শাস্তির ব্যবস্থা করেন ২২ নাৎসি অফিসারের, চলে গেলেন ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের একমাত্র জীবিত আইনজীবী

শাস্তির ব্যবস্থা করেন ২২ নাৎসি অফিসারের, চলে গেলেন ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের একমাত্র জীবিত আইনজীবী

কলকাতা: মাত্র ২৭ বছর বয়সে ২২ জন নাৎসি অফিসারের (Nazi Officer) জন্য যুদ্ধাপরাধের (War Crime) শাস্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইটা অবশ্য আর জেতা হল না। ১০৩ বছর বয়সে চলে গেলেন বেঞ্জামিন ফেরেনজ (Benjamin Ferencz), গোটা দুনিয়া যাঁকে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের ডাকসাইটে আইনজীবী হিসেবে চিনত। বস্তুত ওই ট্রায়ালে যে আইনজীবীরা লড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র বেঞ্জামিনই বেঁচেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে  ন্যুরেমবার্গ শুনানির আরও এক জীবন্ত দলিল শেষ হয়ে গেল বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।

যা জানা গেল…
গত শুক্রবার গভীর রাতে ফ্লরিডার বয়ন্টন বিচের একটি অ্যাসিস্টেড লিভিং ফেসিলিটি-তে মারা গিয়েছেন এই বিশিষ্ট আইনজীবী। তাঁর তিন মেয়ে, এক ছেলে। স্ত্রী চলে গিয়েছেন ২০১৯ সালে। আদতে রোমানিয়ায় জন্ম হলেও পরে আমেরিকায় চলে যায় বেঞ্জামিনের পরিবার। ছোটবেলাটা রীতিমতো কষ্টে কেটেছিল এই আইনজীবী।

অনভিজ্ঞ অথচ অনড়…
নাৎসি বীভৎসতার বিরুদ্ধে তরুণ বেঞ্জামিনের লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৪৩ সাল নাগাদ। হার্ভার্ড ল’স্কুল থেকে সদ্যস্নাতক তরুণ যোগ দেন মার্কিন সেনায়। সেই সুবাদে নর্মান্ডির যুদ্ধেও অংশ নিতে হয়েছিল তাঁকে। সার্জেন্ট হিসেবে পদোন্নতি হয় বেঞ্জামিনের। তবে  এর পরই শুরু মোক্ষম লড়াই। নাৎসি অত্য়াচারের  প্রমাণ খুঁজতে যে টিম তৈরি করা হয়েছিল, তারই সদস্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয় তাঁকে। সে সময় স্বচক্ষে যা দেখেছিলেন, কখনও ভুলতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে বলেছেনও সে কথা। তাঁর বয়ানে, ‘ডায়ারিয়া, ডিসেন্ট্রি, টিবি, টাইফাস, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন এমন মানুষের কঙ্কালের স্তূপ পড়েছিল চার দিকে। কারও আবার তখনও চোখ দুটি খোলা। অসহায় আর্তির ভাব স্পষ্ট ধরা হয়েছে।’ মেনে নেন, ‘যুদ্ধাপরাধের তদন্তে নেমে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার ধাক্কা আমাকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে ফেলে। পারতপক্ষে এখনও এই ব্যাপারে কম কথা বলি।’ তদন্তের কাজ শেষ হতেই নিউ ইয়র্কে ফিরে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পসার জমিয়ে ওঠার আগেই ডাক। ন্যুরেমবার্গের শুনানিতে নাৎসিদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়তে হবে। ‘Einsatzgruppen’ বা সহজ কথায় এসএস বাহিনীর যে অংশ নাৎসি অধিকৃত পূর্ব ইউরোপে প্রায় ১০ লক্ষ ইহুদি নিধন করেছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রধান ছিলেন বেঞ্জামিন। যে ২২ জনের ট্রায়াল হয়েছিল, সকলেই দোষী প্রমাণিত হয়। ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল আইনি পেশায় তখনও অনভিজ্ঞ বেঞ্জমিনের প্রাণপণ চেষ্টায়।

তার পর…
এতেই অবশ্য থামেননি। পরে আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক হয়েছিলেন তিনি। উদ্যোগ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা করার যেখানে কোনও দেশের সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের শুনানি করা যায়। একাধিক বই-ও লেখেন এই বিষয়ে। অবশেষে নেদারল্যান্ডসের ‘দ্য হেগ’ শহরে প্রতিষ্ঠা হয় International Criminal Court। কিন্তু বহু রাষ্ট্রই এর এক্তিয়ারের আওতায় আসতে রাজি হয়নি। ফলে প্রয়াত আইনজীবীর উদ্দেশ্য কতদূর সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।

(Feed Source: abplive.com)