দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তার দৃষ্টান্ত হতে পারতেন ব্রাজিলের এক বাসিন্দা। পারতেন, কারণ তিনি আর বেঁচে নেই। বিমান দুর্ঘটনায় ১১ বছরের পুত্র-সহ মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ওই ব্যক্তির ভিডিও। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ১১ বছরের এক বালক অদক্ষ হাতে বিমান ওড়াচ্ছে। পাশে বসে ভিডিও করছেন বাবা, তাঁর হাতে ধরা বিয়ারের বোতল। ভিডিও করতে করতেই চুমুক দিচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, এই ভিডিও দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগের।
জানা গিয়েছে, গত ২৯ জুলাই ব্রাজিলের বাসিন্দা গ্যারন মাইয়া (৪২) এবং তাঁর ছেলে ফ্রান্সিসকো মাইয়া (১১) তাঁদের ব্যক্তিগত টুইন-ইঞ্জিন বিচক্র্যাফ্ট ব্যারন ৫৮-এ চড়েছিলেন। রন্ডোনিয়া এবং মাতো গ্রাসোর মাঝখানে একটি জঙ্গলের মধ্যে ভেঙে পড়ে প্রায় ৯.৯ কোটি টাকার বিমানটি। মৃত্যু হয় দু’জনেরই।
শুধু তাই নয়, স্বামী, পুত্রের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েন গ্যারনের স্ত্রী, মিসেস আনা প্রিডোনিক। ১ অগাস্ট তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরই আনা আত্মহত্যা করেন। তারপরেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে মাঝ আকাশে মদ্যপান করার ভিডিও।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, গ্যারন বিয়ার পান করছেন। সেই সময় তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ব্যক্তিগত বিমানের নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে নিজের হাতে। পাশে বসে ভিডিও করছেন গ্যারন, দিচ্ছেন বিমান ওড়ানোর নির্দেশনাও।
তাঁর এই নির্দেশনা থেকেই বোঝা যায় ছেলেটি প্রথমবার বিমান ওড়ানোর চেষ্টা করছিল। সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নোভা কনকুইস্তার রন্ডোনিয়া শহরের গ্যারনের একটি পারিবারিক খামার রয়েছে। সেখানে থেকে বিমান নিয়ে উড়েছিলেন তাঁরা। মাঝপথে ভিলহেনা বিমানবন্দরে জ্বালানির জন্য নেমেছিলেন। গ্যারন তাঁর ছেলেকে মাতো গ্রোসো ডো সুলের ক্যাম্পো গ্রান্ডে রেখে আসতে যাচ্ছিলেন। ওইখানেই মায়ের সঙ্গে থেকে লেখাপড়া করত ফ্রান্সিসকো।
কিন্তু মায়ের কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারেননি গ্যারন। বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে যাত্রা শুরু করলেও মাত্র আট মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায় বিমানটি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধারকারী দল ৩০ জুলাই মৃতদেহ উদ্ধার করে জঙ্গল থেকে৷ রিসার্চ সেন্টার ফর দ্য প্রিভেনশন অফ অ্যারোনটিক্যাল অ্যাকসিডেন্টস-এর প্রতিনিধি দল দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে এখনও।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্যারনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলেই অকালে ঝরে গেল তিনটি প্রাণ। তবে এটা এখনও নিশ্চিত নয়, এই ভিডিও সে দিন বিকেলেরই কি না!