
নয়াদিল্লি: দিনে দুপুরে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল নাইজিরিয়ায়। বেসরকারি ক্যাথলিক স্কুল থেকে ৩০০-র বেশি পড়ুয়াকে অপহরণ করে নিয়ে গেল সশস্ত্র দস্যুরা। গত কয়েক মাস ধরে বার বার নাইজিরিয়া থেকে অশান্তির খবর সামনে আসছে। সেই আবহে এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকাও। গণহারে অপহরণ, হামলার খবর উঠে আসছে সেখান থেকে। সেই আবহে নতুন সংযোজন এত সংখ্যক পড়ুয়াকে অপহরণের ঘটনা। (Nigeria Mass Kidnapping)
নর্থ-সেন্ট্রাল নাইজিরিয়ার নাইজা স্টেট থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছ। ক্রিশ্চান অ্যাসোসিয়েশন অফ নাইজিরিয়ার তরফে জানানো হয়, শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে। ৩০৩ জন পড়ুয়া এবং ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অপহরণ করে সশস্ত্র দস্যুদের দল। ১০ বছর বয়সি শিশুদেরও অপহরণ করা হয়। কোনও ক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে কয়েক জন পড়ুয়া ফিরে আসে। বাকিদের কী অবস্থা, জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। (Nigeria Mass Killing)
যে সেন্ট মেরি’জ স্কুল থেকে পড়ুয়াদের অপহরণ করা হয়, সেখানে গিয়ে অপহৃত পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করেন রেভারেন্ড দউয়া ইয়োহানা। তিনি জানান, হামলার সময় আরও ৮৮ পড়ুয়াকে অপহরণ করা হয়। তারা পালানোর চেষ্টা করছিল। অপহৃত পড়ুয়াদের মধ্যে ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সি ছেলে-মেয়ে দুই-ই রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর নাইজিরিয়ার উত্তরের সরকারি স্কুলগুলি সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
নাইজিরিয়ার রাজধানী আবুজার একেবারে গা ঘেঁষে অবস্থান নাইজা। চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই কোয়ারায় একই কায়দায় হামলার ঘটনা ঘটে। সেবার গির্জায় হামলা হয়। কমপক্ষে দু’জনের মৃত্যু হয়। গির্জায় জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ থেকে পাদরি, অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সশস্ত্র দস্যুরা। পাশাপাশি, উত্তর-পশ্চিমের কেব্বিতে মেয়েদের বোর্ডিং স্কুলে ঢুকে ২৫ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালকে গুলি করে হত্যা করে তারা। নাইজিরিয়ার জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর এজে গ্লোরিয়া চিদিনমা-র ছোট বোন ওই স্কুলেরই ছাত্রী। সে পালিয়ে বেঁচেছে কোনও ক্রমে। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। লোকালয়ে ঢুকে যখন তখন হামলা চালাচ্ছে তারা, দলে দলে মানুষজনকে অপহরণের পাশাপাশি, হত্যার ঘটনা ঘটছে লাগাতার। অপহরণের পর মোটা টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোনও আসছে।
নাইজিরিয়ায় সশস্ত্র দস্যুদের হামলা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি, ধর্মীয় কারণে হামলা, সাম্প্রদায়িক হিংসাও ছড়াচ্ছে উত্তরোত্তর। আবার কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যেও বিবাদের ঘটনা সামনে এসেছে জমি ও জলের অধিকার নিয়ে। সম্প্রতি এ নিয়ে সরব হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। নাইজিরিয়ায় ইসলামি উগ্রপন্থীরা খ্রিস্টানদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। খ্রিস্টানদের রক্ষা করতে সামরিক পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। চলতি মাসে নাইজিরিয়াকে তিনি ‘বিপজ্জনক দেশ’ বলেও অভিহিত করেন।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন যদিও আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের মতে, খ্রিস্টান এবং মুসলিম, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই লাগাতার হামলার শিকার হচ্ছেন। চরমপন্থী ইসলামি শক্তি এই হামলা চালাচ্ছে। অগাস্ট মাসে উত্তর-পশ্চিমের কাতসিনার মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায় সশস্ত্র দস্যুরা। মসজিদে আগুনও লাগিয়ে দেয় তারা, যাতে কমপক্ষে ৫০ জন মারা যান। নাইজিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা Bulama Bukarti CNN-কে জানিয়েছেন, চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি অনেক খ্রিস্টানকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মুসলিমকেও হত্যা করেছে তারা। এখন যে হত্যাকাণ্ড, অপহরণ চলছে, তার সময়কাল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারণ নাইজিরিয়া থেকে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন পৌঁছেছে। খ্রিস্টানদের উপর হামলা নিয়ে সেখানে আলোচনা চলছে। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এই সময়ই পর পর হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলেও মত অনেকের।
(Feed Source: abplive.com)
