সান নিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে শিশু-কিশোর জটলা করে মুখে পলিথিন লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে। এটা অতি পরিচিত একটি দৃশ্য। আসলে ওরা ড্যান্ডি নামক এক ধরনের মাদক গ্রহণ করছে। প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর এই নেশা করলেও নেই দেখার কেউ। সাধারণ মানুষ তো বটে, এমনকি পুলিশ বক্সের আশেপাশে নেশা করলেও প্রশাসন নির্বিকার!
মাদক বিক্রিতে বিধিনিষেধ না থাকায় খুব সহজে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। মাদকের টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে এ নেশার বিস্তার। এই শিশুরাই কয়েকদিন পর একটু বড় হয়ে, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ে। নেশার টাকা জোগাড়ে ছিনতাই-রাহাজানিতে জড়িয়ে পড়ে।
আর রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে ওসমানী ও সোহরাওয়ার্দীসহ পুরো রাজধানী জুড়েই ড্যান্ডি গ্রহণের দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন উদ্যান, রমনা পার্ক, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, পলাশী মোড়, কমলাপুর রেলস্টেশন, টঙ্গি রেলস্টেশন, হাইকোর্ট মাজার, চাঁনখারপুল, দোয়েল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ঢাকা মেডিক্যাল, গাবতলী, শহীদ মিনার, সদরঘাট ও বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় পথশিশুদের দেখা মেলে বেশি।
নেশাগ্রস্ত শিশু-কিশোরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা জোগাড় করতে পারলেই ড্যান্ডির জোগাড় হয়ে যায়। ভিক্ষা করে, মাল টেনে বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে এই টাকা জোগাড় করে ওরা। তারপরই ড্যান্ডি খায়। এতে আর খাবারের চিন্তা করতে হয় না। প্রতিদিন খাবারের টাকা জোগাড় করার থেকে নেশার টাকা জোগাড় করাই ওদের কাছে সহজ।
তবে সম্প্রতি ডিএমপির আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসাইন বলেন, যখন তারা অপরাধ করে থাকে এই ড্যান্ডিটা গ্রহণ করার জন্য তখন তাদের ধরা হয়।
এদিকে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) মো. মানজুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, লাইসেন্সের প্রক্রিয়া, গাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আনা-নেওয়া এটা একটা দুরূহ ব্যাপার, তারপরও কিন্তু আমাদের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, বিএসএমএমইউয়ের মনরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সালেহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব গণমাধ্যমকে বলেন, এটি গ্রহণ করলে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে একটি হলো তাৎক্ষণিক, আরেকটি হলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করলে মানসিক রোগ হতে পারে। ড্যান্ডি সেবনে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ক্ষতি হয়। হয়ে যেতে পারে পাগলও।
প্রসঙ্গত, ড্যান্ডি হল এক প্রকার গ্লু গাম বা আঠা জাতীয় উদ্বায়ী পদার্থ বা সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই বাষ্পে বা ধূম্রে পরিণত হয়। সাধারণত চার প্রকার জৈব যৌগ যথা- টলুইন, বেনজিন, অ্যাসিটোন ও কার্বন ট্রাই ক্লোরাইড এই গাম জাতীয় পদার্থে বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন প্রকার বাবার ও চামড়া জাতীয় পদার্থ যেমন- জুতা, চাকার রাবার-টিউব প্রভৃতির মেরামতকল্পে সংযোজক কারক হিসেবে এর বহুল ব্যবহার বিদ্যমান। এই প্রকার উদ্বায়ী গাম জাতীয় পদার্থ বাষ্প বা ধূম্রাকারে গন্ধ শুকা বা শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে শ্বসনতন্ত্র হয়ে রক্তের মাধ্যমে মানব মস্কিষ্কে প্রবেশ করে, প্রথমে জাগায় আনন্দের শিহরশ আর অনিয়ন্ত্রিত উম্মাদনা, পরবর্তীতে তাহা দেহে আনে এক শিথীলতার ভাব। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এই পদার্থের অপব্যবহারের ফলে এর প্রতি সৃষ্টি হয় এক চরম আসক্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা ‘গ্লু স্নিফিং’ বা বাংলায় ‘গ্লু গাম শুকা’ নামে পরিচিত। আর সাধারণ মানুষ ও নেশাগ্রস্তদের নিকট ইহা ড্যান্ডি নামে পরিচিত। তালিকাভুক্ত টলুইন মাদক দিয়ে ড্যান্ডি নামক আঠা তৈরি হয়, যা সাধারণত মেলে হার্ডওয়ারের দোকানে। এটি সংগ্রহের নেই কোনো বিধিনিষেধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তররেও নেই কোনো মাথাব্যথা।
সান নিউজ/কেএমএল