যুদ্ধের মধ্যেই ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ রাশিয়ায়, মস্কোয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা, কড়া বার্তা পুতিনের

যুদ্ধের মধ্যেই ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ রাশিয়ায়, মস্কোয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা, কড়া বার্তা পুতিনের

মস্কো: যুদ্ধ চলাকালীনই ঘোর সঙ্কট নেমে এল রাশিয়ায়। বহির্শত্রু নয়, দেশের অন্দরেই সশস্ত্র বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিল (Russia Crisis)। পরিস্থিতি এতটই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে, মস্কোর বিরুদ্ধে কার্যত অভ্যুত্থানের ডাক দিল সে দেশের পেশাদার যোদ্ধারা। প্রায় ২৫ হাজার বাহিনী এই মুহূর্তে মস্কোর দিকে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে বা যাঁরা অস্ত্র তুলবেন, তাঁরা দেশের কাছে বিশ্বাসঘাতক বলে গন্য হবেন বলে জানিয়ে দিলেন।

শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পুতিন। তাতে তিনি বলেন, “এটা আমাদের দেশের পিঠে ছুরি মারা। এই মুহূর্তে যা ঘটছে, তা বেইমানি, বিশ্বাসঘাতকতা। অতি উচ্চাকাঙ্খা এবং ব্যক্তস্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে। যে বা যাঁরা দেশের সঙ্গে এই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, সচেতন ভাবেই এই রাস্তা বেছে নিয়েছেন, সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা যাঁদের, সন্ত্রাসবাদীদের মতো ব্ল্যাকমেল করছেন, দেশের আইন এবং নাগরিকদের কাছে তাঁদের কঠোর শাস্তি অনিবার্য।”

এই সঙ্কটের মুহূর্তে রুশ নাগরিকদের একজোট হওয়ার বার্তা দেন পুতিন। বলেন, “এই ধরনের অভ্যন্তরীণ অশান্তি আমাদের রাষ্ট্রীয় এবং জাতিগত পরিচয়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটা সমগ্র রাশিয়া এবং দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত ধাক্কার। এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি আমাদের নাগরিকদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এই সময়ে জাতীয় ঐক্য অবশ্য জরুরি।”

যে কোনও অভ্যন্তরীণ অশান্তি আমাদের রাষ্ট্রীয়তা এবং জাতি হিসেবে আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি রাশিয়া এবং আমাদের জনগণের জন্য একটি আঘাত,” পুতিন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি ভাষণে বলেন, “এই যুদ্ধ, যখন আমাদের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তখন সমস্ত শক্তির ঐক্য এবং ঐক্য প্রয়োজন।

রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনী PMC Wagner (Wagner Group). এটি মূলত একটি বেসরকারি সংস্থা। অর্থের বিনিময়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোদ্ধা সরবরাহ করে থাকে তারা। তবে রুশ আইনকানুন সে ভাবে কার্যকর হয় না এই সংস্থার উপর। ওই PMC Wagner সংস্থাই ক্রেমলিনের সেনাশাসককে উৎখাত করার ডাক দিয়েছে। সংস্থার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এগোচ্ছি। একেবারে শেষ দেখে তবে ছাড়ব। মাঝখানে যা আসবে, সব গুঁড়িয়ে দেব। ”

ইয়েভগেনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার দক্ষিণের রোস্তভে ঢুকে পড়েছে PMC Wagner। রুশ সেনার একটি হেলিকপ্টার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৫ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ক্রেমলিনের দিকে এগোচ্ছেন। তাঁর এই ঘোষণা তীব্র সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে রাশিয়াকে।  বিগত কয়েক মাস ধরেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়িয়েছেন ইয়েভগেনি।শুক্রবার তিনি দাবি করেন, মস্কোর তরফে তাঁর বাহিনীকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। এর প্রত্যাঘাত সইতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনই সশস্ত্র বাহিনীর কম্যান্ডার ইন চিফ। তাই সরাসরি তাঁকে নিশানা করেই PMC Wagner এগোচ্ছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

সাধারণ রুশ নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে বার্তা দিয়েছেন ইয়েভগেনি। গত বছর ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের অন্দরে এমন প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি পুতিন সরকারকে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছে মস্কো। দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে সরকরি দফতরে আঁটোসাটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মস্কোর দক্ষিণের লিপেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্তামোনোভ সকলকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। রোস্তোভে স্থানীদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা FSB ইয়েভগেনির বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, মস্কো থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে,  ভোরোঞ্ঝে শহরের সব সামরিক কেন্দ্রগুলি দখল করে নিয়েছে PMC Wagner সংস্থা। এর আগে, সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা নয় বলে দাবি করলেও, শনিবার ইয়েভগেনি জানিয়েছেন, মস্কো থেকে বর্তমান নেতৃত্বকে উৎখাত করতে যে কোনও মূল্য দিতে রাজি তাঁরা, মৃত্যু বরণ করতেও।

আপাতত মস্কো এবং সংলগ্ন এলাকায় সমস্ত সরকারি ভবনের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা হয়েছে। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একেবারে। একাধিক জায়গায় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। মস্কোর রাস্তয় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক। এমনিতেই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে বিধ্বস্ত রাশিয়া। তার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে। সেই আবহে এমন সঙ্কট তৈরি হওয়ায় রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

যে PMC Wagner সংস্থা এই সঙ্কটের কেন্দ্রে, ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রাইমিয়া যুক্ত হওয়ার সময় আত্মপ্রকাশ করে তারা। আসলে ঠিকে পদ্ধতিতে এই সংস্থা সৈন্য এবং যোদ্ধা সরবরাহ করে। কোবও একটি দেশে এই সংস্থ নথিভুক্ত নয়। কোথা থেকে অর্থসাহায্য পায়, তাও অস্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগের সমর্থকও ইয়েভগেনি। আবার ইউক্রেন যুদ্ধেও তাদের সক্রিয় ভূমিকার কথা সামনে এসেছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার একাধিক দেশেও এই সংস্থার অস্তিত্ব রয়েছে।

(Feed Source: abplive.com)