নেক্সট গেড়ো নাকি ভাল? MBBS পড়ুয়াদের মত কী, কতটা কঠিন হল ডাক্তার হওয়া?

নেক্সট গেড়ো নাকি ভাল? MBBS পড়ুয়াদের মত কী, কতটা কঠিন হল ডাক্তার হওয়া?

মালদহ: ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট বা নেক্সট নিয়ে শিক্ষা জগতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আমজনতার অনেকে বিষয়টি নিয়ে অবগত না থাকলেও চিকিৎসা ব্যবস্থা সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সকলেই এই পরীক্ষা নিয়ে বেশ চিন্তিত। এমনকি এই পরীক্ষা ঘিরে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে চিকিৎসা জগত। কারণ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাব অনুযায়ী, এবার থেকে এমবিবিএস পাশ করলেই কেউ চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের অধিকারী হবেন না। আমরা সকলেই জানি রোগী দেখার জন্য চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। আর সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়ার জন্য এবার থেকে এমবিবিএস পাশের পর ডাক্তারি পড়ুয়াদের ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট বা নেক্সট পরীক্ষা দিতে হবে। এমনটাই পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন। নেক্সটে উত্তীর্ণ হলে তবেই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যাবে। যদিও প্রবল বিতর্কের জেরে প্রথম নেক্সট অর্থাৎ ২০১৯ ব্যাচের এমবিবিএস পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই নীতি রূপায়ণ থেকে সাময়িকভাবে পিছু হটেছে কেন্দ্র। কিন্তু নেক্সট ঘিরে কেন এই বিতর্ক, এতে আছেটা ঠিক কী সেটাই জানার চেষ্টা করল নিউজ ১৮ লোকাল।

ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন মনে করছে, সাড়ে চার বছরের এমবিবিএস পাঠ্যক্রমে ডাক্তারি পড়ুয়ারা সবকিছু সঠিকভাবে শিখল কিনা তা পরীক্ষা করে তবেই চিকিৎসা করার ছাড়পত্র দেওয়া জরুরি। সেই কারণেই নেক্সট। পরিকল্পনা অনুযায়ী ন্যাশনাল এক্সিট এক্সাম পাশ করলে তবেই হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ মিলবে। তারপর ধাপে ধাপে চিকিৎসকের শংসাপত্র, রেজিস্ট্রেশন মিলবে। চলতি বছর থেকেই নেক্সট প্রয়োগ করার কথা ছিল। অর্থাৎ ২০১৯ সালে যারা চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়ুয়া হিসেবে এমবিবিএস পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁরাই এই পরীক্ষার প্রথম ব্যাচ হতেন। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের এই সিদ্ধান্তের জেরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিতর্কের মুখে পড়ে সাময়িকভাবে এই পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

যদিও নেক্সট আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ। সেই তালিকায় নাম আছে মালদহ মেডিকেল কলেজের‌ও। এখানকার অধ্যক্ষ চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, নেক্সট চালু হলে মেডিকেল কলেজগুলিকে কী কী করতে হবে? কোন কোন বিষয়ের উপর পরীক্ষা হবে, কী পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে? ছাত্রছাত্রীদের কোন কোন বিষয়গুলি নিয়ে সচেতন থাকতে হবে এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল। বর্তমানে চিকিৎসক হতে গেলে একজন মেডিকেল পড়ুয়াকে সাড়ে চার বছরের এমবিবিএস কোর্স সম্পূর্ণ করার পর এক বছর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক বা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে হয়। তারপরই মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট ও চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হয়। এই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও শংসাপত্র পেলেই একজন সম্পূর্ণ চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। এটাই ছিল প্রচলিত রীতি। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের পক্ষ থেকে এই নিয়মে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সাড়ে চার বছরের এমবিবিএস কোর্স সম্পূর্ণ করার পর একজন ডাক্তারি পড়ুয়া শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র পাবেন। চিকিৎসকের শংসাপত্র ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেতে হলে দিতে হবে ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট। জাতীয় স্তরে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। মেডিকেল কাউন্সিলর পক্ষ থেকে প্রতিবছর এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে এমবিবিএস সম্পূর্ণ করার নির্দিষ্ট বছরের মধ্যে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। ডাক্তারি পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, এর ফলে বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্র বঞ্চিত হবে। তাছাড়া এক একটি রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ডাক্তারি কোর্সের আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর বেশি জোর দেয়। এক্ষেত্রে নেক্সট চালু হলে দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পড়ুয়াদের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা।

যদিও ন্যাশনাল এক্সিট টেস্টের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বহু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমবিবিএস পড়ুয়াদের একাংশ’ও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। মালদহ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস পড়ুয়া রবিউল মিস্ত্রি বলেন, এই পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতিটি একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছি। এই পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীরা পড়ায় আরও বেশি মনোযোগী হবে। নেক্সট হলে আমাদেরই ভালো হবে।

(Feed Source: news18.com)