জয়পুর: দলে এক ব্যক্তি এক পদ চালু করার পক্ষে রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। কিন্তু কংগ্রেসের অন্দরেই তা নিয়ে বিরোধিতা। সভাপতি নির্বাচনের আগে সেই অসন্তোষ প্রকট হল (Rajasthan Congress Crisis)। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯০ জনের বিধায়ক ইস্তফা দিতে উদ্যত হয়েছেন। বিধাসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তাঁরা। সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অশোক গহলৌতের (Ashok Gehlot) জায়গায় সচিন পায়লটের (Sachin Pilot) নাম উঠে আসার পরই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন রাজস্থানের কংগ্রেস বিধায়করা।
রাজস্থানে কংগ্রেস ফের সঙ্কটে, ইস্তফা দিতে উদ্যত ৯০ বিধায়ক
ওই ৯০ জন বিদ্রোহী বিধায়ক গহলৌত সমর্থক বলে জানা গিয়েছে। আসন্ন কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে গহলৌত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। কিন্তু রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদ ধরে রেখে সভাপতি পদেও আসীন হওয়া যাবে না বলে রাহুলের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। সে ক্ষেত্রে অশোক কংগ্রেস সভাপতি হলে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্ব সচিনকে দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তাতেই আপত্তি তুলে বিদ্রোহের রাস্তায় হাঁটছেন কংগ্রেস বিধায়করা। সচিনকে মুখ্যমন্ত্রী মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
রবিবার বিধায়ক শান্তি ধরিওয়ালের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠক করেন ওই বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়করা। সেখানে সচিনের বিরুদ্ধে একযোগে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা গিয়েছে। রাজস্থান কংগ্রেস সূত্রে খবর, ২০২০ সালে সচিন খোদ গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিজেপি-র আগ্রাসনের সামনে দলে টালমাটাল অবস্থা তৈরি করেন তিনি। তাই বিদ্রোহীদের যুক্তি, সঙ্কটের সময় যিনি দলের পাশে থাকেননি, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং যাঁরা বিপদে দলের পাশে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই কাউকে বেছে নিতে হবে।
এ দিনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এক নির্দল প্রার্থী। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “বিধায়কদের মতামতের নিরিখে সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে, সরকার চলবে কী করে? সরকার পড়ে যেতে বাধ্য।” এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধেয় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক বসে। সেখানে মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অজয় মাকেন ছিলেন। এ দিন জয়সলমীরেই ছিলেন গহলৌত। জয়পুরে খড়্গে এবং মাকেনের সঙ্গে একদফা মতবিরোধও হয় তাঁর। হোটেলের বৈঠক ছেড়ে বাড়ি রওনা দেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে এ দিন গহলৌত বলেন, “কংগ্রেস সভাপতির উপর দলের নেতাদের আস্থা রয়েছে। আজও তার ঝলক দেখতে পাচ্ছেন আপনারা।” তবে বিক্ষুব্ধদের তাতিয়ে তোলার পিছনে গহলৌতেরই ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। এর আগেও, সচিন এবং তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে তাঁর। নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন সত্ত্বেও সচিনের বদলে গহলৌত নিজের ছেলেকে উত্তরসূরী করতে চাইছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। উপমুখ্যমন্ত্রী সচিনকে না জানিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একাধিক বৈঠকে তাঁকে না ডাকার অভিযোগও ওঠে।
তাতেই কংগ্রেস ছাড়ার উপক্রম করেন সচিন। কিন্তু গাঁধী পরিবার, বিশেষ করে রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সচিন। কোনও রকমে সচিনকে সে যাত্রায় ঠান্ডা করেন তাঁরা। এ বার ফের সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজস্থানের মসনদ থেকে সচিনকে দূরে রাখতে গহলৌত কংগ্রেসের সভাপতি পদ ছাড়তে দু’বার ভাববেন না। কিন্তু এ বার গাঁধী পরিবার এবং কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সমর্থন সচিনের দিকে রয়েছে। তাতেই অনুগামী বিধায়কদের গহলৌত এবং তাঁর লোকজন তাতিয়ে তুলছেন বলে অভিযোগ।
কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে রাজস্থানও! দেখা দিয়েছে আশঙ্কা
উল্লেখ্য, রাজস্থান বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ২০০। এর মধ্যে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১০০। এর পাশাপাশি, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি থেকেও ছয় জন কংগ্রেসের হাত ধরেছেন। কয়েক জন নির্দল প্রার্থীও কংগ্রেস সরকারে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে হলে ১০১টি কমপক্ষে ধরে রাখতে হবে কংগ্রেসকে। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা গণহারে ইস্তফা দিলে আরও একটি রাজ্য কংগ্রেসের হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।