্রয়োজনও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে আগাম বুঝে নিতে পারি আমরা, আর চিকিৎসাও হয় যথাযথ।”

এই সম্মেলনে ইন্ট্রা-ভাসকুলার আল্ট্রা সাউন্ড থেকে বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। যা আগাম হৃদরোগের বার্তা দিতে সক্ষম। ফলে রোগ নিরাময়ের চাইতেও রোগ প্রতিরোধ করা বেশ সহজ হয়ে যায়। ডক্টর লিপিকা অধিকারী বলেন, “সঠিক কার্ডিও ভাসকুলার ইমেজিং হৃদযন্ত্রের যথাযথ চিত্র যেমন তুলে ধরে, তেমনই ঠিক কোন অসুখের জন্য কোন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে হবে তার আন্দাজও দেয়। যা আগাম সতর্ক করে হৃদরোগ বিষয়ে। সেই দিক থেকে এই সম্মেলন আমাদের জন্য ইতিবাচক বেশ কিছু সম্ভাবনার দরজা খুলে দিল।”

Published by:Swaralipi Dasgupta

(Source: news18.com)