৫০ দিনে কলকাতাকে যা চিনেছি, তা ৫০ বছরের সঞ্চয় হয়ে থাকবে: ইয়ামি

৫০ দিনে কলকাতাকে যা চিনেছি, তা ৫০ বছরের সঞ্চয় হয়ে থাকবে: ইয়ামি

কলকাতা: কলকাতায় প্রায় ৫০ দিন ধরে শ্যুটিং করেছিলেন ইয়ামি গৌতম। এবার এলেন ছবি প্রচারে। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত ‘লস্ট’ ছবি মুক্তি পাচ্ছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। তার আগে শহরে হয়ে গেল লস্টের স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং। দু’দিনের ঝটিকা সফরে এসে নিউজ18 বাংলার সঙ্গে একান্তে আড্ডা দিলেন বলি বিউটি ইয়ামি গৌতম।

আবারও কলকাতায় আসার অনুভূতিটা কেমন?

ইয়ামি- (হেসে) দারুণ অনুভূতি। কলকাতায় অনেক আগের থেকেই আমার যাতায়াত ছিল। সেই আমার কেরিয়ারের শুরু থেকে। কিন্তু টনিদার সঙ্গে ‘লস্ট’ করতে এসে কলকাতার সঙ্গে ভালমতোই জড়িয়ে গেলাম। আগে কলকাতাকে উপর উপর চিনতাম। কিন্তু ৫০ দিন শ্যুটিংয়ের জন্য এই শহরে থেকে এখন অনেক কাছ থেকে চিনি কলকাতাকে। কোথাও যেন এটা আমার প্রাণের শহর । সেকেন্ড হোম হয়ে উঠেছে।

কলকাতায় এসে সব থেকে বড় প্রাপ্তি কী?

ইয়ামি- মন থেকে যদি বলি সব থেকে বড় প্রাপ্তি হল মা কালীর দর্শন। শ্যুটিংয়ের জন্য যখন ৫০ দিন বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে ছিলাম। প্রতি মঙ্গলবার ভোরে নিয়ম করে কালীঘাটে যেতাম। শুধু কালীঘাট নয়, দক্ষিণেশ্বরের মায়ের দর্শনও করতাম। অদ্ভুত শান্তি পেতাম। এটা সত্যিই জীবনে একটা বড় প্রাপ্তি। ভীষণ ইচ্ছা আমার মা ও পরিবারের লোকজনদেরও মা কালী দর্শন করাতে নিয়ে যাই ৷ কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এ ছাড়া টনিদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগটাও বড় প্রাপ্তি।

ইয়ামি গৌতম ধর। বিয়ের পর পদবীতে ধর দেখে অনেকেই কি বাঙালি বলে  ভুল করেন?

ইয়ামি- (সজোরে হেসে)…. ঠিক ধরেছেন। বহু লোক আমাকে এই একই কথা জিজ্ঞেস করেন। আপনার কি বং কানেকশন রয়েছে? বিশেষ করে কলকাতার লোকজন। তবে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি কাশ্মীরি। ধর পদবীতে মিল থাকলেও তারা কোনওভাবেই বাঙালি নন। আমি হিমাচলের মেয়ে। কিন্তু মনেপ্রাণে অনেকটাই বাঙালি।

কলকাতায় এসে প্রথমে কী প্ল্যানিং করেন?

ইয়ামি- অফকোর্স খাওয়া দাওয়ার প্ল্যানিং। কলকাতায় এসে কী কী খাব তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলি। মিষ্টি থেকে নানারকম বাঙালি পদ, সবকিছুই আমার দারুণ প্রিয়। শ্যুটিং চলাকালীন টনিদার স্ত্রী ইন্দ্রানী আমাকে প্রচুর খাইয়েছে। এত আন্তরিক, যে প্রতিদিনই হোটেলে কিছু না কিছু খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। তা সে দই হোক, কিংবা নলেন গুড়। কলকাতার খাবার সত্যিই মিস করা যায় না।

ছবিতে তো আপনি একজন ক্রাইম জার্নালিস্ট? মানে আমাদের সাংবাদিকতার জুতোয় পা গলিয়েছেন? কেমন লাগল এই নতুন চ্যালেঞ্জ?

ইয়ামি- এক কথায় চ্যালেঞ্জিং। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। একই ধরনের অভিনয় করে দর্শকদের ঠকাতে চাই না। আপনাদের মত সাংবাদিকদের মুখোমুখি সবসময় হই। কিন্তু এই পেশায় কী কী করতে হয়, তার কোনও সম্যক ধারণা ছিল না। সত্যি কথা বলতে টনি দা আমাকে যেভাবে বলেছেন, আমি সেটাই ধারণ করার চেষ্টা করেছি। বাড়তি কোনও হোমওয়ার্ক করিনি।

কেমন লাগল রিপোর্টারের এই পেশা?

ইয়ামি- খুব কঠিন কাজ। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিপোর্টারেরা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন খবর সংগ্রহের জন্য, তা এই ছবি না করলে সত্যি আমি ভেতর থেকে অনুভব করতে পারতাম না। সব কাজেরই লোকে শুধু বাইরের চাকচিক্য দেখে কিন্তু ভেতরে যে অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে, তা সব সময় চোখে পড়ে না। সেটা আমাদের অভিনেতাদের জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে ক্রাইম জার্নালিস্ট, আ টাফ জব।

দেখতে পাচ্ছি আপনি কলকাতার অলিগলি রাস্তাঘাট সব জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। কীসের সন্ধানে?

ইয়ামি- আসলে ছবিটি আপাত দৃষ্টিতে একটি ক্রাইম থ্রিলার। একজন নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজের সন্ধানে আমি বেরিয়ে পড়ি। তবে ছবিটার একটা অন্তর্নিহিত মানে রয়েছে। শুধুই এক সাংবাদিকের খোঁজ নয়। সম্পর্কের খোঁজও। থ্রিলার হলেও এটা একটা সম্পর্কের ছবি। বন্ধনের ছবি। আজকের দিনে এই সম্পর্কগুলো শিথিল হতে বসেছে, সেগুলো নতুন করে আবিষ্কারের ছবি।

ইয়ামি গৌতমের মনে কী সুপ্ত বাসনা রয়েছে ?

অনেক বাসনা রয়েছে। তবে একটা বাসনা খুব বেশি প্রকট। তা হল আমি যেহেতু হিমাচলের মেয়ে। আমার ইচ্ছে পাহাড়ে একান্ত একটা বাড়ি তৈরি করার এবং শহরের এই ইট কাঠ পাথরের জঙ্গল থেকে নিজেকে মুক্ত করে শান্ত পরিবেশে একটা নিশ্চিন্তের জীবন কাটানো।

এটা কি বৃদ্ধ বয়সের জন্য তুলে রাখা প্রকল্প ?

একদমই নয়। আমি এখন এরকমটাই চাই। আমার পরিবারও সেটা জানে। জীবন খুবই ছোট। আমি ভবিষ্যতের জন্য কিছু তুলে রাখতে চাই না। আমার ইচ্ছে এখন থেকে এরকম একটা শান্তির জীবন কাটানোর।

কিন্তু পাইপলাইনে তো আপনার অনেক কাজ?

হ্যাঁ তা ঠিকই। বিগত দু’বছরে আমি প্রায় ছ’টা ছবির কাজ শেষ করেছি। ‘আ থার্সডে’ মুক্তি পেয়েছে। লস্ট মুক্তি পেতে চলেছে। আরও তিনটে ছবি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে অ্যাসিড টেস্টের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করে দেখতে চাই।

অভিনয়ের বাইরে ইয়ামির কাছে সবচাইতে প্রিয় মুহূর্ত কোনটা?

অভিনয় অবশ্যই আমার পেশা ভালোবাসা কিন্তু সবটা নয়। অভিনেত্রী সত্ত্বার বাইরেও আমার একটা ব্যক্তিগত জগত আছে। যেখানে আমার ব্যক্তিগত ভাললাগা না লাগাগুলো প্রায়োরিটি পায়। আমি সব থেকে ভালবাসি আমার বোনপোর সঙ্গে সময় কাটাতে। আমার নেফিউ মাত্র এক বছরের। ও এই মুহূর্তে আমার জীবনের সবচেয়ে ভাললাগার মানুষ। ওর সঙ্গে প্রতিটা মুহূর্ত আমি উপভোগ করি।

বিয়ের পর জীবন কতটা বদলেছে?

কিছুটা তো বদলেছেই। আমি এত অলস হয়ে গিয়েছি। সবার আদর পেয়ে পেয়ে। (একদল হাসি) আমার শাশুড়ি মা আমাকে নানা ধরনের কাশ্মীরি রান্না করে খাওয়ায়। আমি পটের বিবির মতো বসে বসে খাবার এনজয় করি। এ ছাড়া একই পেশায় থাকায় স্বামীর সঙ্গে ছবি নিয়ে অনেক রকম আলোচনা হয়। তবে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন ছবি করব না করব, সেটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমিই নিই। আদিত্য আমাকে অনেকটাই সাহায্য করে।

আদিত্যর ‘দ্য ইম্মর্টাল অশ্বত্থামা’ কবে আসছে?

আশা করছি খুব শিগগিরই দর্শকরা ছবিটি দেখতে পাবেন। নিয়ে যতই গুজব রটুক না কেন, ট্রেলার লঞ্চ হলেই মানুষের একটা পরিষ্কার ধারণা হবে ছবিটির সম্পর্কে। ও এই মুহূর্তে অন্যান্য কাজগুলো নিয়ে একটু ব্যস্ত। তবে খুব তাড়াতাড়ি ছবিটি দর্শকের দরবারে আসবে।

স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ে এসে কেমন সাড়া পেলেন?

প্রিয়া সিনেমাতে লস্ট-এর স্পেশাল স্ক্রিনিং-এ কলকাতার বহু সেলেব্রেটিরা এসেছেন। সকলে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন। সাংবাদিকদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমি আপ্লুত। কিন্তু সবচাইতে ভাল লাগল প্রিয়ার মতো সিঙ্গেল থিয়েটারে ছবি দেখে। হলে প্রবেশ করলেই যেন কোথাও একটা পুরনো ঐতিহ্য চোখে পড়ে। আমার দারুণ লেগেছে প্রেক্ষাগৃহটি।

ইয়ামির জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি কী?

আমার জীবনের সবথেকে বেশি প্রায়োরিটি হল মেন্টাল হেলথকে ঠিক রাখা। মেন্টাল হেলথ ঠিক থাকলেই মানুষ শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক থেকেই সুস্থ থাকবেন। মন ভাল না থাকলে শরীর ভাল থাকে না। তাই আমি সব সময় চেষ্টা করি মস্তিষ্কটাকে ঠিক রাখতে এবং মনটা যাতে ভাল থাকে। আমাদের প্রফেশনে দিন-প্রতিদিনের কাজে আমি জানি অনেক সময় ডিপ্রেশন আসে, তবে সেটাকে একেবারেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত না। এমন কাজ করতে হবে, যাতে আমরা মনটাকে ভাল রাখতে পারি। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি। বাকি ছবি, কেরিয়ার- এগুলো তো পার্ট অফ লাইফ। মূল মন্ত্র তো অবশ্যই ভাল থাকা এবং ভাল রাখা।

(Feed Source: news18.com)