কলকাতা: গরু পাচারে বীরভূমকে ব্যবহার করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন। নিজের রাজনৈতিক পদের প্রভাব খাটিয়ে পাচারকারীদের পথ প্রশস্ত করেছেন খোদ অনুব্রত মণ্ডল। বদলে লাভবান হয়েছেন তিনি ও পরিবারের সদস্যরা। চার্জশিটে এমনই উল্লেখ করে ইডির দাবি, নিজের দেহরক্ষী রাজ্য পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল সহেগল হোসেনকে ব্যবহার করা, পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং সেফ প্যাসেজ করে দিয়ে নগদে টাকা নেওয়ার মাস্টার মাইন্ড অনুব্রত মণ্ডল।
এখানেই শেষ নয় নগদে নেওয়া কোটি কোটি টাকা সরানোর ক্ষেত্রেও অনুব্রত ঢাল করেছেন নিজের ঘনিষ্ঠ মহলকে। চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর দাবি, বোলপুর পুরসভার তৃণমূলের দুই কাউন্সিলার থেকে একাধিক তৃণমূল কর্মীর নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সরিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল।
তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তি, যারা অনুব্রতর ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত তাদের বয়ান রেকর্ড করেছে ইডি। ২০১০ সাল থেকে বোলপুর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ওমর শেখ, ২০১৫ সালে বোলপুর পুরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
ইডির দাবি তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, দাদা ওরফে কেষ্ট দা তাঁকে ১৩০০০ টাকা বেতন দিতেন। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাসবুক থেকে চেক বই সমস্ত কিছুই থাকত কেষ্ট মণ্ডলের কাছে। ওমর শেখ শুধু সই করেছিলেন বলেই ইডির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন। ওমরের দাবি, ওই অ্যাকাউন্ট তার নামে থাকলেও কখন কত টাকা ঢুকেছে তিনি জানতেন না। শুধু ওমর নন, চার্জশিটে ইডির দাবি, বাড়ির কাজের লোক বিদ্যুৎবরণ গায়েন ও কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও প্রচুর বেনামে সম্পতি কেনা হয় এবং বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সরানো হয়েছিল। তাদের বয়ান থেকেও এই তথ্য পেয়েছে ইডি।
এছাড়াও তৃণমূল কর্মী অর্ক দত্ত, তৃণমূল কর্মী তাপস মণ্ডল, তৃণমূল কর্মী শ্যামাপদ কর্মকার, সবজি ব্যবসায়ী বিজয় রজকের মতো অনেকের নামেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ইডির দাবি অনুব্রতর নির্দেশে সহেগল হোসেন এদের নামে বেনামে অ্যাকাউন্ট খোলে। সেখান বিপুল অর্থের টাকা নগদে জমা করা হত। পরে তা অনুব্রত ও তার পরিবারের সদস্য এবং সহগল হোসেন ব্যবহার করতেন।
এরা প্রত্যেকেই ইডির কাছে বয়ানে দাবি করেছেন, অনুব্রতর কথা মতো সেহগল তাদের নামে অ্যাকাউন্ট খুললেও অ্যাকাউন্টের পাশবুক থেকে চেকবুক থাকতো অনুব্রতর কাছে । অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা ট্রান্সফার সবটাই করতেন অনুব্রতই । লেনদেন সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। গরু পাচারের কালো টাকা সাদা করতেই এত এত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল বলেই মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা।