রক্তেভেজা শাড়ি, সামনে বন্দুক তাক করে আততায়ীরা, কানাডায় ইন্দিরা-হত্যার উদযাপন

রক্তেভেজা শাড়ি, সামনে বন্দুক তাক করে আততায়ীরা, কানাডায় ইন্দিরা-হত্যার উদযাপন

নয়াদিল্লি: কানাডার রাস্তায় ইন্দিরা গাঁধী হত্যার উদযাপন। রক্তেভেজা ইন্দিরার মূর্তি একদিকে, অন্য দিকে বন্দুক তাক করে থাকা দুই হত্যাকারী এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে হামলা চালানো খালিস্তানি জঙ্গির মূর্তি। মূর্তিগুলি ট্যাবলোর উপর চাপিয়ে চলল শোভাযাত্রা (Indira Gandhi Assassination)। সেই দৃশ্য সামনে আসতেই শুরু হল সংঘাত। খালিস্তানপন্থীদের উৎসাহ জোগানোর অভিযোগ উঠল কানাডার বিরুদ্ধে। ভারত সরকার এবং জাতীয় কংগ্রেস একযোগে সরব হল সেই নিয়ে (India Canada Relations)।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমার মনে হয়, এর নেপথ্যে আরও বড় উদ্দেশ্য জড়িয়ে রয়েছে। বিচ্ছিন্নতাকামী এবং উগ্রপন্থীদের জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা মোটেই সুখকর নয়, বিশেষ করে কানাডার জন্য তো নয়ই।”

ভারতে কানাডার হাই কমিশনারও গোটা ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ট্যুইটারে ক্যামেরন ম্যাকে লেখেন, ‘কানাডায় একটি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর হত্যা উদযাপিত হওয়ার খবরে আমি স্তম্ভিত। কানাডায় ঘৃণা এবং হিংসাকে গরিমান্বিত করার অনুমোদন নেই। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি’।

কংগ্রেসরে তরফেও গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে দলের নেতা মিলিন্দ দেওরার কথায়, ‘এখানে পক্ষপাতিত্বের প্রশ্নই ওঠে না। এর সঙ্গে  দেশের ইতিহাস, প্রধানমন্ত্রীর হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা যন্ত্রণার জড়িয়ে রয়েছে’। যে বা যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তীব্র পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফেও।

পৃথক খালিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে যখন উত্তেজনা চরমে, সেই সময় ইন্দিরার নির্দেশে ১৯৮৪ সালে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ কার্যকর করা হয়, যার আওতায় শিখদের পবিত্র ধর্মস্থান, পঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরের একটি ভবনে আশ্রয় নেওয়া খালিস্তানপন্থী জার্নেল সিংহ ভিন্ডারানওয়ালে এবং তাঁর অনুগামীদের বের আনতে সেনা নামে। আগে থেকে স্বর্ণমন্দিরের ওই ভবনে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র জমা করে রাখা হয়েছিল। ফলে সেনা সেখানে পৌঁছলে সংঘর্ষ বাধে দুই পক্ষের মধ্যে।

কিন্তু খালিস্তানপন্থীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে কার্য পেরে উঠছিল না সেনা। ফলে স্বর্ণমন্দিরে ঢোকনো হয় সাঁজোয়া গাড়ি। তাতেই ৬ জুন দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে জার্নেলের। আরও  দেহ পড়ে রয়েছে ভিতরে। বাকি খালিস্তানপন্থী জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তী কালে হতাহতের যে পরিসংখ্যান মেলে, তাতে দেখা যায়, সাধারণ নাগরিক এবং খালিস্তানপন্থী জঙ্গি মিলিয়ে ৫৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আধিকারিক এবং সৈনিক মিলিয়ে সেনার তরফে মারা গিয়েছেন ৮৩ জন। আহতের সংখ্য়া ২৩৬।

যদিও বাস্তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করেন একাংশ। অভিযানের আগে স্বর্ণমন্দির এবং সংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হয় সকলকে। অভিযানের সময় যাতে মন্দিরের আশেপাশে সাধারণ মানুষের আনাগোনা না থাকে, নিশ্চিত করা হয় তা-ও। তার পরেও অত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সেনাকে। স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানের বদলা নিতেই এর পর ইন্দিরাকে খুন করা হয়। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরার দুই শিখ দেহক্ষীই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেন। তার পর উত্তর ভারতে শিখবিরোধী দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ইন্দিরা-হত্যার সেই মুহূর্তই সম্প্রতি কানাডায় উদযাপিত হতে দেখা যায়। গত ৪ জুন ছিল ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’র পূর্তি। সেই উপলক্ষে কনাডার ব্র্যাম্পটনে ওই শোভাযাত্রা বের করা হয়, যার ভিডিও সোশ্য়াল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি সামনে আসতেই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ ভারতের বাইরে কানাডাতেই শিখ জনসংখ্যা সর্বাধিক। এর আগেও সেদেশের সরকারের বিরুদ্ধে খালিস্তানপন্থীদের প্রতি নরম অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর আগে, খালিস্তানপন্থী আন্দোলনের জেরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা লঙঅঘিত হওয়ার জন্য গত বছর কানাডার হাই কমিশনারকে তলব করে ভারত।

এ বছর এপ্রিল মাসেও, কানাডার স্যাক্রেমেন্টোয় ইন্দিরা-হত্যা উদযাপিত হতে দেখা গিয়েছিল। একই ভাবে ট্যাবলো নিয়ে বের করা হয়েছিল শোভাযাত্রা। তাতে ইন্দিরার দুই হত্যাকারী সতওয়ন্ত সিংহ এবং বিয়ন্ত সিংহের পাশাপাশি মূর্তি বসানো ছিল তলবিন্দর সিংহ পারমারের। ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন মাঝ আকাশে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে হামলা চালানো হলে, ৩২৯ জন যাত্রী মারা যান। পারমারের তত্ত্বাবধানেই সেই হামলা চালানো হয়। কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের বাড়বাড়ন্তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পারমারের। ১৯৯২ সালে পঞ্জাব পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান পারমার।

(Feed Source: abplive.com)