ধরুন আপনার হাত ধারাল কোনও জিনিসে ফালা হয়ে গেছে, অথবা, কোথাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, হাঁটু এক্কেবারে রক্তাক্ত৷ ছোট হলে নিশ্চই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসত, কিংবা হয়ত চিৎকার করে কেঁদেই ফেলতেন৷ বড় বলে এখন পারেন না৷ কিন্তু, জানেন কি, গাছের আঘাত লাগলে, গাছ কষ্টে থাকলে, ওরাও চিৎকার করে কাঁদে? সাহায্যের জন্য আকুতি জানায়?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে অবাক করা এক তথ্য৷ তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের পরীক্ষালব্ধ ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘সেল’ পত্রিকায় (https://www.cell.com/cell/fulltext/S0092-8674(23)00262-3)৷ সেখানেই গবেষকের রেকর্ড করেছেন গাছেদের কান্নার সেই শব্দ৷ গাছেদের কান্না রেকর্ড করার দৃষ্টান্ত বিজ্ঞানে এই প্রথম।
টম্যাটো ও টোবাকো গাছের উপরে নিজেদের পরীক্ষা চালিয়েছেন ওই গবেষকেরা৷ সেখানে দেখা গিয়েছে যে কোনও সুস্থ গাছ সাধারণত ঘণ্টায় ১ বার ‘ক্লিক’ বা ‘পপ’ জাতীয় শব্দ করে৷ তবে পুরোটাই আলট্রাসোনিক সাউন্ড৷ তাই মানুষের কান তা শুনতে পায় না৷ গাছেদের করা শব্দ রেকর্ড করার জন্যে গবেষকেরা বিশেষ ধরনের আলট্রাসোনিক সাউন্ড রেকর্ডার ব্যবহার করেছেন৷ কিন্তু, এখানেই শেষ নয়৷
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গাছগুলিকে টানা ২ দিন জল না দিয়ে রেখে দেওয়ার পরে, অথবা তার কোনও ডাল ছেঁটে ফেলা হলে দেখা গিয়েছে গাছটি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০ বার ‘ক্লিক’ বা ‘পপ’ জাতীয় শব্দ করেছে৷ সবচেয়ে বেশি শব্দ করেছে চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে৷ তারপর গাছটি আস্তে আস্তে মরে যেতে শুরু করেছে৷ এর অর্থ কী?
গবেষকদের মতে, এই ঘন ঘন ‘ক্লিক’ বা ‘পপ’ জাতীয় শব্দই আসলে গাছের কান্না৷ এর মাধ্যমে গাছ বোঝাতে চায়, সে অসুস্থ, বা আহত,বা সে কষ্টে রয়েছে৷ কিন্তু, কাকে বোঝাতে চায়?
গবেষকেরা বলছেন, গাছের এই শব্দ মানুষের উঁচু স্বরে কথা বলার মতো৷ হাঁকডাক করার মতো৷ গাছের থেকে ৩-৫ মিটার দূর পর্যন্তও এই শব্দ পৌঁছে যায়৷ গাছের এই ধরনের শব্দের কম্পাঙ্ক থাকে ৪০ থেকে ৮০ kHz-এর মধ্যে, যা মানুষের শ্রবণ ক্ষমতার বাইরে৷ তাই মানুষ এই শব্দ শুনতে পায় না৷ ঠিক যে কারণে মানুষ বাদুরের ডাক শুনতে পায় না৷ ২০ kHz নীচের শব্দই শুনতে পায় মানুষ৷ কিন্তু, মানুষ ছাড়া, গাছেরা কাদের জানান দিতে চায়, যে তারা অসুস্থ?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাবে গাছের শব্দ আবিষ্কার হওয়া নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের এক বিশাল বড় পদক্ষেপ৷ কিন্তু, এই শব্দ যে অন্য কোনও প্রাণি বা উদ্ভিদের সঙ্গে কথোপকথন করার জন্যই তৈরি হচ্ছে এমনটা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে তাঁরা বলছেন, হতেই পারে, প্রকৃতি এমন ভাবেই বিবর্তিত হয়েছে, যাতে গাছেদের এই কান্না অন্য কোনও প্রাণি বা উদ্ভিদের কাছে পৌঁছচ্ছে৷
যেমন, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানুষ গাছেদের এই আওয়াজ শুনতে না পেলেও মথ, ছোট ইঁদুরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণি এই কম্পাঙ্কের আলট্রাসোনিক শব্দ শুনতে সক্ষম৷ তাই এবার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, গাছেরা সমস্যায় থাকলে যে ধরনের শব্দ তৈরি করে, তা শুনে নিকটবর্তী কোনও প্রাণি বা উদ্ভিদের মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কি না৷
বিজ্ঞানীদের মতে, আসলে গাছেরা এই ধরনের শব্দ করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে৷ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতেই অন্য প্রাণি বা প্রতিবেশী উদ্ভিদদের এই বার্তা দিতে চায়, সতর্ক করতে চায় অসুস্থ, মৃতপ্রায় গাছ৷
(Feed Source: news18.com)