দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, চরম দুশ্চিন্তায় কলকাতায় পড়তে আসা শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা

দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, চরম দুশ্চিন্তায় কলকাতায় পড়তে আসা শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা

অনির্বাণ বিশ্বাস ও হিন্দোল দে, কলকাতা : দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। এই অবস্থায় চরম দুশ্চিন্তায় কলকাতায় পড়তে আসা শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা (Sri Lankan Students)। কী বলছেন তাঁরা ? অন্যদিকে আর্থিক সমস্যায় (Financial Crisis) জেরবার সুন্দর এই দ্বীপরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এরকমটা কেন হল ? এর থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ই বা কী ? এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত কী ?

শ্রীলঙ্কায় গণবিদ্রোহ। আর তাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ চেহারা নিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে চরম উত্‍কণ্ঠায় রয়েছেন পড়াশোনার জন্য ভারতে আসা শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা। শ্রীলঙ্কার আম্পারা জেলার বাসিন্দা পাও জাঠান। ২০১৬ সালে ডাক্তারি নিয়ে পড়তে আসেন ভারতে। বর্তমানে দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দেখে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না তিনি। কারণ বাড়িতে বাবা, মা, দুই ভাই-বোন রয়েছে। পাও জাঠান বলেন, পর্যটন নষ্ট হয়ে গেছে। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা একটা সমস্যা। বাড়ি থেকে এখন আসতে বারণ করছে।

একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার আরও এক বাসিন্দা চামারু কাঞ্চনা। বাড়িতে ৫ ভাই ও বামা-মা রয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁর একটাই দাবি, দেশে একটা স্থায়ী সরকার হোক। চামারু কাঞ্চনা বলেন, পরিবারতন্ত্র ছিল বলেই এই জায়গায় দাঁড়িয়েছে। একটা স্থায়ী সরকার দরকার। খাওয়া নেই, বিদ্যুত্‍ নেই। আমি চাই, পরিবার অন্য কোথাও চলে যাক। কিন্তু যেতে পারছে না।

গভীর অর্থ সংকটে পড়েছে দেশ। ৩ মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মূল্যবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অস্বাভাবিক বেড়েছে খাবারের দাম। পেট্রোল পাম্পগুলিতে তেলের হাহাকার। এক লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমাহীন ঋণ নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই অবস্থায় বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার শহরাঞ্চলগুলিতে খাবার, পানীয় জল, ওষুধ, শিশুদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে সাধারণ মানুষের। যদিও বিক্ষোভকারীদের ভূমিকায় দোষ দেখছেন না অনেকেই। শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা ও মহাবোধি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পি. সিওয়ালি থেরা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে কথা হচ্ছে। শহরে খারাপ পরিস্থিতি। গ্যাস নেই। রান্না করতে পারছে না। খাবার নেই, মেডিসিন নেই। ভারত পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞ। মূলত যুবরা কোনও ফিউচার দেখতে না পেয়ে, রাস্তায় নেমেছে।

কেন এই অবস্থা হল শ্রীলঙ্কার ?

কেন এই অবস্থা হল শ্রীলঙ্কার ? এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ই বা কী ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা ? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক কাকলি সেনগুপ্ত বলেন, প্রচুর পরিমাণে দেনা করে ফেলেছে, সার বন্ধের জেরে ক্ষতি। ভারতের ওপর প্রভাব পড়বে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই পরিস্থিতি তৈরির পিছনে মূল কারণ পরিবারতন্ত্র। ম্যানেজমেন্ট ঠিক নেই। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ সঠিক হয়নি। অনিমারী পরিস্থিতি পিছিয়ে দিয়েছে। ৫১ বিলিয়ন ধার ধাক্কা দিয়েছে। প্রচুর রিফিউজি চলে আসতে পারে। তাই সাহায্য করতে হবে। ব্যবসা ধাক্কা খাবে। পাকিস্তান ও চিন চাইবে ভারতকে আটকাতে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।  এদিকে শ্রীলঙ্কায় চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন সনিয়া গান্ধী। এক লিখিত বার্তায় কংগ্রেস সভানেত্রী বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চরম দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। আশা করি শ্রীলঙ্কার মানুষের জন্য পাঠানো সাহায্য জারি রাখবে ভারত সরকার।