বিহারে জামাইয়ের হাতে খুন হয়েছিলেন নাবালিকা মেয়ে। অথচ মৃতদেহ পাওয়া তো দূরের কথা তা বাবা-মাকে দেখানোই হয়নি। মেয়ের মৃতদেহ দেখতে চেয়ে প্রশাসনের একাধিক দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন বাবা। তারপরেও কোনো সুরাহা মেলেনি। তাই মেয়েকে দেখতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন সোনারপুরের বাসিন্দা বাবা বিশু মণ্ডল। আজ সেই মামলার শুনানিতে পুলিশের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, বিশু মণ্ডলের নাবালিকা মেয়ে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর তিনি জানতে পারেন সাগর ঘোষ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। যদিও বিয়ে আদৌ হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল বিশু মণ্ডলের। পরে অবশ্য তিনি তা মেনেও নিয়েছিলেন। বিয়ের পর সংসার চালাতে না পেরে একসময় মেয়ে এবং জামাই বিশু মণ্ডলের কাছে চলে যায়। এরপরে মেয়ে এবং জামাই তার কাছেই থাকতে শুরু করে। কাজের জন্য মেয়ের শাশুড়ি শ্রাবন্তী ঘোষ এবং এক পরিচিত মহিলা মামনি সেন তাদের বিহারে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানায়। তাতে রাজি হয়নি বিশু। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে মেয়ে, জামাই এবং তার পরিবারের সদস্যদের আর খুঁজে পাননি বিশু। মেয়ের সন্ধানে সোনারপুর থানা থেকে শুরু করে বারুইপুর এসপি অফিস, লালবাজারে একের পর এক ঘুরে বেড়ান বাবা। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাননি।
সোনারপুর থানা থেকে শুরু করে একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিহার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। কিন্তু, মেয়ের কোনও সন্ধান পাননি। এরপর ১৪ জুন বাবা লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন, মেয়ে যদি জীবিত থাকে তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যদি মৃত হয়ে থাকে তাহলে তাকে দেখার সুযোগ করে দিতে হবে বা মৃতদেহ দিতে হবে। এর জন্য তিনি সোনারপুর থানা থেকে শুরু করে এসপি, ডিআইজি (সিআইডি), রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং নবান্নে চিঠি পাঠান। সুরাহা না মেলায় ২৯ জুন তিনি কলকাতা হাইকোর্টে একটি হেভিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করেন।
আজ বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি ছিল। সরকারি কৌঁসুলি জানান, মৌখিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে যে বিহারে ওই নাবালিকা মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বিহার পুলিশ সেই মামলার তদন্ত শুরু করেছে। আবেদনকারীর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরীর যুক্তি, ‘মেয়ে যদি খুন হয়ে থাকে তাহলে মৃতদেহটি দেখার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার রয়েছে মা এবং বাবার। আর যদি বেঁচে থাকে সেক্ষেত্রেও বাবা মায়ের দেখার অধিকার রয়েছে। কোনও রাজ্যের পুলিশ সেই অধিকার খর্ব করতে পারে না।’ দুপক্ষের শুনানির শেষে বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, যদি সত্যিই ওই নাবালিকার মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তার বাবা-মাকে মৃতদেহ দেখানোর বিষয়ে পুলিশ বা সরকারপক্ষ কী পদক্ষেপ করেছে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
(Source: hindustantimes.com)