মেসিতে আস্থা, আর্জেন্তিনীয়রা এখনও নক আউটের স্বপ্ন দেখছেন, দোহায় উপলব্ধি বাঙালি ফুটবলপ্রেমীর

মেসিতে আস্থা, আর্জেন্তিনীয়রা এখনও নক আউটের স্বপ্ন দেখছেন, দোহায় উপলব্ধি বাঙালি ফুটবলপ্রেমীর

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ফুটবল অন্ত প্রাণ তিনি। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে প্রিয় দল মোহনবাগান। পাইকপাড়ার আবির্ভাব বন্দ্যোপাধ্যায়ের শখ, বিশ্বের বিভিন্ন ফুটবল স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাচ দেখা।

মঙ্গলবার লুসেইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্তিনা বনাম সৌদি আরব (Argentina vs Saudi Arabia) ম্যাচ দেখতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন বাঙালি ফুটবলপ্রেমী। আবির্ভাবের আর একটা পরিচয়, তিনি লিওনেল মেসি ও আর্জেন্তিনারও ভক্ত। সৌদি আরবের কাছে প্রিয় দলের অবাক হার দেখে মন খারাপ। তবে ভেঙে পড়ছেন না। কারণ, গোটা আর্জেন্তিনা যে এখনও নক আউটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

বুধবার স্পেন বনাম কোস্তা রিকা ম্যাচ দেখতে গিয়েছেন আবির্ভাব। স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে দোহা থেকে এবিপি লাইভকে বললেন, ‘টুর্নামেন্টে ফেভারিট হিসাবে এসেছিল আর্জেন্তিনা। প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিত হার। প্রথমার্ধে আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিয়ে ওরা কিছুটা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল বলে মনে হয়েছে। হয়তো ভেবেছিল চাইলেই গোল করে দিতে পারবে।’ যোগ করলেন, ‘রক্ষণের ভুলে গোল খেয়েছে বিরতির পরে। প্রথম গোলটা খেয়ে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আর্জেন্তিনা। কয়েকটা গোললাইন সেভ করেন সৌদি আরবের ফুটবলাররা।’

কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছেন মেসি। গোটা বিশ্বের অসংখ্য ভক্ত চেয়ে রয়েছেন প্রিয় নায়কের দিকে। কেমন দেখলেন মেসিকে? আবির্ভাব কিছুটা হতাশ। বলছেন, ‘আমিও মেসির ভক্ত। আর্জেন্তিনার ভক্ত। দল চাপে পড়লে নায়কের কাছ থেকে ভক্তদের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। কিন্তু সেই মারণকামড়টা দিতে পারেননি মেসি। শরীরী ভাষাও ভাল লাগেনি। যেন ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেলেন। ম্যাচের যখন মিনিট পাঁচেক বাকি, একটা গোল হলে একটা পয়েন্ট আসবে, মেসিকে বলের ধারেকাছে দেখিনি। মরিয়া ভাব ছিল না। খেলার পর দ্রুত মাঠ থেকে চেঞ্জরুমে চলে গেলেন।’

আর্জেন্তিনার হারের পর গ্যালারির ছবিটা কীরকম ছিল? ‘খেলা দেখতে আসা আর্জেন্তিনার বেশিরভাগ মানুষই ইংরেজি বুঝছিলেন না। তবে গ্যাব্রিয়েলা বলে এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কতটা আশা দেখছেন। উনি বললেন, এখনও মেসির ওপর বিশ্বাস রয়েছে। ওঁরা পোল্যান্ড-মেক্সিকো ম্যাচের ফল দেখতে দৌড়লেন। পোল্যান্ড-মেক্সিকো ড্র হতে ওঁরা খুশি। ওঁদের বিশ্বাস, পরের দুই ম্যাচ জিতে নক আউটে যাবেন। আর্জেন্তিনার মানুষ এখনও বিশ্বাস করেন, তাঁরা প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছবেন,’ বলছিলেন আবির্ভাব। যোগ করলেন, ‘তবে সৌদি আরবের কাছে হারটা বিরাট ধাক্কা। আর্জেন্তিনার মানুষ খুব যে কষ্ট পেয়েছে বা ভেঙে পড়েছে তা নয়।’

পাইকপাড়ায় বাড়ি। ছোট থেকে মোহনবাগানের পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্টেডিয়ামে যান আবির্ভাব। গত ৬ বছর ধরে কর্মসূত্রে লন্ডনে আছেন স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে। আবির্ভাব বলছেন, ‘আমি প্রথমবার বিশ্বকাপ দেখতে এসেছি। এর আগে লন্ডনে থাকার সুবাদে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইপিএল সবই দেখেছি। তবে ক্লাবের ম্যাচে আলাদা আবহ থাকে। দেশের ম্যাচ অন্যরকম। স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় সব দেশের পতাকা পাওয়া যাচ্ছে। নিখরচায় মুখে রং করানো যাচ্ছে। ভীষণ বর্ণময়। প্রচুর গান। সুর। ড্রামস বাজছে। বিউগল বাজছে। ট্রাম্পেট বাজছে। আরও রকমারি বাদ্যযন্ত্র। মানুষের উল্লাস। স্টেডিয়ামের বাইরেও দারুণ আবহ। লোকে ভাংড়াও নাচছে। এটা উৎসব। কার্নিভাল। ফুটবলের ৯০ মিনিটকে কেন্দ্র করে বিরাট উৎসব।’ যোগ করলেন, ‘গ্য়ালারির ভাষা তো বলে বোঝানো যাবে না। ম্যাচে আর্জেন্তিনা পিছিয়ে রয়েছে, কিন্তু কোনও বৈরিতা দেখিনি। সৌদি আরব পেনাল্টি থেকে গোল খেয়ে যাওয়ার পর আর্জেন্তিনার সমর্থকরা সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলপ্রেমীদের। সৌদির সমর্থকদের সঙ্গে উৎসবও করেছেন আর্জেন্তিনার মানুষ। কলকাতার ময়দানে এসব ছবি ভাবা যায় না।’

(Feed Source: abplive.com)