লাগাতার চরিত্রবদল কোভিডের, তার জেরে উপসর্গেরও রকমফের, ভূরি ভূরি উদাহরণ

লাগাতার চরিত্রবদল কোভিডের, তার জেরে উপসর্গেরও রকমফের, ভূরি ভূরি উদাহরণ

লন্ডন: অতিমারির সঙ্গে কেটে গিয়েছে দু’বছরেরও বেশি সময়। এই মুহূর্তে ভয়াবহতা কমল হলেও, এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি নোভেল করোনাভাইরাস (Novel Coronavirus)। বরং বিশ্ব জুড়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। একই সঙ্গে চরিত্র বদল করে রূপও বদলেছে মারণ ভাইরাস (COVID Mutations)। জ্বর, কাশি, ঘ্রাণশক্তি এবং স্বাদের অনুভূতি লোপ পাওয়াকে সংক্রমণের মূল উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত। সম্প্রতি গলাব্যথা, নাকবন্ধ, নাক দিয়ে জল পড়া এবং মাথাব্যথাকেও করোনার উপসর্গ (COVID Symptoms) বলে চিহ্নিত করেছে ব্রিটেন।

সার্বিক না হলেও, একাধিক ভিন্ন উপসর্গ কোভিডে!

কিন্তু করোনার উপসর্গের তালিকা তাতেই শেষ নয় বলে। বরং অতিমারিতে সংক্রমিতদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্যে আরও গুরুতর কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই উপসর্গগুলি সার্বিক নয়, বরং কিছু মানুষের ক্ষেত্রেই ব্যাতিক্রম দেখা গিয়েছে। জ্বর, সর্দি নয়, করোনা ধরা পড়ার আগে এবং পরে তাঁদের শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে চুলপড়া, ত্বকের উপর ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠা। শরীরে ভাইরাস থাবা বসানোর আগে এবং পরে রোগীর শরীরে আচমকা এই ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায়, করোনার উপসর্গের তালিকা আরও বর্ধিত হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

চর্মরোগ

করোনায় ত্বকের সমস্য়া সংক্রান্ত অভিযোগ একেবারে নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালে ব্রিটেনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়, প্রতি পাঁচ জন করোনা রোগীর মধ্যে একজনের জ্বর-সর্দি কিছুই ছিল না। বরং ত্বকের উপর যত্রতত্র আচমকাই ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠে।

ত্বকের উপর করোনার বিভিন্ন প্রভাব রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, কারও ত্বকে ম্যাকিউলোপাপুলার ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, যার আওতায় ত্বকের কিছুটা অংশ বিবর্ণ হয়ে যায়। তার উপর চ্যাপটা অথবা গুঁড়িগুঁড়ি ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে আমবাতের মতো সমস্যা দেখা দেয়। 

করোনায় পায়ের আঙুলে ফোস্কার মতো দেখতে ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠার উদাহরণও রয়েছে। বিশেষ করে কিশোর বয়সীদের মধ্যে, যাঁরা হয় উপসর্গহীন, নয়ত বা মৃদু উপসর্গের রোগী। কয়েক দিনের মধ্যেই এই উপসর্গ চলে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। চুলকানি, ব্যথার মতো সমস্যায় ভুগতে হতে পারে রোগীকে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মলম লাগাতে পারেন। তবে সাধারণত রোগী সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপসর্গ দূর হয় যায়।

নখের উপর প্রভাব

শরীরে সার্স-কোভ-২ বাধা বাধলে নানা ভাবে জানান দিতে শুরু করে শরীর। অস্বাভাবিক যে বোধ করছেন, নখ দেখেও তা বুঝতে পেরেছিলেন অনেক রোগী। এখনও পর্যন্ত যে যে উদাহরণ সামনে এসেছে, তাতে রোগীর পায়ের নখের উপর অনুভূমিক খাঁজ তৈরি হয়। তাতে নখের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। হাতের নখেও এমন আড়াআড়ি রেখা তৈরি হয়। নখের নীচে অস্বাভাবিক ভাবে প্রোটিন উৎপন্ন হওয়াতেই এমন হয়।

হাতের নখের গোড়ায় যে অর্ধচন্দ্রাকার সাদা অংশ দেখা যায়, তা রক্তাভ রং ধারণ করে। ঠিক কত সংখ্যক মানুষের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা গিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে মোট আক্রান্তের ১-২ শতাংশের মধ্যে এমনটা দেখা গিয়েছে বলে খবর। প্রথম প্রথম ব্যথা বোধ হলেও, পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে ব্যথা চলে যায়। আবার কোভিড ছাড়াও কেমোথেরাপি বা অন্য সংক্রমণেরও ইঙ্গিত বহন করে নখ।

চুলপড়া

কোভিডে চুলপড়ার সমস্যাই সবচেয়ে কম আলোচিত। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই সমস্য়া দেখা গিয়েছে। সংক্রমণ ধরা পড় এক মাস এথবা তারও পর এই সমস্যায় পড়েছেন অনেকে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬ হাজার মানুষ কোভিড পরবর্তী উপসর্গের কথা বলতে গিয়ে চুলপড়ার সমস্যা তুলে ধরেছেন। ভাইরাসের আক্রমণে শরীরের উপর দিয়ে যে ধকল যায়, চুলপড়া তারই ফলশ্রুতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সন্তানপ্রসবের পরও মহিলাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। 

শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া এবং কান ভোঁ ভোঁ করা

অন্য ভাইরাল সংক্রমণের মতো কানের ভিতরের কোষগুলির উপর কোভিডের প্রভাব পড়ে। তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রবণশক্তি এবং সারাক্ষণ কান ভোঁ ভোঁ করার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ৫৬০ জনকে নিয়ে করা একটি সমীক্ষায় ৩.১ শতাংশ রোগী, যাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন, তাঁদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে দেখা যায়। ৪.৫ শতাংশ কান ভোঁ ভোঁ করার কথা জানান। 

অন্য একটি সমীক্ষায় কোভিডের প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা রোগী, আগে যাঁদের শ্রবণশক্তি নিয়ে কোনও রকম সমস্যা ছিল না, তাঁদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার প্রমাণ মেলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা আপনাআপনি কেটে যায়। কিন্তু কোভিডমুক্ত হলেও, শ্রবণশক্তি পুরোপুরি হারানোর নজিরও রয়েছে।

এই ধরনের উপসর্গের নেপথ্য কারণ কী? 

এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে কোনও উত্তর না পাওয়া গেলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ভাইরাস বাসা বাঁধলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়। তার ফলে সাইটোকিন প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায় শরীরে, যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধিতে সহায়ক কোষগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক দিকে, সাইটোকিন প্রোটিনের অতিরিক্ত উৎপাদন এবং সংক্রমণজনিত প্রদাহ, দুইয়ের প্রকোপে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির কার্যক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দেয়। একই সঙ্গে কান, ত্বক এবং নখে রক্ত সঞ্চালনও বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই সংক্রমিত এলাকায় থাকাকালীন এই ধরনের উপসর্গ বা সমস্যা চোখে পড়লে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(Source: indiatv.in)