Sadhya Roy on Tarun Majumdar: ‘আগে চলে যাওয়ার কথা ছিল আমার, কিন্তু চলে গেলেন মিস্টার মজুমদার’

Sadhya Roy on Tarun Majumdar: ‘আগে চলে যাওয়ার কথা ছিল আমার, কিন্তু চলে গেলেন মিস্টার মজুমদার’

অনসূয়া বন্দ্য়োপাধ্যায়: ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’-এই গানের লাইনই সেদিন বারবার ফিরে ফিরে আসছিল আমার মনে। তরুণ মজুমদারের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন টলিউডের। তাঁর ছবিতে যেমন বারবার পরিবারের বেঁধে বেঁধে থাকার কথা উঠে এসেছে। তেমনভাবেই যেন পুরো টলিউড পরিবার প্রিয় পরিচালকের জন্য হাজির হয়েছিল এক ছাদের তলায়। তাঁর সান্নিধ্যে আসা মানুষেরা যেমন তাঁর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত ভাগ করে নিলেন সকলের সঙ্গে, তেমনই চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন না তাঁর স্ত্রী সন্ধা রায়। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কিংবদন্তি পরিচালককে শ্রদ্ধা জানাতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ এ ‘স্মৃতিটুকু থাক তনুবাবু’ শীর্ষক স্মরণসভায় এসে সন্ধ্য়া রায় তরুণ মজুমদারের স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি বলেন ‘আমি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। চলে যাওয়ার কথা ছিল আমার, কিন্তু মিস্টার মজুমদার চলে গেলেন। আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে ফেরাটা উচিত হল না। চলে গেলে হয়ত তাঁর অবর্তমানে তাঁকে নিয়ে আজ কথা বলতে হত না। আমার তো আজ মঞ্চে দাঁড়ানোর কথা ছিল না।’

৪ জুলাই, সকালে আচমকাই এল খবরটা। তরুণ মজুমদারের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কৃত্রিম উপায় চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা গেল না। এক যুগের অবসান হল। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ছন্দপতন। অফিস থেকে ফোন এল তিনি আর নেই। হাসপাতাল সূত্রে খবর নিশ্চিত। শিল্পীদের প্রতিক্রিয়া নিতে গিয়ে খানিক দুঃসাহসের সঙ্গেই প্রথম ফোনটা করে বসলাম সন্ধ্যা রায়কে। ফোন ধরলেন বাড়ির কেউ, একজন পুরুষের কণ্ঠ। পরিচয় দিতেই ফোনটা সন্ধ্যা রায়কে দিলেন। তাঁর কন্ঠস্বর শুনেই আবার একটু থামলাম। এরপর খবরটা জানালাম তাঁকে, তিনি শুনেই প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলে উঠলেন ‘কী বলছেন? সে কি। আমি তো কিছু জানিই না, আমায় তো কেউই কিছু জানাননি’। ফোনের এপ্রান্তে আমি একেবারে চুপ। ভাবলাম ভুল করলাম না তো ফোন করে। বলেই বসলাম, ও আপনি জানতেন না। আমরা এইমাত্র খবরটা পেলাম। তিনি তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। অঝোরে কেঁদে চলেছেন। একবার বলে উঠলেন ‘ও নেই?’ খানিক ঢোঁক গিলেই বললাম, আপনি তো ঘরে বাইরে বিভিন্ন অবতারে তাঁকে দেখেছেন, শেষ দিনগুলো খুব লড়াই করছিলেন-। তিনি খানিক কথা কেড়ে নিয়েই বললেন-‘আমি জানি, আমি গিয়েছিলাম হাসপাতালে, দেখা করতে পারিনি। ক্রিটিকাল ছিলেন তো, আর কাজের থেকেই বড় কথা তিনি তো আমার স্বামী। সেটা পরের কথা, কিন্তু নেই, একথা বলেনি কেউ, আপনি প্রথম বললেন। আমায় আর কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না, আমি নিজেও অসুস্থ’ এ কথা বলেই আবারও গুমরে কেঁদে উঠলেন তিনি। আমার গলার কাছটায় তখন কি যেন একটা দলা পাকিয়ে এসেছে।

এদিনের সন্ধ্যা রায় সামলে উঠেছেন খানিক। তবে তাও তো শেষ দেখা হল না, এই আক্ষেপ আজীবনের জন্য থেকে গেল। এদিন সন্ধ্যা রায় ছাড়াও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, কোয়েল মল্লিক, শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, অনামিকা সাহা, সৌমিলি, ভাস্বর চট্টোপাধ্য়ায় সহ আরও অনেকে। প্রত্য়েকেই তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের কথা এদিন দর্শকের সামনে মেলে ধরলেন, নিজেদের মনের মণিকোঠায় তুলে রাখলেন সযত্নে। এদিন তাঁর হাসিমুখের ছবি জ্বলজ্বল করছিল সকলের সামনে। এভাবেই সকলকে নিয়ে চলার কথা ছবির মাধ্য়মেও বলতেন শিল্পী। মাটির কাছাকাছি থাকা এই শিল্পীকে উজার করে ভালবাসা দিলেন তাঁর কাছের মানুষেরা। কোথাও যেন ভেসে এল তাঁর ছবিতে ব্যবহৃত কবিগুরুর গানের আরও দুটো লাইন।

নতুন নামে ডাকবে মোরে,বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।

(Source: zeenews.com)