সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত চাঁদ, ২৪ নয়, দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ঘণ্টা, গবেষণায় খোলসা

সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত চাঁদ, ২৪ নয়, দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ঘণ্টা, গবেষণায় খোলসা

কলকাতা: দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় মেলে। সলেই মতো রোজনামচা সাজিয়ে নিয়েছি আমরা। তবে বরাবর গোটা দিনের দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ছিল না। প্রাগৈতিহাসিক যুগে, দিনের দৈর্ঘ্য মেরেকেটে ১৯ ঘণ্টা ছিল বলে উঠে এল গবেষণায়। কোটি কোটি বছর ধরে এই অবস্থা টিকেছিল বলে মত বিজ্ঞানীদের, যার নেপথ্যে চাঁদের ভূমিকা ছিল বলে মত তাঁদের (Science News)।

‘নেচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে নয়া এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ১২ জুন প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, আজ থেকে ১০০-২০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে গোটা দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ঘণ্টা। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের থেকে  পাঁচ ঘণ্টা কম (Space News)।

চাঁদ পৃথিবীর কত কাছাকাছি রয়েছে, তার উপরই দিনের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে বলে মত গবেষকদের। তাঁদের কথায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে যত সময় এগিয়েছে, ততই পৃথিবী থেকে দূরত্ব বেড়েছে চাঁদের। এর ফলে পৃথিবীর আহ্নিক গতিও শ্লথ হয়েছে ক্রমশ। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদ আসলে পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি কার্যত চুরি করে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রোটেরোজোয়িক অধিযুগের মাঝামাঝি সময়ে চাঁদ পৃথিবী থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বেই নিয়মিত ঘোরাফেরা করত। এর ফলে ১০০-২০০ কোটি বছর দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ঘণ্টা। ওই সময়ে ভূগর্ভস্থিত পাতগুলির কার্যকলাপ, জলবায়ু, জৈবিক বিবর্তন ছিল আপেক্ষিক ভাবে স্থিতিশীল। যে কারণে ওই সময়কালকে ‘বোরিং বিলিয়ন’ বলেও অভিহিত করা হয়।

এই গবেষণার জন্য একটি নতুন ভূতাত্ত্বিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা সাইক্লোস্ট্র্যাটিগ্রাফি নামে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে পাললিক শিলার উপর জমা হওয়া পাথরের তারতম্য বিচার করে শনাক্ত করা হয়  ‘মিলানকোভিচ চক্র’, যার আওতায় পৃথিবীর কক্ষপথ, ঘূর্ণন কী ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটিয়েছে, তা বোঝা সম্ভব হয়।

চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর বুজে জোয়ার-ভাঁটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমুদ্রের জল যখন ফুলে ওঠে, সেই সময় পৃথিবীর ঘূর্ণন শ্লথ হয়। আবার সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ‘সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ারিক টাইড’-কে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে সূর্যের কিরণ ভূপৃষ্ঠের উপর পড়লে পৃথিবীর ঘূর্ণন আবার বাড়ে। এই মুহূর্তে ‘সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ারিক টাইড’-এর চেয়ে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর তার প্রভাব বেশি।

বর্তমানের চেয়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগে চাঁদ এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় সমান ছিল। ফলে দিনের দৈর্ঘ্যের ওঠাপড়া ছিল না। একটানা ১০০-২০০ কোটি বছর তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। একই সঙ্গে ওই সময় দিনের দৈর্ঘ্য যেমন ১৯ ঘণ্টা ছিল, তেমনই অক্সিজেন বৃদ্ধির হারও ছিল তুলনামূলক কম।  তার জেরেই সেই সময় বিবর্তনের গতি শ্লথ ছিল বলে মত গবেষকদের।

(Feed Source: abplive.com)