#কলকাতা: স্বভাবে শান্ত। পাড়াতেও বিবাদ নেই। সকলের সামনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চটি ছুড়ে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন গৃহবধূ শুভ্রা ঘড়ুই। দাঁতের যন্ত্রণায় নিজে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানে কী প্রচণ্ড রাগে এমন পদক্ষেপ শুভ্রার? এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে অবশ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ভয়ে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন শুভ্রা। নিউজ ১৮ বাংলা এদিন শুভ্রা ঘড়ুইয়ের বাড়িতে পৌঁছলে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। শুভ্রার স্বামী সমীর ঘড়ুইয়েরও আর্জি, তাঁদের নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া হোক। মেয়েদের পড়াশোনার জন্য ব্যাপক টাকা পয়সার দুশ্চিন্তায় ইতিমধ্যেই ঘুম ছুটেছে কৃপারামপুর ঘড়ুই পাড়ার বাসিন্দা সমীর ও শুভ্রার। মঙ্গলবার সেই দুশ্চিন্তারই কি ছাপ পড়ল শুভ্রার এই কাজে?
সমীর জানিয়েছেন, তাঁদের দুই মেয়ে সৌমী এবং কণা। বড় মেয়ে সৌমী এবার স্নাতকে ভর্তি হবে। ছোট মেয়ে কণা পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। প্লাইউড কারখানায় কাজ করেন সমীর। মাসে যা আয় তাতে খুব ভালো করে এই বাজারে চারজনের সংসার চালানোই দায়। শুভ্রা নিজে গৃহবধূ। একাদশ শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করেছেন তিনি। মেয়েদের পড়াশোনাতে যেন কোনওভাবেই খামতি না পড়ে এই নিয়ে রাতদিনের দুশ্চিন্তা মায়ের। শুভ্রা ও সমীরের ইচ্ছা, সৌমী নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করুক। কিন্তু বেসরকারি কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, পড়াশোনার যা খরচ তা জোগাড় করা সমীরের পক্ষে দুঃসাধ্য।
শুভ্রার পরিবার জানিয়েছে, বেশ ছোটতেই বিয়ে হয়েছে শুভ্রার। স্নায়ুর রোগে অনেকদিন ধরেই ভুগছেন তিনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দাঁতের যন্ত্রণা দেখা দেওয়াতে ইএসআই হাসপাতালে ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা থাকায় প্রবল ভিড়ে ওষুধ নিতে পারেননি শুভ্রা। সেই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন মন্ত্রী ও শাসক দলের প্রাক্তন মহাসচিব এবং বর্তমানে ইডির হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি লক্ষ্য করে চটি ছুড়ে মারেন তিনি। জুতো ছুড়ে খালি পায়েই নিজের বাড়িতে ফেরত গিয়েছিলেন শুভ্রা।
এই ঘটনার পর সাংবাদিকরা এই আচরণে কারণ জানতে চাইলে রাগে ফুটতে থাকা শুভ্রা ঘড়ুই বলেন, “জুতো মারা উচিত কেন আপনারা জানেন না। কত গরীব মানুষের টাকা মেরে ফ্ল্যাট কিনে রেখে দিয়েছেন, আবার প্রশ্ন করছেন কেন!” সাধারণ মানুষ ওষুধ না পেয়ে পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে অথচ প্রাক্তন মন্ত্রীর এত দুর্নীতির অভিযোগের পরেও এই জন্য নিরাপত্তার বহর দেখে রেগে যান শুভ্রা। যদিও এমন আচরণ এই প্রথম। সমীরের দাবি, শুভ্রা অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করেন। তবে এই ভাবে এই প্রথম। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই পরিবার কোনও ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। শুভ্রার মেয়ে সৌমী জানান, “মা এমন আচরণ কখনও করেন না। আজ কী হল জানি না। তবে আমাদের পড়াশোনা নিয়ে মা খুবই চিন্তায় রয়েছেন।”