সিঁধ কেটে প্রথম জেলে যাওয়া, মুক্তি পাচ্ছেন সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ

সিঁধ কেটে প্রথম জেলে যাওয়া, মুক্তি পাচ্ছেন সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ

কাঠমান্ডু: ‘সিরিয়াল কিলার’ শব্দবন্ধের সঙ্গে তখনও সড়গড় হননি উপমহাদেশের মানুষজন। সেই সময়ই গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। সেই চার্লস শোভরাজই এ বার মুক্তি পাচ্ছেন জেল থেকে (Charles Sobhraj)। ৭৮ বছর বয়সি চার্লসকে শারীরিক অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণেই মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিল নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। তবে এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না চার্লস। ২০২৩-এর ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে তাঁকে। নেপালের যাবজ্জীবন সাজা অনুযায়ী ২০ বছর জেলে কাটিয়ে তবেই বেরোতে পারবেন (Nepal SC)।

অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিল নেপালের সুপ্রিম কোর্ট

আদতে ফ্রান্সের নাগরিক, ভিয়েতনামী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত চার্লস সাতের দশকে একাধিক খুন করেন (Serial Killer)। খাতায়-কলমে ২০টি খুনের ঘটনায় মাম জড়িয়েছে তাঁর। এক ফরাসি পর্যটককে বিষপ্রয়োগ করে খুন এবং এক ইজরায়েলি নাগরিককে খুনে আগেই ভারতে ২১ বছরের কারাবাস কাটিয়েছেন তিনি।

হংকং থেকে ভুয়ো পরিচয় বাগিয়ে নেপালে প্রবেশ করেন। কাঠমান্ডুতে একটি ক্যাসিনো থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। তার পর ২০০৩ সাল থেকে সেখানকার জেলে বন্দি রয়েছেন।  সেখানে দুই মার্কিন পর্যটককে খুনে জেল খাটছেন। কিন্তু বুধবার নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্বপ্না প্রধান মাল্লা এবং তিলপ্রসাদ শ্রেষ্ঠর ডিভিশন বেঞ্চ দেশের সরকারকে, চার্লসকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

বার্ধক্যকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে যাবজ্জীবনের সাজা মকুবের আবেদন জানিয়েছিলেন চার্লস। ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আবেদনে। শুধু তাই নয়, এর আগে একটি আবেদনে চার্লস জানান, খুনের দায়ে যতদিন তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তা এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার চেয়ে ঢের বেশি। বার্ধক্যকে ধরলে এতদিন সাজা কাটানোর কথাই নয় তাঁর।

বুধবার তার ভিত্তিতেই চার্লসকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ নেপালের সুপ্রিম কোর্টের। এ দিন আদালত বলে, “একানগাড়ে চার্লস শোভরাজকে জেলে রেখে দেওয়া জেলবন্দি কয়েদির মানবাধিকারেরও পরিপন্থী। জেলে রাখার মতো ওঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা যেখানে ঝুলে নেই, তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক। ১৫ দিনের মধ্যে নিজের দেশে ফিরে যান উনি।”

আগাগোড়াই চার্লসের জীবন ঘটনাবহুল থেকেছে। ভারতীয় বাবা এবং ভিয়েতনামী মা কখনও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। চার্লসের পিতৃত্বও মানতে চাননি তাঁর বাবা। তার জেরে কার্যত দেশহীন হয়েই ছিলেন চার্লস। পরবর্তী কালে তাঁর মায়ের দ্বিতীয় স্বামী তাঁকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু মায়ের নতুন সংসার, পরের সন্তানদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি চার্লস। কার্যত ভবঘুরে অবস্থাতেই শুরু হয় দিনযাপন।

তার জেরে কৈশোরেই অপরাধ জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে চার্লসের। সিঁধ কেটে প্রথম প্য়ারিসের জেলে যান কৈশোরে। আকর্ষক ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়েই চার্লস একের পর এক অপরাধ ঘটাতে সফল হন। ১৯৭৫ সালে পাটায়ায় বিকিনি পরিহিত এক মার্কিন তরুণীর দেহ উদ্ধারে প্রথম চার্লসের খুনি হিসেবে নাম জড়ায়।  জানা যায়, খুনের আগে শিকারকে মারধর করতেন চার্লস। শ্বাসরোধ করে কষ্ট দিতেন, এমনকি পুড়িয়েও দিতেন। যে সমস্ত পুরুষকে খুন করতেন, তাঁদের পাসপোর্ট হাতিয়ে, ভুয়ো পরিচয়েই পরে এই দেশ, ওই দেশ যেতেন।

১৯৭৬ সালে ফরাসি পর্যটককে বিষপ্রয়োগ করে খুনের ঘটনায় দিল্লির হোটেলে গ্রেফতার হন চার্লস। তাতে ১২ বছর জেল হয়। ১৯৮৬ সালে দেল ভেঙে পালাতে গিয়ে গোয়ার উপকূলে ধরা পড়েন। মোট ২১ বছর ভারতের জেলে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে ছাড়া পেয়ে ফিরে যান প্যারিস। ২০০৩ সালে নেপালে উদয় হন। জেলে থাকাকালীনই বয়সে ৪৪ বছরের ছোট নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন চার্লস। নিহিতার বাবা চার্লসেরই আইনজীবী। চার্লসের হয়ে আদালতে অনুবাদের কাজ করতেন নিহিতা। ২০১৭ সালে অস্ত্রোপচারের সময় চার্লসকে রক্তও দেন নিহিতা।

আগাগোড়াই চার্লসের জীবন ঘটনাবহুল থেকেছে

তবে সমাজ-সংসারে শুধুমাত্র খুনি হিসেবে পরিচিত নন চার্লস। আলো-আঁধারির জগতে তাঁর বিচরণ, রঙিন জীবন, ফ্রেঞ্চম্যান ব্যক্তিত্বের জেরে কালক্রমে ‘কাল্ট ফিগার’ করে তোলে তাঁকে।  চার্লসকে নিয়ে একাধিক বই, তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। চলচ্চিত্রেই জায়গা করে নিয়েছে তাঁর জীবন কাহিনি।

(Feed Source: abplive.com)