শহরে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ, কীভাবে বাঁচবেন এর হাত থেকে? চিকিৎসকের পরামর্শ…

শহরে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ, কীভাবে বাঁচবেন এর হাত থেকে? চিকিৎসকের পরামর্শ…

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শহরে ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ। এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বছর রাজ্যে ৯৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ সহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে রিপোর্টে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার পরে বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা ডেঙ্গু পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে বৈঠক করেন। মশাবাহিত এই রোগে মোট ৬০৪ জন রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা।

কীভাবে হয় এই রোগ

ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিন বিশেশজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন ডেঙ্গি শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক অবধি সকলেরই হতে পারে। এর মূল কারণ মশার কামড়। এর থেকে বাঁচার মূল উপায় হল পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল বাড়ির বাগান। অনেক সময় বাড়িতে ছোট ছোট টবে বাগান করা অনেকের অভ্যাস থাকে। সেই টবে জল জমে, আগাছা থাকে এবং এগুলিকে পরিষ্কার করা হয়না। সেইখানে বাড়তে থাকে মশার লার্ভা।

কীভাবে বংশবৃদ্ধি হয় এই মশার

ডেঙ্গির মশা অর্থাৎ এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য এক ছিপি জলই যথেষ্ট। অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার মশা অর্থাৎ অ্যানোফিলিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য বেশ কিছুটা পরিমাণ জল বেশি প্রয়োজন হয়। এবং সেই কারণেই বর্তমানে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার তুলনায় ডেঙ্গি অনেক বেশি ছড়াচ্ছে। এর কারণ ডেঙ্গির মশার বংশবৃদ্ধি অনেক বেশি দ্রুত এবং কম জলে হতে পারে।

কীভাবে বাঁচবেন এর আক্রমণ থেকে

তিনি আরও জানিয়েছেন ডেঙ্গির আক্রমণ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল আগাছা পরিষ্কার রাখা। এর পাশাপাশি নিজের বাসস্থানের আশেপাশে এবং রাস্তায় যাতে অতিরিক্ত জল না জমে সেই দিকে নজর রাখা। এখন পুজর সময়। প্যান্ডেল তৈরির সময় যেভাবে বাঁশ পোঁতা হয় তাতে সেখানে অনেক জায়গায় গর্ত থাকে এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে সেই গর্তে জল জমা হয়ে মশার বংশবৃদ্ধি হয়।

ডেঙ্গি মশা দিনেরবেলা কামড়ায়। অর্থাৎ দুপুরে অনেক সময় বয়স্ক মানুষ এবং বাচ্চারা বাড়িতে ঘুমায়। তাদের ক্ষেত্রে মশারির ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি আরও জানিয়েছেন যদি কারোর অ্যালার্জি না হয় তাহলে সেইক্ষেত্রে মস্কুইটো রেপেলেন্ট অথবা মস্কুইটো কয়েল ব্যবহারের কথাও জানিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গেই ফুল হাতা জামা এবং ফুল প্যান্ট ব্যবহারের উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।

এই ধরনের বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি তিনি স্প্রে করার কথাও জানিয়েছেন। ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গেই অ্যান্টি লার্ভা অয়েল স্প্রে করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

কীভাবে চিকিৎসা হবে এই রোগের

ডা. বিশ্বাস জানিয়েছেন ডেঙ্গির চিকিৎসা দ্রুততার সঙ্গে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানিয়েছেন প্রথম ৪-৫ দিনের পরে কিছু মানুশ ক্রিটিকাল ফেজে চলে যান এবং অন্যরা রিকভারি ফেজে চলে যান। প্রথম থেকেই তীক্ষ্ণ নজরদারি, টেস্ট এবং প্যারাসিটামলের পাশাপাশি প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডেঙ্গির পরীক্ষা দ্রুত করে চিকিৎসা তাড়াতাড়ি শুরু করলে বেশিরভাগ মানুষ খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

ডা. বিশ্বাস জানিয়েছেন যদি মানুষের প্রেশার কমে, পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে শরীরে পিসিবি ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছে, পেটে ব্যাথা, বমি এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যদি জল জমে তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। এর সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন যে রোগীর কথায় যদি অসংলগ্নতা ধরা পরে তাহলেও সেই রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।