এই মুহূর্তে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে চান? কোথায় করলে আখেরে লাভ হবে, জানুন

এই মুহূর্তে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে চান? কোথায় করলে আখেরে লাভ হবে, জানুন

#নয়াদিল্লি: বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তবে এদেশে এখনও কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের হিসেব বলছে এফআইপি ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গিয়েছে।

সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিকে বিনিয়োগ করার আগে দেখে নিতে হবে ইক্যুইটি বাজারের অস্থিরতা পরিচালনা করার মতো যথেষ্ট ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কিনা। প্রথমবার ইক্যুইটি বিনিয়োগ করতে চাইলে একটি সাধারণ রক্ষণশীল হাইব্রিড ফান্ডে বিনিয়োগ করাই ভাল।

হিসেব বলছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (এফআইপি) চলতি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতীয় ইক্যুইটির প্রায় ৬৫,০০০ কোটি টাকার নেট ক্রয় হয়েছে।

এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ড হল দেশের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক। যা প্রায় ৬.৪৭ ট্রিলিয়ন টাকার সম্পদ পরিচালনা করে৷ এটি একদিকে যেমন খুচরা বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিচালনা করে, তেমনই বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও সুযোগ দিয়ে থাকে।

বিনিয়োগকারী ঠিক কী ভাবে তাঁর ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ বিজনেস অফিসার, ডিপি সিং—

১. ইক্যুইটি বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। বিনিয়োগকারীর কি উচিত অস্থিরতা হ্রাসের জন্য অপেক্ষা করা?

বেঞ্চমার্ক সূচক নিফটি ৫০ এই বছর কিছু হ্রাস দেখেছে, কিন্তু ডুবতে ডুবতেও প্রতিবারই তা নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে। সুতরাং, কোনও কারেকশন হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা যাঁরা সাইডলাইনে অপেক্ষা করছেন তাঁদের উচিত ইক্যুইটি ফান্ডে বরাদ্দ শুরু করা উচিত। বাজারে প্রবেশের জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করার পরিবর্তে, বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে ইক্যুইটি বাজারে থাকার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। বাজারের অস্থিরতা দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে কমে যেতে পারে।

২. বিনিয়োগকারীরা কোন তহবিল বেছে নেবেন?
প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে বিনিয়োগারী ইক্যুইটি বাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত কিনা। একবার এ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেলে, একটি সক্রিয় ভাবে পরিচালিত তহবিল বেছে নেওয়াই সব সময় ভাল। কারণ এটি বিনিয়োগে আলফা তৈরির (বেঞ্চমার্ক রিটার্নের থেকে বেশি রিটার্ন) সম্ভাবনা রাখে।
কোনও তহবিলের শেষ এক বছরের কর্মক্ষমতাই কিন্তু শেষ কথা নয়। কারণ ওই তহবিলটি পরের বছরও যে সেরা পারফর্ম করতে পারবে, তেমন নাও হতে পারে। সুতরাং, একটি বিশ্বস্ত হাউসের এবং একজন বিশ্বাসযোগ্য ফান্ড ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করা উচিত।

৩. বাজার মূল্যায়ন কি ব্যয়বহুল?
মূল্যায়ন বা ভ্যালুয়েশন হল একটি মৌলিক বিষয়, বিনিয়োগকারীর মনোভাব এবং চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভারতে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব খুবই উচ্ছ্বসিত, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে এবং মৌলিক বিষয়গুলি যথেষ্ট ভাল। বিশ্ব নেতারা এই শতাব্দীকে ভারতের বলে দাবি করেছেন।
সরকার দেশীয় ক্যাপেক্স বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছে। সুতরাং, বর্তমান সন্ধিক্ষণ ভারতের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু, কিছু বৈশ্বিক কারণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সুতরাং, একটি রয়ে সয়ে বিনিয়োগ করা দরকার। ধীরে ধীরে নিজের ইক্যুইটি এক্সপোজার তৈরি করতে হবে।
প্রথমবারের ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীরা একটি রক্ষণশীল হাইব্রিড ফান্ড দিয়েই শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ইক্যুইটিতে এবং ৭৫ শতাংশ ঋণে বিনিয়োগ করা হয়। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইক্যুইটির বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে দুই-তিনটি ঝুঁকি রয়েছে—
কিছু ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে। যেমন, যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তা হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি, চিন ও তাইওয়ানের মধ্যে কিছু উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তেলের দাম কমে হয়ে গেছে, এটি অবশ্য ভারতের জন্য সুখবরই।
এছাড়াও, পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার ফলে ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করতে পারছে। চিনের সঙ্গেও পশ্চিমা দেশগুলির সম্পর্কও দুর্বল হয়েছে, যা ভারতের জন্য শুভ বলেই মনে করা হচ্ছে।

৪. ফিক্সড ডিপোজিটের হার বেড়েছে, ব্যাঙ্কগুলি তিন বছরের কম মেয়াদে ৭ শতাংশের উপরে সুদ দিচ্ছে। বিনিয়োগকারী, বিশেষত যাঁরা অবসরের কাছাকাছি, তাঁদের কি এ দিকে নজর দেওয়া উচিত?
স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রে সুদের হার অবশ্যই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, মনে রাখতে হবে এতে আয়কর দিতে হবে। ফলে যাঁদের উচ্চ আয় রয়েছে, তাঁরা সমস্যায় পড়তে পারেন।
এই ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য, ডেট মিউচুয়াল ফান্ডগুলি ভাল হতে পারে। কারণ তাঁরা সূচীকরণের বিকল্পের সঙ্গে আরও ভাল কর-দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভের উপর ২০ শতাংশ করের হার (তিন বছর পরে তোলার জন্য) অফার করে। পোর্টফোলিওতে থাকা বন্ডের সুদের উপর তাঁকে কোনও কর দিতে হবে না।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে, টার্গেট ম্যাচুরিটি ফান্ড ভাল। যে হেতু এগুলি সূচক-ভিত্তিক তহবিল, তাই ব্যয়ের অনুপাত কম। একমাত্র সতর্ক থাকতে হবে, ভাল রিটার্ন পাওয়া জন্য মেয়াদপূর্তী না হওয়া পর্যন্ত টাকা তোলা যাবে না, এ বিষয়ে মন প্রস্তুত রাখতে হবে।

৫. জরুরি অবস্থার জন্য কী করা উচিত?
একটি কন্টিনজেন্সি ফান্ড রাখা দরকার, যা ছয় থেকে বারো মাসের জন্য কোনও ব্যক্তির মৌলিক খরচের দিকটি সামলে দিতে পারে। এটি এমন কোনও জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে যেখানে কোনও অস্থিরতা নেই, যা ওই ব্যক্তি যে কোনও জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রত্যাহার করতে পারেন, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী।
কন্টিনজেন্সি ফান্ড থাকলে এটা খানিকটা নিশ্চিত করা যাবে যে, অপ্রত্যাশিত কোনও আর্থিক জরুরি অবস্থার জন্য বিনিয়োগকারী তাঁর লক্ষ্য-সংযুক্ত বিনিয়োগগুলিতে হাত দিতে বাধ্য হবেন না। তাতে আখেরে লাভ তাঁরই।

৬. আর্থিক পরিকল্পনাকারী বা উপদেষ্টার কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?
একজন আর্থিক পরিকল্পনাকারী থাকা ভাল। যদি কেউ বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগ না করেন তা হলে উপদেষ্ঠার প্রয়োজন নাও হতে পারে। ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি শুধুমাত্র এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করছেন, তিনি নিজেই সবটা সামলে নিতে পারেন।

৭. সম্পদ বরাদ্দের হিসেব কেমন হওয়া উচিত?
নিজের বসত বাড়িকে কখনই বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত নয়।

৮. বিনিয়োগ হিসাবে রিয়েল এস্টেট কেমন?
রিয়েল এস্টেটের চেয়ে আর্থিক সম্পদ বেশি ভাল বলেই মনে করা যেতে পারে। রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ করলে তা মূল বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। যদি কারও মোট সম্পত্তির পরিমাণ তাঁর আয়ের ১০ গুণ হয় শুধুমাত্র তা হলেই রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা উচিত।

৯. বিনিয়োগকারীরা কি আইপিওতে টাকা রাখতে পারেন?
ব্যক্তির সামর্থ্যের উপর এই বিষয়টি নির্ভরশীল। কোনও কোম্পানির বিশ্লেষণের জন্য যে প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় এবং একটি ফান্ড হাউস কোম্পানির ব্যবস্থাপনার যে ধরনের পদক্ষেপ করে তা খুচরা বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে যদি কোনও কোম্পানি সম্পর্কে খুব নিশ্চিত হওয়া যায় এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে ভাল গবেষণা করে দেখা যায়, তা হলে আইপিও প্রক্রিয়ায় নামা যেতে পারে।

(Feed Source: news18.com)