বোধন হয় ১৫ দিন আগেই, ছাগবলি দিয়ে শুরু পুজো, কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য অমলিন

বোধন হয় ১৫ দিন আগেই, ছাগবলি দিয়ে শুরু পুজো, কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য অমলিন
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : পুজোর ( Durga Puja 2023 ) ১৫ দিন আগে কৃষ্ণনবমী-তে বাদ্যযন্ত্র সহকারে ঘটে জল ভরে আনার পর ছাগবলি’র মাধ্যমে শুরু হয় দেবীর বোধন,আজও ঐতিহ্য মেনে নিষ্ঠা ভরে কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে পূজিত হন দেবী। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজো এলাকায়  সাত ভাইয়ের পুজো নামেই খ্যাত।

বর্ধমান ( Burdwan ) শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে কালিকাপুর রাজবাড়ি। দুর্গাপুর থেকে কালিকাপুর রাজবাড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। ৩৫০ বছরের পুরনো রাজবাড়ির প্রতিটি ইট-পাথরে কান পাতলে শোনা যায় পুরনো দিনের ইতিহাস।

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কালিকাপুর রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস সুপ্রাচীন। ৪০০ বছর আগে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন পরমানন্দ রায়। রাজার প্রিয়পাত্র হওয়ার সুবাদে তাঁর হাতে আসে কাঁকসার একটি বিরাট অংশের জমিদারিত্ব। ঘনজঙ্গল কেটে তৈরি হয় বসতবাড়ি। তৈরি হয় পুকুর, বাগান,দুর্গামন্দির। পরমানন্দ রায় তাঁর সাত পুত্রের জন্য তৈরি করেন সাতমহলা প্রাসাদ, যা কালিকাপুর রাজবাড়ি বলে খ্যাত। এই সাতভাই একসঙ্গে পুজো করতেন বলে এই পুজো সাতভাইয়ের পুজো নামেই এলাকায় বেশি পরিচিত।

তিন দিকে ঘেরা একটি আটচালা মণ্ডপ। অতীতের জৌলুসে কিছুটা ধুলো জমলেও রীতিনীতি রয়ে গিয়েছে একই রকম।পুজোর ১৫ দিন আগে কৃষ্ণনবমী তিথিতে ছাগবলি  দিয়ে দেবীর বোধন হয়। এছাড়াও ,সপ্তমী ও অষ্টমী ও নবমীতে ছাগ বলি হয়। অনেক আগে নবমীর দিন মহিষ বলি হত। বর্তমানে সেই রীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বোধনে দোলা করে পুকুর থেকে ঘটে করে জল আনা হয়।মন্দিরে নিত্য সেবা হয় মায়ের।পুজোর সময় আগে ভিয়েন বসত।দেশ-বিদেশের অতিথি সহ বর্ধমান রাজ পরিবারের সদস্যরাও আসতেন পুজোতে।পুজোর ক’দিন পালাগান ও যাত্রাপালার আসরে সরগরম থাকত গোটা এলাকা। গোটা গ্রামের মানুষের আনাগোনা ছিল জমিদারবাড়িতে। সকলের জন্য থাকতো অন্নকূট-এর আয়োজন।

এখন সেই আয়োজনের জাঁকজমক কমলেও নিষ্ঠায় কোনও ঘাটতি পড়েনি। পুজোর সময় সব বংশধরই একত্রিত হন জমিদারবাড়ি চত্বরে। এখনও পুজোর ক’দিন মায়ের দালানে ভিড় জমান গোটা গ্রামের মানুষ। ইতিহাসের বহু স্মৃতি আঁকড়ে আজও দাড়িয়ে আছে কালিকাপুর রাজবাড়ি। এ বাড়ি আজও যেনো চুপিচুপি বলে চলে তার অতীত ইতিহাস।

জঙ্গলে ঘেরা কালিকাপুর রাজবাড়ির আকর্ষণে এ বাড়িতে ছবি শুটিংও হয়েছে।  একাধিক সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে ।গয়নার বাক্স, গুপ্তধন রহস্য ইত্যাদি ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। এছাড়াও মৃণাল সেন পরিচালিত নাসিরুদ্দিন শাহ ও শাবানা আজমি অভিনীত ‘খন্ধর’ সিনেমার শুটিং হয়েছে কালিকাপুরের এই রাজবাড়িতেই।

(Feed Source: abplive.com)