বাংলাদেশঃ অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু!

বাংলাদেশঃ অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু!

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): ফরিদপুরে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব (২৭) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। রাকিব ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। সে জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বেলজানি গ্রামের শরিফুল ইসলাম মাতব্বরের ছেলে। রাকিব ফরিদপুর পলিটেকনিক কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতো। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাকিব সবার ছোট ছিল।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

অ্যালকোহল বিষক্রিয়ায় সোমবার (০২ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ কোন প্রেসবিজ্ঞপ্তি না দিলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সোমবার (০২ জানুয়ারি) রাতে শোক প্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফের যৌথ স্বাক্ষরিত ওই শোক বার্তায় দাবি করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ২ জানুয়ারি বিকাল আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতারেল ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাকিবুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের এ শোক বার্তার পর বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর শহরে আলোচনা সৃষ্টি হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাকিবকে সোমবার (০২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে ৪২৭৮৩/২৩ সিরিয়ালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার বন্ধু পরিচয়ে আবির নামে এক তরুণ এসে ভর্তি করায়। ভর্তির জায়গায় ‘পুলিশ কেস’ সিল মারা ছিল।

ভর্তি করতে এসে আবির জানায়, বমির প্রবণতা থাকায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে। ওই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি এক নারী জানায়, ভর্তি হওয়ার সময় রাকিবুল আরিফকে বলেছিল, ‘মদের সাথে কি খাওয়ালি আমার বুক ও গলা জ্বলে যাচ্ছে।’

এর পর আবিরের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে আবিরের যে মুঠোফোন নম্বরটি দেওয়া হয় তাতে ফোন করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মেডিকেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বমির কথা বলে রাকিবুলকে ভর্তি করা হলেও তার সমস্যা ছিল অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া। তাকে দ্রত আইসিতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।

রাকিবুল ইসলামের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, ‘ইংরেজি নতুন বছরের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে রাকিব। একপর্যায়ে বমি করায় তার বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সে মারা যায়। খবর পেয়ে আমরা তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্থানীয় বেলজানী-খরসুতী মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।’

ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, এটি একটি পুলিশ কেস। এ জন্য রাকিবুলের মৃত্যুর পর এ জন্য যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরীয়ার বলেন, এ মৃত্যু সংক্রান্ত ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় কোন তথ্য নেই।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজীদুল রশিদ ওরফে রিয়ান বলেন, তার জানা মতে রাকিবুল মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। অ্যালকোহলজনিত মৃত্যুর ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। তিনি বলেন, রাকিবুলকে তিনি চেনেন না। কেন্দ্র কমিটি অনুমোদন করার সময় তার নাম কলম দিয়ে হাতে লিখে দিয়ে অনুমোদন করা হয়।

সান নিউজ/এমআর