
World’s First Transatlantic Surgery: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের ডাক্তাররা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। প্রায় ৬,৪০০ কিলোমিটার দূরে বসে তারা একটি রোবট ব্যবহার করে মানুষের শরীরে দূরবর্তী অস্ত্রোপচার করেছেন।
কলকাতাঃ একসময় মানুষকে ওষুধের জন্য বারবার হাসপাতালে যেতে হত। তারপর, ডিজিটাল যুগ এসে গেল, এবং শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডাক্তাররা অনলাইনে রোগীদের পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। আজকাল, মানুষ ঘরে বসেই চিকিৎসকের সঙ্গে চ্যাট করে ছোটখাটো সমস্যার জন্য প্রেসক্রিপশন পেতে পারে। এবারে দূর থেকে অস্ত্রোপচারও করা হবে, যার ফলে অস্ত্রোপচারের জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এটা শুনে আপনি অবাক হতেই পারে, কিন্তু এটা একেবারেই সত্য। বিশ্বে প্রথমবারের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের চিকিৎসকরা যৌথভাবে একটি অস্ত্রোপচারের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বড় পর্যায় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, একজন আমেরিকান সার্জন আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে প্রায় ৬,৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। স্কটল্যান্ডের ডান্ডির একটি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথমে, সেখানকার ডাক্তাররা একটি রোবট ব্যবহার করে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধা অপসারণের পদ্ধতি সম্পাদন করেন। কয়েক ঘন্টা পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত ডাঃ রিকার্ডো হ্যানেল রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে একই অস্ত্রোপচার করেন। তিনি স্কটল্যান্ডের ৬,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি দেহে অস্ত্রোপচার করেছিলেন। ডঃ হ্যানেল এই প্রযুক্তিকে মানব ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আইরিস গ্রুনওয়াল্ড এবং একটি আমেরিকান দলের নেতৃত্বে এই পরীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এই অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত রোবোটিক প্রযুক্তিটি লিথুয়ানিয়ান কোম্পানি সেন্টান্ট দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। অধ্যাপক গ্রুনওয়াল্ড বলেন, “পূর্বে, এটি কল্পকাহিনীর মতো মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন আমরা প্রমাণ করেছি এই প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে।” বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এই প্রযুক্তি স্ট্রোক রোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী প্রমাণিত হতে পারে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি সেকেন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী রোগীরা প্রায়শই সময়মত চিকিৎসা পেতে অক্ষম হন। এই প্রযুক্তি যে কোনও সার্জনকে দূর থেকে থ্রম্বেক্টমি সার্জারি বা রক্ত জমাট বাঁধা অপসারণ করতে সাহায্য করবে, যা সম্ভাব্যভাবে অসংখ্য জীবন বাঁচাবে।
এই পরীক্ষাটি মানবদেহে একটি প্রদর্শনী হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন শীঘ্রই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। যদি এই পরীক্ষাগুলি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন হাসপাতালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কার্যকর হতে পারে যেখানে অভিজ্ঞ নিউরোসার্জন পাওয়া যায় না। অধ্যাপক গ্রুনওয়াল্ডের মতে, এই অভিজ্ঞতার সবচেয়ে বিশেষ দিক ছিল এটি ঠিক একটি সাধারণ অস্ত্রোপচারের মতো অনুভূত হয়েছিল। মনে হচ্ছিল রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্রোপচার করছি। ডঃ হ্যানেল বলেন, এত দূর থেকে কাজ করা সত্ত্বেও, কেবলমাত্র ১২০ মিলিসেকেন্ডের প্রযুক্তিগত ব্যবধান ছিল, যা চোখের পলকের সমতুল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি আগামী বছরগুলিতে টেলি-নিউরোইন্টারভেনশনের ভবিষ্যতকে বদলে দিতে পারে, যার ফলে বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে।
