‘ফ্ল্যাট তুমি কার?’, একাধিক নাম, কিন্তু আসল মালিক কে? পণ্ডিতিয়ার আবাসনে রহস্য

‘ফ্ল্যাট তুমি কার?’, একাধিক নাম, কিন্তু আসল মালিক কে? পণ্ডিতিয়ার আবাসনে রহস্য

#কলকাতা: ‘ফ্ল্যাট তুমি কার?”, পণ্ডিতিয়ার আবাসন ফোর্ট ওয়েসিস- এর ব্লক ৬-এর ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটটি ঘিরে আপাতত এই একটা প্রশ্নই উঁকি মারছে! ইডি-র দাবি, ফ্ল্যাটটি অর্পিতার বেনামে সম্পত্তি! কিন্তু এই দাবিকে সমর্থন করবে, তেমন কোনও তথ্য-প্রমাণ মেলে নি! প্রাথমিকভাবে অনুমান ছিল, ফ্ল্যাটের মালিকানা রয়েছে জনৈক স্মিতা ঝুনঝুনওয়ালার নামে। খোঁজ চলে স্মিতার। যোগযোগ করার চেষ্টা করা হয় ফোনে, কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি!

পরে দেখা যায়, ওই ফ্ল্যাটের মূল মালিক মৌসুমী ঝুনঝুনওয়ালা। এও জানা যাচ্ছে, ফ্ল্যাটটি কমল ডোরা নামে জনৈক এক ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত। পাশাপাশি এও দেখা যাচ্ছে,  ফ্ল্যাটটি ভিকি অরোরা নামে আরেক ব্যক্তিকে বিক্রি করেছেন কমল। অথচ ভিকি জানেনই না, তাঁর নামে ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার ভিকি অরোরাকে ওই ফ্ল্যাটে বসিয়েই জেরা করেন ইডি আধিকারিকরা। ভিকির বক্তব্য, তিনি এই ফ্ল্যাট কখনওই নিজে থেকে কেনেননি। হয়তো বা, তাঁকে অন্য কোনও বিষয় দেখিয়ে ফ্ল্যাটের কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবার সকালে চাবিওয়ালা নিয়ে পণ্ডিতিয়ার আবাসনে হাজির হয় ইডি। তালা ভেঙে ঢোকার পর দেখা যায়, ফ্ল্যাটে একটি বড় ডাইনিং রুম এবং দুটি বেডরুম রয়েছে। আছে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন। ফ্ল্যাটটির হাল-হকিকত দেখে স্পষ্ট, অন্ততপক্ষে পাঁচ- ছয় মাস ব্যবহার করা হয়নি। ঘরের মেঝে থেকে আরম্ভ করে আসবাবপত্র, সবেতেই ধুলো জমে। ফ্ল্যাট জুড়ে শুরু হয় তল্লাশি, কিন্তু অনেক খুঁজেও সন্দেহজনক কিছুই পাননি ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল  স্থানীয় থানা, ছিল রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ-ও। তাঁদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোন জমা নিয়ে নিয়েছিল ইডি আধিকারিকেরা।

আরও টাকা, আরও সোনা, আরও সম্পত্তি… সেই যে ১৬ জুলাই রাতে কলকাতা শহরে টাকার পাহাড় উদ্ধার হল, তারপর আর থামছেই না! রোজ-ই কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা জায়গা থেকে উদ্ধার হচ্ছে বস্তা-বস্তা টাকা। ইতিমধ্যেই পণ্ডিতিয়ায় এক অভিজাত আবাসনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একটি ফ্ল্যাটের হদিশ পেয়েছে ইডি। গত মঙ্গলবার সেখানে যায় ইডি আধিকারিকরা! কিন্তু ঢুকতে পারেননি, তাই আজ ফের পণ্ডিতিয়া রোডের ফোর্ট ওয়েসিসে হানা দেয় ইডি। সঙ্গে চাবিওয়ালা। আবাসনের ব্লক ৬-এর ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে চলে তল্লাশি।

আজ পুরদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে পণ্ডিতিয়ায় এসেছিল ইডি। সঙ্গে আসা চাবিওয়ালা ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ফ্ল্যাটের দুটি দরজাই ভাঙেন। যে-সে দরজা নয়! এক্কেবারে চিন থেকে আনানো হয়েছে  ব্লক ৬-এর ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটের এই দরজা। চাবিওয়ালা জানান,  বছর দেড়েক আগেই তিনি শুনেছিলেন এই আবাসনে  পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট রয়েছে, তবে কত নম্বর ফ্ল্যাট তা জানতেন না! জানা যাচ্ছে, দরজাটি বানানো হয়েছিল ২০১০ সালে।

শুক্রবার পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে থাকতে হবে ইডি হেফাজতে। তাই বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকেই পার্থ-অর্পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে বলে খবর। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২সালে ১ নভেম্বর খোলা হয়েছিল অপা ইউটিলিটিজ সার্ভিসেস, যেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়-দুজনেরই শেয়ার ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য।

সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে দেখা হচ্ছে। গত ৯ বছরে তারা কী কী কাজ করেছেন এই পার্টনারশিপ, এর মাধ্যমেই চারটি ফ্ল্যাট কেনার হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। নতুন করে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এ বিষয়ে। ইডি মনে করছে, জিজ্ঞাসাবাদে আরও নতুন বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটের হদিশ মিলতে পারে।

ইডি সূত্রে খবর, অপা ইউটিলিটিজ কোম্পানির ডিট দেখে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে এই পার্টনারশিপ কোম্পানি তৈরি হয়েছিল এবং নিয়মিত এই কোম্পানির ব্যালেন্স শিট জমা দিয়ে ইনকাম ট্যাক্স জমা দিত। গত ৯ বছর ধরে কীভাবে কাজ করেছে এই সংস্থা, সেই সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কোম্পানির কথা সামনে আসে ইডি আধিকারিকদের।

Published by:Rukmini Mazumder

(Source: news18.com)