নয়াদিল্লি: শীতের দিনেই হোক কিংবা গরমের দিনেই হোক – অধিকাংশ মানুষের কাছেই চা যেন এক টুকরো স্বর্গ! চায়ের অপূর্ব গন্ধ এবং স্বাদেই যেন মনটা তরতাজা হয়ে যায়। আসলে আমাদের দিনের শুরুটাই হয় ধোঁয়া ওঠা এক পেয়ালা চা আর বিস্কুটে। এর পর সারা দিনে তো চায়ের পর চা চলতেই থাকে। অফিসে কাজের ফাঁকে গরম গরম চা পান করলে আলাদাই এনার্জি পাওয়া যায়। কিংবা বিকেল বা সন্ধের দিকেও এক কাপ চা না-পেলে যেন মনটা কেমন-কেমন করে! চা আসলে এমন একটা পানীয়, যা শরীর এবং মনের জন্য খুবই ভাল। যেমন – শীতের সময় দুধ এবং সুগন্ধী মশলা মিশিয়ে ঘন করে তৈরি চায়ে মন চাঙ্গা হতে বাধ্য! আবার রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে গরম ধোঁয়া ওঠা এক ভাঁড় চায়ের মধ্যে যেন মিশে থাকে মাটির গন্ধ! কিংবা আচমকা মাথা ধরলে কড়া করে এক কাপ চা হলেই এক নিমেষে সমস্যার সমাধান! আবার দার্জিলিং চায়ের সুগন্ধ যেন মন আর মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়!
এ তো না-হয় গেল চায়ের কথা! কিন্তু আজকাল চা নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করছেন অনেকেই। আর ইন্টারনেটের দৌলতে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেই নিয়েই সরগরম নেটমাধ্যম। আসলে চায়ের মধ্যে চিজ কিংবা ওল্ড মঙ্কের মতো খাদ্যদ্রব্য মিশিয়ে চায়ের আজব ফিউশন তৈরি হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে! আর চায়ের এই ফিউশনের কথা নেটদুনিয়ায় জানাজানি হওয়ার পরে রেগে আগুন হয়েছেন চা-প্রেমীরা। তবে কিছু রেসিপি আবার তাঁরা পছন্দও করেছেন। যেমন – দম চা। এই হায়দরাবাদী চা মনে ধরেছে বহু নেটিজেনদের। তা-হলে দেখে নেওয়া যাক, এমন কিছু অদ্ভুত চায়ের রেসিপি, যা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে!
দম চা:
দম চা হল ক্লাসিক হায়দরাবাদী দুধ চা। সম্প্রতি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে এই চায়ের কথা। আসলে এই দুধ চায়ের মন পাগল করা গন্ধ এবং দুর্দান্ত ঘন টেক্সচারই চা-প্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। কিন্তু এই দম চা তৈরি করার প্রক্রিয়াটা কী? সেটাই তো বলব আজ! এর জন্য একটি গ্লাস নিয়ে তাতে ইষদুষ্ণ জল ঢালতে হবে। এ-বার সেই গ্লাসের মুখটা একটি মসলিন কাপড়ের টুকরো দিয়ে আটকে নিতে হবে। এর পর ওই মসলিন কাপড়ের মধ্যে চিনি, আদা, চায়ের পাতা, কয়েক টুকরো দারচিনি, লবঙ্গ এবং স্টার অ্যানিস রেখে তা গ্লাসের জলে সামান্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। এ-বার সম্পূর্ণ সাবধানতা অবলম্বন করে গ্লাসটা প্রেসার কুকারে রাখতে হবে। এই চায়ের মধ্যে একটা স্মোকি এফেক্ট আনার জন্য প্রেসার কুকারে একটা হুইসলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মসলিন কাপড়ের মধ্যে থাকা উপকরণ নিংড়ে নিয়ে সেই মিশ্রণ গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করতে হবে। এর পর আর কী। হাতের সামনেই একেবারে প্রস্তুত দম চা! যা গরম গরম উপভোগ করতে হবে!
রুহ্আফজা চা:
অধিকাংশ মানুষই রুহ্আফজা শরবত খেতে খুবই ভালোবাসেন। কারণ ‘রুহ্’ কথার অর্থ হল আত্মা। আর বোঝাই যাচ্ছে যে, রুহ্আফজা শরবত সত্যিই আত্মাকে শান্তি দিতে পারে। কিন্তু তা বলে চায়ের মধ্যেও রুহ্আফজা! তা-ও আবার হয় না কি? আর হলেই বা সেটা কেমন খেতে হবে? আসলে সম্প্রতি এই চায়ের কথাও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সে-ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি। বরং চা-প্রেমী এমনকী নেটিজেনরা এই চায়ের স্বাদের কড়া নিন্দাই করেছেন। দিল্লির এক চা বিক্রেতাই এমন চা তৈরি করে থাকেন। যার রঙ গোলাপি। আর তার স্বাদও গোলাপের মতোই মিষ্টি। নেটিজেনদের দাবি, এই চা ক্লাসিক পিঙ্ক চা বা নুন চায়ের দুর্দান্ত স্বাদটাকেই নষ্ট করে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, রুহ্আফজা চায়ের স্বাদ অত্যন্ত খারাপ।
ওল্ড মঙ্ক টি বা ওল্ড মঙ্ক চা:
হাড়কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডার রাতে একটু ওল্ড মঙ্ক হলেই জমে যায়। সম্প্রতি ওল্ড মঙ্ক চায়ের কথাই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। রাম-প্রেমীরা এই ফিউশনের প্রেমে পড়ে গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু চা-প্রেমীরা এই ফিউশন একেবারেই পছন্দ করেননি। কিন্তু কী ভাবে কোথায়ই বা পাওয়া যাচ্ছে এই রাম আর চায়ের ফিউশন ওল্ড মঙ্ক টি? সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে জানা গিয়েছে যে, সাগর-শহর গোয়ার সিঙ্ক্যুয়েরিম সৈকতের রাস্তায় এক চা বিক্রেতাই এই ওল্ড মঙ্ক চা বানিয়ে থাকেন। বাড়িতেই তৈরি করতে চান এই চা? তা-হলে বলে দেওয়া যাক এই চায়ের রেসিপিটা। এর জন্য প্রথমে তন্দুরের মধ্যে একটা মাটির ভাঁড় গরম করে খানিকটা পুড়িয়ে নিতে হবে। এর পর সেই গরম মাটির ভাঁড়ের মধ্যে পরিমাণ মতো ওল্ড মঙ্ক ঢেলে নিতে হবে। আর রাম-এর পরেই ঢালতে হবে গরম মশলা চা। কে বলতে পারে, রাম আর চায়ের এই ফিউশন হয়তো ভাল লেগে যেতে পারে ওল্ড মঙ্ক প্রেমীদের!
কোকোনাট টি বা নারকেল চা:
কোকোনাট টি আবার কী রকম চা? অনেকেই আবার এমনটাও ভাবতে পারেন যে, নারকেল দিয়েও আজকাল চা তৈরি হচ্ছে! এটাও এক ধরনের ফিউশন চা। কিন্তু সেটা খেতে কেমন হবে? আর এই জায়গাটায় কিন্তু দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই ভাবছেন যে, এই চায়ে হয়তো সাধারণ দুধের পরিবর্তে নারকেলের দুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু নারকেল চায়ের কথা শোনার পর থেকে কট্টর চা-প্রেমীরা আবার একেবারেই সহ্য করতে পারেননি এই ফিউশন চায়ের আইডিয়াটা। তবে যাঁরা সব ধরনের খাবার ট্রাই করতে চান কিংবা এক্সপেরিমেন্ট করতে চান, তাঁদের জন্য রইল এই চায়ের রেসিপি। আসলে এই চা তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং তা ঘরে অনায়াসে বানিয়ে ফেলা যেতে পারে। আর নারকেল চা বানানোর ক্ষেত্রে কোনও রকম ঝক্কিই পোহাতে হবে না। কারণ এটা আসলে সাধারণ ঘরোয়া চা-ই। যা বানাতে হবে একটি নারকেলের মালা বা নারকেলের খোলার ভিতরেই। তবে এক্সপেরিমেন্টের জন্য কিংবা চায়ের স্বাদে ট্যুইস্ট আনার জন্য নারকেলের মালা বা খোলাটা চা তৈরির আগে ভাল করে পুড়িয়ে নিতে হবে। এতে ঘরোয়া চায়ের মধ্যেই একটি স্মোকি ফ্লেভার চলে আসবে!
ফ্রুট চা বা ফ্রুট টি:
এটাও একটা ফিউশন চা। কিন্তু চায়ের মধ্যেও রকমারি ফল? স্বভাবতই কট্টর চা-প্রেমীরা একেবারেই পছন্দ করেননি এই ফ্রুট চা। আসলে তাঁদের দাবি, চা আর ফলের এই ফিউশন খুবই খারাপ। যা চায়ের স্বাদ গন্ধ নষ্ট করে দিতে পারে। আসলে এই ফ্রুট চায়ের জন্ম হয়েছে গুজরাতে। এমনিতেই খাবার নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের ক্ষেত্রে তো এই রাজ্য সব সময়ই এগিয়ে থাকে। সুরাতের এক চা বিক্রেতা প্রথম এই ফ্রুট চা তৈরি করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। ইন্টারনেটে এই চায়ের কথা ভাইরাল হতেই নেটিজেনরা দু’কথা শোনাতে ছাড়েননি ওই চা-বিক্রেতাকে। কিন্তু যাঁরা এই চা চেখে দেখতে চাইছেন, তাঁদের জন্য রইল রেসিপিও। খুবই সহজ। এর জন্য দুর্দান্ত মশলাদার একটা দুধ চা বানিয়ে ফেলতে হবে। আর তার সঙ্গে কুচিয়ে নিতে হবে নিজের পছন্দের টাটকা কিছু ফল। এই যেমন – সবেদা, কলা, আপেল, বেদানার মতো ফল নেওয়া যেতে পারে। এই সব ফলের কুচি ওই মশলাদার দুধ চায়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ফ্রুট চা!
চিজ চা:
পিৎজায় এক্সট্রা চিজ থাকলে মনটা যেন নেচে ওঠে। কিন্তু চায়ে চিজ থাকলে কেমন লাগবে। চা-প্রেমী এবং চিজ প্রেমীরা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও এই চা চেখে দেখার কথা ভাবতেই পারবেন না। আসলে দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই এক চায়ের কথা ভাইরাল হয়েছিল। এক ট্যুইটার ব্যবহারকারী এই চিজ চায়ের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছিলেন যে, আমাদের দেশেই কোথাও এটা পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে যে, মাটির চায়ের ভাঁড়ের মুখে রয়েছে চিজের একটা পাতলা আস্তরণ। চামচ দিয়ে চিজের লোভনীয় সেই আস্তরণটা সরাতেই দেখা যায়, মাটির ভাঁড়ের মধ্যে থেকে অনেকটা যেন লাভার মতো বেরিয়ে আসছে চা। দেখতে লোভনীয় হলেও কেউই হয়তো খেতে চাইবেন না। তবে বলাই বাহুল্য যে, নেটিজেনরা এই চিজ চায়ের আইডিয়াটাকে তেমন ভাল ভাবে নিতে পারেননি।