ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা: বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে দলের কর্মী, সমর্থক এবং নেতাদের কার্যত পরামর্শ দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারীর এই পরামর্শকে নিয়েই দলের অন্দরে পড়ে গিয়েছে শোরগোল।
কী সেই পরামর্শ ? প্রকাশ্য সভায় এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘নিজের এলাকার সংগঠন শক্তিশালী করুন। আমি একজন পঞ্চায়েত এলাকার ভোটার। নন্দীগ্রামের নন্দনায়কবাড় বুথে বিজেপির প্রার্থী দিয়েছিলাম। তিনি জিতেছেন। নন্দীগ্রামের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি-তে বিজেপির প্রধান। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৮৪টি বিজেপির প্রধান হয়েছে। নিজের এলাকার কর্তৃত্ব নিজের হাতে রেখে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। শুধু মঞ্চে ভাষণ দিয়ে বড় বড় কথা বললে হবে না। নিজের বুথ জিততে হবে। নিজের এলাকা জিততে হবে। নিজের বিধানসভা এলাকাতেও জিততে হবে। তারপর ভাষণ দিতে হবে। চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম।’’
শুভেন্দু যখন মঞ্চে এই বক্তব্য রাখেন তখন সেই মঞ্চেই হাজির ছিলেন জে পি নাড্ডা, সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ-সহ বঙ্গ বিজেপির নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রাও। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় জেলায় বিজেপির আশানুরূপ ফল না হওয়ার নেপথ্যে শুধুমাত্র শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসের অভিযোগই নয়, অন্যতম কারণ হিসেবে নড়বড়ে সংগঠনকেই দায়ী করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। তার আগে এবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে ভাষণ না দিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করার পরামর্শ রাজনৈতিকভাবে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহল মহল।
শনিবার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বঙ্গ বিজেপি আয়োজিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সংকল্প সভায় আয়োজন করা হয়েছিল। বিজেপির কর্মী সমর্থক নেতৃত্ব ছাড়াও পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী ও ভোটে অশান্তির ঘটনায় ‘আক্রান্ত’ ও ‘ঘরছাড়াদের’ উপস্থিতিতে এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। এই সভাতেই রাজ্য বিজেপির তরফে সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পর বক্তব্য পেশ করেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রশ্নও করেন, ‘‘আপনারা সব আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন?’’ তারপরেই দলের একাংশকে একপ্রকার নিশানা করে শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘ ভাষণ নয়, আগে সংগঠন মজবুত করুন, তারপর ভাষণ দেবেন।’’
এদিন জে পি নাড্ডার উপস্থিতিতে সন্ধেয় কলকাতার নিউ টাউনের হোটেলে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির সাংগঠনিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর গরহাজির থাকা নিয়েও জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সভার প্রধান বক্তা হিসেবে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশাপাশি তীব্র ভাষায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেও আক্রমণ শানান।