#কলকাতা: ৮ বছরের পুরনো সম্পর্ক ভেঙে চুরমার। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মোটা অঙ্কের বেতন। অর্থের অভাব তেমন কিছুই নেই। অয়ন ও বেলা জুটির (বদলে দেওয়া নাম) পথ চলা শুরু ৮ বছর আগে। অয়ন এমটেক, সরকারি চাকুরে। বেলা আইটি ইঞ্জিনিয়ার। সল্টলেক তথ্যতালুকে সুচাকুরে। আনুষ্ঠানিক ভাবে গাঁটছড়া বাঁধা। তবে সস্পর্ক ৩ মাসের। দাম্পত্য জীবন জমিয়ে শুরুর আগেই ছন্দপতন। কিছু ভুলবোঝাবুঝি থেকে সম্পর্কে চিড়।
সংসার না করেই নিজের বাড়ি ফিরে আসে বেলা। এরপর সব চুপচাপ। প্রায় ৭.৫ বছর পর অয়নের বিরুদ্ধে গার্হস্থ আইনে মামলা ঠোকেন বেলা। অভিযোগ বিয়ের সোনা সহ কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী ফেরাননি অয়ন। গ্রেফতারের আশঙ্কা করেন অয়ন। ছোটেন কোলকাতা হাইকোর্টে। এফআইআর খারিজ চেয়ে মামলা করেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ বেঞ্চে৷ সেই মামলাতেই অয়ন ও বেলা, দুজনকেই নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠান বিচারপতি।
হাইকোর্টের নতুন ভবনের ২০১ নম্বর রুমে বিচারপতি চন্দ চেম্বার। সেখানেই দুজনের মতামত জানতে চান বিচারপতি। বিচারপতি বলেন, ডাকার কারণ আপনাদের সম্পর্কে মিলমিশ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
বিচারপতির প্রশ্ন, “অয়ন বাবু আপনি সোনা অলংকার ফেরাননি কেন? দিয়ে দিন ওনাকে।” অয়নের উত্তর. “জজসাহেব, পুরোটা সত্যি নয়।” বিচারপতি পাল্টা বলেন দুজনকেই, “চেষ্টা করুন না আবারও একসঙ্গে থাকতে। আপনারা শিক্ষিত, রুচিশীল, স্ব-রোজগেরে। অয়ন ও বেলা, আপনারা যদি চান আমি একটু চেষ্টা করতে পারি।”
এই সময় অয়ন সটান বিচারপতি চন্দকে বলে বসেন, “আমি তো চাই বেলা ফিরে আসুক। ও ফিরে এলে আবারও জমিয়ে সংসার করতে পারি আমরা।” বিচারপতির উদ্যোগে লাজুক হেসে বেলাও তাঁর সম্মতি দিয়ে বসেন।
দুজনের সংসার জোড়া লাগানোর চেষ্টার সফল করতে বিচারপতি চন্দ নিজের চেম্বার জুনিয়রকে বলেন ভাল থাকার জায়গা খুঁজতে। মুহূর্তে তা জোগাড় হয়ে যায়। নিউটাউন ইকো পার্ক সংলগ্ন একটি বাড়ি বুকিং ব্যবস্থা করে দেন খোদ বিচারপতি। বিচারপতি কৌশিক চন্দ পরামর্শ মেনে আপাতত ২ রাত ইকো পার্কে কাটাবেন অয়ন-বেলা। প্রতিদিন ১০০০০ টাকা বাড়ি ভাড়ায় থাকবেন দুজনে। ২০০০০ টাকা বাড়িভাড়া ও সঙ্গে অন্যান্য খরচ করতে রাজি অয়ন।
সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার ইকো পার্ক যাচ্ছেন অয়ন-বেলা। দুজনের সম্পর্ক জুড়ে গেলে আর মামলারই কোনও প্রয়োজন পড়বে না। বিচারপতি কৌশিক চন্দ ৮ বছরের পুরোনো সম্পর্ক জোড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। আদালতের আশীর্বাদ বর্ষণে সম্পূর্ণতা পাক অয়ন-বেলা’র গাঁটছড়া।