ডিজিটাল রুপি কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এর ফারাক কোথায়? জেনে নিন বিশদে

ডিজিটাল রুপি কী? ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এর ফারাক কোথায়? জেনে নিন বিশদে

#নয়াদিল্লি: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) বা ডিজিটাল রুপি লঞ্চ করতে চলেছে। এখন থেকে রুপি নোটের পাশাপাশি এই ডিজিটাল কারেন্সি দিয়েও লেনদেন করা যাবে। আরবিআই নোটের একটি অতিরিক্ত বিকল্প রাখার জন্য এই কারেন্সি আনতে চলেছে, যা নোটের থেকে খুব একটা আলাদা নয়। এই কারেন্সি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা যাবে, যা লেনদেনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলবে।

ডিজিটাল রুপি হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা স্বীকৃত এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। উল্লেখ্য, আরবিআই ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সমর্থন করেনি এবং এটিকে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যতার একটি চ্যালেঞ্জ বলে দাবি করেছে।ডিজিটাল রুপি ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় অনেক বেশির নিরাপদ হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল রুপির মধ্যে পার্থক্য কী? নিচে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কী?

ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বিকেন্দ্রীকৃত কারেন্সি, যা কোনও সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দ্বারা মনিটর করা হয় না। ব্লকচেন প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন করা হয়।ক্রিপ্টোকারেন্সি বুঝতে গেলে এই তিনটি বিষয় জানা খুবই জরুরি- ব্লকচেন, ডিসেন্ট্রালাইজেশন এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি।ব্লকচেন ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিচালনা করে। এটি একটি ডিজিটাল লেজার, যার অ্যাক্সেস অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের দেওয়া হয় এবং লেনদেন রেকর্ড করে।ডিসেন্ট্রালাইজেশনের অর্থ হল – কোনও সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই লেনদেনের ট্র্যাক বা গতিবিধি মনিটর করতে পারবে না।ক্রিপ্টোগ্রাফি হল গুপ্ত লেখা, যার অর্থ হল প্রাপক শুধুমাত্র বার্তাই পড়তে পারবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বনাম ডিজিটাল রুপি:রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি বিবৃতি অনুযায়ী, “সিবিডিসি হল একটি আইনি টেন্ডার, যা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি একটি ডিজিটাল ফর্মে জারি করে। এটি একটি ফিয়াট মুদ্রার মতোই এবং একই মূল্যের সঙ্গে বিনিময়যোগ্য। এটি শুধু রুপির একটি ভিন্ন রুপ।”তবে সিবিডিসিকে ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে তুলনা করা যাবে না। আরবিআই অনুযায়ী, “ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো সিবিডিসি কোনও কমোডিটি বা ডিজিটাল অ্যাসেট নয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি কারও দ্বারা ইস্যু করা হয় না। ক্রিপ্টো আসলে টাকা নয় এবং এটিকে কারেন্সি বলা যাবে না।”রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে ডিজিটাল কারেন্সি হল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি নোটের মতোই সমমূল্য বহন করে এবং এটি নগদ টাকার সঙ্গে বিনিময়যোগ্য। ডিজিটাল রুপি হল একটি মুদ্রা, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা জারি করা হবে। কিন্তু এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিকেন্দ্রীকৃত সম্পদ হবে না। ডিজিটাল রুপি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি দ্বারা জারি করা মুদ্রা, যা সম্পদ পরিচালনার জন্য দায়ী।ডিজিটাল রুপি একটি আইনি টেন্ডার হবে, যার অর্থ হল যে কেউ এটি যথাযথ মূল্য দিয়ে ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ওয়ালেট, এনইএফটি এবং আইএমপিএস হল ডিজিটাল রুপির কয়েকটি উদাহরণ। অর্থাৎ, যখন আরবিআই ডিজিটাল রুপির প্রচলন শুরু করবে, তখন ভারতের সমস্ত নাগরিক এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

কোন কোন দেশগুলি সিবিডিসি প্রচলনের পরিকল্পনা করছে?গত কয়েক বছরে ডিজিটাল কারেন্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি তাদের ডিজিটাল কারেন্সি প্রচলনের পরিকল্পনা করছে।বাহামা, নাইজেরিয়া, ডোমিনিকা, মন্টসেরাত, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস ইতিমধ্যেই তাদের ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছে। অন্য দিকে আবার, রাশিয়া এবং চিনও সম্প্রতি ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা করছে।

ভারতে কি ডিজিটাল রুপি দরকার?ডিজিটাল রুপির সঙ্গে ভারত ডিজিটাল কারেন্সির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চায়। ডিজিটাল রুপির সুবিধাগুলি হল-ব্লকচেন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল রুপি দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে।ব্লকচেন রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং এবং লেজার রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষম করবে।পাইকারি এবং খুচরো গ্রাহকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা লেনদেন সিস্টেম।ভারতীয় ক্রেতারা মিডলম্যান বা দালাল ছাড়াই অর্থ লেনদেন করতে পারবেন।কম লেনদেন খরচ।রিয়েল-টাইম লেনদেন।ডিজিটাল রুপি দিয়ে লেনদেনের জন্য গ্রাহককে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না।দ্রুত আন্তর্জাতিক লেনদেনেও সুবিধা হবে।

ডিজিটাল রুপির উপর কি ৩০ শতাংশ কর ধার্য করা হবে?রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং লাইটকয়েন জাতীয় সমস্ত ভার্চুয়াল কারেন্সির উপর ৩০ শতাংশ কর ধার্য করে। তবে ডিজিটাল রুপির উপর এই জাতীয় কোনও কর ধার্য করা হবে না, ঠিক যে ভাবে নগদ টাকার উপর কোনও কর ধার্য করা হয় না।

(Feed Source: news18.com)