দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল দিন চারেক আগে। পৃথিবী থেকে দ্বিতীয় সবচেয়ে দূরবর্তী স্যাটেলাইট ভয়েজার-২ এর সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। আশঙ্কা ছিল স্যাটেলাইটটি ব্যাক আউটের। বিজ্ঞানটিরাও আশা করেননি স্যাটেলাইটটির সঙ্গে যোগাযোগ এত দ্রুত পুনরুদ্ধার করা যাবে। কোনও গ্রহাণুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়েছে ভয়েজার-২, এমন সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সব মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে অবশেষে শোনা গেল হার্টবিট। ভয়েজার-২ কর্তৃপক্ষ জানাল, এখনও প্রাণের স্পন্দন রয়েছে তার মধ্যে। এবার নাসার তরফে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল ‘আর্ত চিৎকার’ সংকেত। এভাবেই স্যাটেলাইটটিকে ট্র্যাক করতে সক্ষম হল নাসা।
নাসার অন্যতম শক্তিশালী এবং ভরসাযোগ্য স্যাটেলাইট মহারথী ৪০টা বছর ধরে পাক খাচ্ছে মহাকাশে। ভয়েজার ২ স্যাটেলাইটের সঙ্গে আচমকাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল নাসার বিজ্ঞানীদের। রীতিমতো উদ্বেগে ছিলেন নাসার মহাকাশবিজ্ঞানীরা। কিন্তু ভয়েজারের হৃদস্পন্দন শোনার পর থেকে ফের আশার বুক বাঁধছেন বিজ্ঞানীরা। এই স্যাটেলাইটের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় নাসার। কোনও জবাবও আসছিল না স্যাটেলাইট থেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, মহাকাশে কোনও গ্রহাণুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্যাটেলাইটটির কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। গ্রহাণুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্যাটেলাইটটির কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, মনে করছিলেন তারা।
ভয়েজার-২ প্রজেক্ট ম্যানেজার সুজান ডড বলেন, ‘নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের সাহায্য নিয়েছি আমরা। একটি বড় রেডিও অ্যান্টেনার সাহায্য পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে সিগন্যাল পাঠিয়ে ভয়েজার ২-এর সঙ্গে সংযোগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। আর আচমকাই ভয়েজার ২-এর (Voyager 2) হৃদস্পন্দন শুনতে পাই আমরা। আমরা বুঝতে পেরেছি স্যাটেলাইটটি এখনও বেঁচে আছে। সঠিকভাবেই কাজ করছে সেটি।’ তিনি আরও বলেন, “পৃথিবী অভিমুখে এই ভয়েজার ২-এর অ্যান্টেনা ফের ঘুরিয়ে আনতে নতুন করে কমান্ড পাঠানোর চেষ্টা চলছে। তবে অ্যান্টেনাকে ফের নিজের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা ক্ষীণ।”
ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ ঘণ্টায় ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি গতিবেগে মহাকাশে ঘুরে চলেছে। যাত্রাপথে আমাদের গ্যালাক্সির পরবর্তী গ্যালাক্সিতে পৌঁছাতে ভয়েজার-১ মহাকাশযানের সময় লাগবে আরও ৪০ হাজার বছর! অন্তহীন মহাশূন্যকে জানার উদ্দেশে চার দশক আগে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল ওই দুই স্যাটেলাইট। ভয়েজার-১ যাত্রা শুরু করেছিল ’৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আর ভয়েজার-২ যাত্রা শুরু করেছিল ঠিক ১৬ দিন আগে, ওই বছরেরই ২০ অগস্ট। বহু অসাধ্য সাধন করেছে স্যাটেলাইটগুলি। ভয়েজার-২ ১৯৮৯ সালেই নেপচুনকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছে আন্তর্নক্ষত্রমণ্ডল বা ইন্টারস্টেলার স্পেসের দিকে। ইন্টারস্টেলার স্পেস বলতে বোঝায় দুটি নক্ষত্রমণ্ডলের মাঝের অংশ। নাসার বিজ্ঞানী আশা করছেন আরও বহু বছর এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলি ছুটে বেড়াবে মহবিশ্ব, নিত্যনতুন তথ্য জানবে নীল গ্রহের মানুষ।
(Feed Source: hindustantimes.com)