পঞ্চায়েত ভোটে ‘বাহিনী’ কাঁটা? ১ লক্ষ ৮০ হাজার পুলিশ মিলবে কী করে?

পঞ্চায়েত ভোটে ‘বাহিনী’ কাঁটা? ১ লক্ষ ৮০ হাজার পুলিশ মিলবে কী করে?

কলকাতা: দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না-হলেও সম্ভবত মে মাসেই পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোট ক’দফায় হবে? কোন পুলিশ বাহিনী দিয়ে করানো হবে ভোট? এই বিষয়টি নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন কমিশনের আধিকারিকরা। কারণ, কাঁটা সেই বাহিনীই।

কমিশন সূত্রের খবর, এক দফায় ভোট করতে ভোটকর্মীর সংখ্যার দিক থেকে কোনও সমস্যা নেই। কারণ, এবার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট করতে যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটকর্মী প্রয়োজন, তার তালিকাও অনলাইনে মোটামুটি তৈরি করে ফেলেছেন জেলাশাসকরা। কিন্তু একদিনে ভোট করতে গেলে যে সংখ্যক পুলিশকর্মী দরকার, তা আসবে কোথা থেকে?

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পুলিশবাহিনীর জন্য পড়শি কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। নবান্ন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিহার, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনও জায়গা থেকেই বাহিনী নিয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি। বিরোধীরা বারবার দাবি তুললেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে রাজি নয় রাজ্য সরকার।

একদফায় ভোট করতে হলে বুথপিছু দু’জন করে পুলিশ দিতে গেলে শুধু বুথেই মোট ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন পুলিশকর্মীকে কী ভাবে মাঠে নামানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সরকারই কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পঞ্চায়েত ভোটের দিন চূড়ান্ত করে।

আগামী ২৮ এপ্রিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রতিটি বুথের চূড়ান্ত তালিকার বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করবে। আইন মাফিক এর ন্যূনতম ১২ দিন পরই কমিশনের ভোট গ্রহণ করতে কোনও সমস্যা নেই। সেই হিসেবে ১৪ অথবা ২১ মে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোট পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মীর পাশাপাশি শিক্ষক, ব্যাঙ্ককর্মীর পাশাপাশি কোনও কোনও ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের নেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে। শুরু হতে চলেছে ভোট কর্মী প্রশিক্ষণও। প্রতিটি জেলাশাসক এর রূপরেখা তৈরি করে কমিশন থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা, অপরাধের তদন্ত সামাল দিয়ে একদিনে ভোটের জন্য এত সংখ্যায় পুলিশবাহিনীকে কী ভাবে মাঠে নামানো যাবে?

এবার ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৩৩৯। গত পঞ্চায়েত ভোট এই সংখ্যাটা ছিল ৪৮ হজার ৬৫০। এর ফলে প্রতি বুথ পিছু দু’জন নিরাপত্তা রক্ষী দিতে হলে প্রয়োজন ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন পুলিশ কর্মী। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভোটে ব্যবহার করা হয় না। এরপরও ভোটের দিন ও আগের নাকা তল্লাশি থেকে টহলদারির জন্য কুইক রেসপন্স টিম, মোবাইল ফোর্স সহ অতিরিক্ত অন্তত ৫০ হাজার সশস্ত্র পুলিশ প্রয়োজন। ফলে এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার জন্য অন্তত এক লক্ষ আশি হাজার পুলিশ লাগবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের একাংশ এজন্যই এক দফায় ভোট করতে নারাজ। রাজ্য সরকার অবশ্য এক দফাতেই ভোট চায়। ভোটের বাহিনী প্রসঙ্গে কমিশনের কর্তারা এদিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাদের বক্তব্য, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই রাজ্য সরকারের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করা হবে। ভোটের নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তারাই ভোটের নিরাপত্তার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করবে। তবে অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ ভোটের জন্য আনতে হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি লাগে। সেই বিষয়টিও প্রশাসন ও কমিশনের কর্তাদের মাথায় রয়েছে।

(Feed Source: news18.com)